শ্যামসুন্দর ঘোষ,কালনা(পূর্ব বর্ধমান),২৩ জুন : ফেসবুক লাইভে কুরুচিকর মন্তব্য করার অভিযোগে দলীয় নেতার বিরুদ্ধে আদালতে মানহানীর মামলা দায়ের করলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী উত্তরের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় । আজ শুক্রবার তিনি ফেসবুকের কিছু তথ্য প্রমান সহ পূর্বস্থলী গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পঙ্কজ গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে কালনা মহকুমা আদালতে মানহানীর মামলা দায়ের করেছেন । পালটা মামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পঙ্কজবাবুও । এদিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঠিক মুখেই তৃণমূলের বিধায়কের সাথে তার দলেরই পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের এই প্রকার লড়াইয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে এলাকায় ।
পূর্বস্থলী উত্তরের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন,’বিগত ১৭ দিন ধরে ফেসবুক লাইভে আমার বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করে চলেছেন পূর্বস্থলী গ্রামপঞ্চায়েতের উপপ্রধান পঙ্কজ গাঙ্গুলী । যা যা বলেছে আমি প্রমানসহ আদালতে জমা করেছি । সবারই সম্মান আছে,সম্মান নষ্ট করার অধিকার কারোর নেই । আমি এসডিও, বিডিও সাহেবকে যা তা কথা বলতে পারি না । আমি একজন পঞ্চায়েত প্রধানকে যা তা কথা বলতে পারি না । বিষয়টি আমি জেলা নেতৃত্বকে বলেছিলাম । জেলা নেতৃত্ব তাকে বারনও করেছিল । তা সত্ত্বেও একই কাজ করে যাচ্ছেন ।’
বিধায়ক বলেন,’শুধু আমায় বলেনি, ব্লকের সভাপতির বিরুদ্ধেও বলেছে । আমাকে বলেছে ‘গোদা বাঁদর’, আমার নাকি চরিত্র খারাপ,ইত্যাদি ইত্যাদি । আমার জামাই কন্ট্রাক্টরি করে । আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে কৃষ্ণনগরে ।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাধ্য হয়ে আমি মামলা করেছি । কেন করলাম ? কারন সহ্যের একটা সীমা আছে । সে ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে । আমার চরিত্র নিয়ে যদি কেউ কিছু বলে তাহলে আমার গায়ে লাগবেই । আমি আমার দলের কোনো নেতার বিরুদ্ধে যা খুশি মন্তব্য করতে পারিনা । এই জ্ঞানটা থাকা দরকার ।’
শাসকদলের দুই নেতার বক্তব্য শুনুন 👇
অন্যদিকে দলীয় বিধায়কের বিরুদ্ধে কার্যত ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন পূর্বস্থলী গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পঙ্কজ গাঙ্গুলী । তিনি বলেন,’আমার বিরুদ্ধে উনি যা অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা । এখন বাজারে একটা কথা বেড়িয়েছে, সেটা যদি কেউ নিজের গায়ে লাগিয়ে নেয় তাহলে হয়তো তিনি সেই রকমই, তাই গায়ে লেগেছে । মানসম্মান প্রত্যেকেরই আছে । সে মানুষকে অপমান করতে দ্বিধা করেনা। তাই অন্যজন যখন বলে তখন তার গায়ে লাগবে কেন?’
তিনি বলেন,’ওনার বিরুদ্ধে অনেক প্রমান আমার কাছে আছে । যখন বিধানসভার টিকিট পাওয়া নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল তখন শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা,সুনীল মণ্ডলের বাড়িতে যাওয়া প্রভৃতির প্রমান আমার কাছে আছে । বিধায়ক বলে সাত খুন মাপ,আর আমরা পঞ্চায়েতের সদস্য বলে আমাদের সবেতেই দোষ, তা তো হতে পারে না । এখন দল যদি এক তরফা সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে কিছু বলার নেই । আমিও বিষয়গুলি নিয়ে দলের কাছে বহুবার জানিয়েছি । আজ পর্যন্ত তার কোনো সুরাহা হয়নি ।’
তিনি বিধায়ককে নিশানা করে বলেন,’নিজের বুথে নিজেই হেরেছে । এতই যদি তার ক্যারিশমাটিক ইমেজ থাকত তাহলে নিজের বুথে অন্তত জিততো । আমার বুথেও ৬ ভোটে হেরেছে ঠিকই, তবে সার্বিক ভাবে অঞ্চল থেকে ২,৭০০ ভোটে লিড দিয়েছি । তার পরেও যদি শুনতে হয় যে আমি দল বিরোধী কাজ করেছি, তাহলে তার বিষয়ে তো আমাদের মুখ খুলতেই হবে ।’
তিনি বিধায়ককের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ তুলে বলেন,’উনি ৪২ লক্ষ টাকার ব্যাঙ্ক ঋণের গল্প শুনিয়েছেন । ব্যাঙ্ক লোন তাকেই দেয় যার কোটি টাকা আছে । উনিও তো ১০ বছর আগে আম বাগানের মুনিষ ছিলেন । নির্বাচনী হলফনামা অনুয়ায়ী ১০ বছর আগে ওনার সর্বসাকুল্যে ২৫ লক্ষ টাকার সম্পত্তি ছিল । আর ২০২১ সালের হলফনামায় ১ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকার সম্পত্তি । কোন ম্যাজিকে এত সম্পত্তি হল ? উনি এবারে সম্পত্তি লুকিয়ে হলফনামা পেশ করেছেন । সেই হলফনামার যদি তদন্ত হয় তাহলে তার বিধায়কের পদই থাকবে না ।’ তিনি বলেন,’৪০ লক্ষ টাকা ঋণ দেখাচ্ছেন । তিন বারের বিধায়ক থাকাকালীন ৪ টে গাড়ি পালটানো হয়ে গেল । আমিও ২১ লক্ষ টাকার ঋণ নিয়েছি এবং পরিশোধ করছি । ওই লোন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার বাড়ি হয় না । লোকের বিল্ডিং দেখলে গায়ে লাগে,আর নিজে যে বিল্ডিং হাঁকাচ্ছেন ? ২০১১ সালে রাজমিস্ত্রী ঢুকেছে, এখনো রাজমিস্ত্রীর কাজ শেষ হল না ।’
বিধায়কের মামলা করা নিয়ে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘আদালত সকলের জন্য খোলা । আদালতেই দেখা হবে ।’।