এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,২৪ জুন : ভাইপোর জিম্মায় বাড়িঘর জমিজমা ছেড়ে পরিবার নিয়ে ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে চলে গিয়েছিলেন পেশায় শ্রমিক কাকা । কাজে যোগ দেওয়ার মাস খানেক পরেই দ্বিতীয় দফার করোনা ঢেউ আছড়ে পড়ে । তাই অগত্যা বাড়ি ফিরে আসতে হয়েছিল । কিন্তু গ্রামে ফিরতেই কার্যত তাঁর চোখ কপালে উঠে যায় । কারন ততদিনে বসবাসের কুঁড়েঘরটি ভেঙে ওই জায়গায় নিজের জন্য একখানা দালানঘর তৈরি করে নিয়েছে তৃণমূল নেতা ভাইপো । যেটুকু অল্পস্বল্প জমি ছিল সেটাও বেহাত হয়ে গেছে । শেষ পর্যন্ত নিরাশ্রয় কাকা ও তাঁর পরিবারের অস্থায়ী বাসস্থান হয়ে উঠেছে গ্রামের প্রাথমিক স্কুল । ঘটনাটি মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরের মহেন্দ্রপুর গ্রাম-পঞ্চায়েত এলাকার আলিনগর গ্রামের । সব কিছু হারিয়ে স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে কার্যত অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন রবিউল শেখ নামে ওই ব্যক্তি ।
জানা গেছে,আলিনগর গ্রামের বাসিন্দা রবিউল শেখের বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী,৪ ও ৫ বছরের দুই মেয়ে ও তিন বছরের একটি ছেলে । গ্রামে নিজের জায়গার উপর একটি ছোট মাটির বাড়িতে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন । রবিউল ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতেন । কিন্তু প্রথম দফার লক ডাউনের সময় সেই কাজ চলে যায় । তারপর আস্তে আস্তে পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতেই দিল্লিতে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ জুটিয়ে ফেলেন । এরপর সেখানে পরিবার নিয়ে চলে যান রবিউল । তবে যাবার আগে বসবাসের বাড়ি ও যেটুকু জমিজমা রয়েছে তার দায়িত্ব ভাইপো আলাউদ্দিন সাবির ওরফে সাবরুল ও ভাই সফিজুলকে দিয়ে যান ।
রবিউল শেখ বলেন, ‘দিল্লিতে মাস খানেক কাজ করার পর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয় । সেই কারনে পরিবার নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি । কিন্তু গ্রামে এসে দেখি আমার মাটির বাড়িটি ভেঙে সেই জায়গায় পাকা বাড়ি তৈরি করে নিয়েছে ভাইপো । জমিজমারও দখল ছাড়তে চাইছে এখন । এনিয়ে ভাইপো বলতে গেলে বলে আমার বোন নাকি বাড়িটা বিক্রি করে দিয়েছে । তার বদলে নাকি আমাকে একটা জমি ছেড়ে দিয়েছে । যে জমিটার কথা ভাইপো বলছে আসলে সেটা একটা জলা জমি । সেখানে ঘর তৈরি করা সম্ভব নয় ।’ তিনি বলেন, ‘এই অন্যায় মানতে না পেরে আমি পঞ্চায়েত প্রধান, বিধায়ক সকলের কাছে ছুটে গেছি । কিন্তু আমার ভাইপো তৃণমূল করায় কেউ কোনো ব্যবস্থা নিতে চাইছে না । এমনকি ভাইপোর ভয়ে কেউ আমাকে আশ্রয় তো দুর, কোনও প্রকার সাহায্যই করতে চাইছে না । টানা তিন দিন,তিন রাত খোলা আকাশের নিচে পরিবার নিয়ে কাটাতে হয়েছে । শেষে প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের দুর্দশা দেখে থাকার জন্য একটা ঘর ছেড়ে দিয়েছে । এই অবস্থায় পরিবারের খোরাক জোটানোর জন্য ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া আমার সামনে আর কোনও বিকল্প রাস্তা নেই ।’
অন্যদিকে এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন রবিউলের ভাইপো আলাউদ্দিন সাবির । তাঁর কথায়, ‘আমি কেন আমার কাকার জায়গা জোর করে দখল করব ? ওকে জায়গার বদলে জায়গা দেওয়া হয়েছে । এখন সেখানে ঘর তৈরি করতে না পারলে তার দায় আমার নয় । তবু আমাকে বললে আমি ঘর করে দেওয়ার চেষ্টা করব । আর আমি তৃণমূল করি বলে এর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই । দলকে এই ঘটনায় জড়িয়ে লাভ নেই।’
যদিও এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে তরজা শুরু হয়ে গেছে । এই বিষয়ে বিজেপির মালদা জেলা সম্পাদক কিষান কেডিয়া বলেন, ‘তৃণমূল কেমন দল মানুষ এখন বুঝতে পারছে । যারা নিজের আত্মীয়র সঙ্গে অবিচার করে তারা আর মানুষের সঙ্গে কী সুবিচার করবে? আশাকরি মানুষ পরবর্তীতে এর জবাব দেবে।’ অন্যদিকে মালদা জেলা তৃণমূলের সাধারন সম্পাদক জম্মু রহমান বলেন, ‘আমরা গ্রামে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখব । দু’পক্ষ ও পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে একটা সমাধান সুত্র বের করার চেষ্টা করব । কোনও অন্যায় হলে দল প্রশ্রয় দেবে না ।’।