এইদিন ওয়েবডেস্ক,উত্তর ২৪ পরগণা,০৭ জানুয়ারী : উত্তর ২৪ পরগণা জেলার সন্দেশখালি থানার সরবেড়িয়া গ্রামে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের(ইডি) আধিকারিকরা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ড চলছে ‘হ্যাশট্যাগ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ । আর আলোচনায় উঠে আসছে যার নাম, তিনি হলেন মমতা ব্যানার্জির স্নেহধন্য ‘বালু’ ওরফে রাজ্যের মন্ত্রী জেলবন্দি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ‘ঘনিষ্ঠ’ তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ । রাজ্যে বামফ্রন্টের জমানায় বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে শাহজাহান শেখ স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন বলে অভিযোগ । উত্তর ২৪ পরগনায় তৎকালীন সিপিএমের নেতা মজিদ মাস্টার ও বাবু মাস্টারদের কল্যানে জুটে যায় ভোটার কার্ড । তারপরে শাহজাহান শেখের ‘ধনকুবের’ হওয়ার পিছনে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বড় ভূমিকা আছে বলে মনে করা হচ্ছে ।
শাহজাহান শেখকে নিয়ে এই বিতর্কের মাঝেই তার বিরুদ্ধে একটা চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির মুখপাত্র ডঃ অর্চনা মজুমদার । তাঁর অভিযোগ যে হিন্দুদের কাছে ১৩৯ একর জমি কেড়ে নিয়ে রোহিঙ্গা কলোনি ও তিনটি ট্রাস্ট গড়েছেন সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ । একটি বৈদ্যুতিক চ্যানেলের বিতর্ক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বসিরহাটের বিজেপির দায়িত্বে আছি । সন্দেশখালিতে কাজ করি । শেখ শাজাহান সম্বন্ধে শুভেন্দুদা কি বলছেন…. আমি যেটা দেখেছি, তিনি(শাজাহান) ২০২১ সালের পরে অবিচারে হিন্দুদের সম্পত্তি ১ টাকা দরে জোর করে গান পয়েন্টে পাওয়ার অফ এটর্নি করে নিয়েছেন । তিনটি ট্রাস্ট- সুমাইয়া আবেদা ট্রাস্ট,হাবু আবু সিদ্দিকি ট্রাস্ট এবং বাসন্তী এডুকেশনাল ট্রাস্ট ও রোহিঙ্গা কলোনি গড়েছেন প্রায় ১৩৯ একর জায়গার উপর । যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকার উপরে ।’
তাঁর অভিযোগ,’ওই জমিগুলি কোনো মুল্য না দিয়েই গায়ের জোরে তিনি দখল করেছেন । বাকি কথা আর বললাম না । এখন এই লোকটার বাড়িতে ইডি অভিযানে গেলে সেটা অন্যায়? মানুষ বলবে ।’ তিনি বলেন,’হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করে রোহিঙ্গা কলোনি গড়ে শেখ শাজাহান রোহিঙ্গা পুষে রেখেছেন । একশ দিনের কাজ রোহিঙ্গাদের দিয়ে করান । সেখানে তার অসংখ্য ফিসারি আর অবৈধ ইঁট ভাটা করেছেন । ওখানে কিছুই আর অবশেষ নেই । সুন্দরবনের সব কাঠ পাচার হয়ে গেছে ।’
রেশন দুর্নীতি মামলায় শুক্রবার সন্দেশখালি থানার সরবেড়িয়া গ্রামে শাহজাহান শেখের বাড়িতে গেলে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের ৫ সদস্যের তদন্তকারী দলের উপর ৮০০ থেকে ১০০০ জন রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু হামলা চালায় বলে অভিযোগ । তিনজন আধিকারিক গুরুতর জখম হন । তাদের কলকাতায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় । এই ঘটনায় উত্তর ২৪ পরগণা জেলা পুলিশ ও স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ডঃ অর্চনা মজুমদার । তাঁর অভিযোগ, ‘তৃণমূলের অঞ্চল প্রধান জিয়াউদ্দিন গাজি ইডির আধিকারিকদের তাড়া করছিল । তাকে ইডি গ্রেফতার করে রাজবাড়ীতে রেখেছিল । সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলের বিধায়ক সুকুমার মাহাতো গাড়ি নিয়ে আসেন, পুলিশের এসডিপিও ও ওসির সঙ্গে কথা বলেন এবং জিয়াউদ্দিন গাজিকে ছেড়ে দেওয়া হয় । এরপর সুকুমার মাহাতো তাকে নিজের গাড়িতে নিয়ে চলে যায় ।’ তিনি জানান, জিয়াউদ্দিন গাজির এক কথায় তিন হাজার রোহিঙ্গা জড়ো হয়েছিল সেদিন ।
উল্লেখ্য, সরবেড়িয়া গ্রামে আকুঞ্জিপাড়া মোড়ে মূল সড়কের কিছুটা পাশেই শাহজাহান শেখ ও তার দুই ভাইয়ের তিনটি প্রাসাদপম বাড়ি রয়েছে । পাশাপাশি রয়েছে তাদের বাবা-মায়ের পৃথক বাড়ি । বাড়িগুলি বিভিন্ন ফলফুলের গাছের বাগান দিয়ে সুসজ্জিত । শাহজাহানের বাড়ির সামনেই রয়েছে একটি গ্যারেজ । গ্যারেজের ছাউনিতে দেওয়া আছে আমফান ঘুর্ণিঝড়ে দুর্গতদের বিতরণের জন্য কেন্দ্র সরকারের ছাপ দেওয়া ত্রিপল । কোটি কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মালিক সন্দেশখালি ১-ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা উত্তর ২৪ পরগণা জেলা পরিষদের মত্স্য কর্মাধ্যক্ষ শাহজাহান শেখের এই বিপুল সম্পত্তি বেআইনি ব্যাবসা ও রেশন দুর্নীতির টাকা থেকেই, বলে অভিযোগ উঠছে । ফলে শাহজাহান শেখের দিকে নজর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির ।
যদিও শুক্রবার সকালে ইডির উপর হামলার পর পালিয়ে বেড়াচ্ছেন শাহজাহান । মিডিয়া রিপোর্টে অনুযায়ী,তিনি বাংলাদেশে পালানোরও চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের জন্য সীমান্ত বন্ধ থাকায় তাকে ফিরে আসতে হয় । এখন শাহজাহান শেখকে গ্রেফতারির বিষয়ে রাজ্য পুলিশের মধ্যে কোনো আগ্রহই দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে ।।