এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৯ জানুয়ারী : গত শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগণার সন্দেশখালিতে যেভাবে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট(ইডি)-এর আধিকারিকদের উপর তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের ‘রোহিঙ্গা বাহিনী’ হামলা চালিয়েছিল তা আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়,বরঞ্চ ওই হামলা পূর্ব পরিকল্পিত বলেই মনে করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল । ঘটনার পর থেকেই চম্পট দিয়েছে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা । বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্যে অভিযোগ তুলেছেন, শাহজাহানকে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করছে তার দলেই নেতারা ।
২০১৯ সালের ৬ জুন সন্দেশখালির বাসিন্দা প্রদীপ মণ্ডল, দেবদাস মণ্ডল এবং সুকান্ত মণ্ডলকে হত্যার ঘটনায় সোমবার নিহতদের পরিবারের দুই সদস্যা মণ্ডল এবং সুপ্রিয়া মণ্ডলকে নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে হাজির হয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি জানান, ওই তিন খুনের ঘটনার মূল আসামি শাহজাহান । অথচ সিআইডি তদন্ত করে চার্জশিট থেকে তাঁর নাম বাদ দিয়ে দিয়েছিল । ২০২২ সালের পৃথক একটি খুনের ঘটনাতেও একইভাবে শাহজাহানকে অব্যাহতি দিতে পুলিশ ও রাজ্য গোয়েন্দা দপ্তর সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল বলে অভিযোগ । তাই শাহজাহানে বিরুদ্ধে মামলার সাক্ষী হিসাবেই ওই দুই মহিলাকে নিয়ে আদালতে যেতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান তিনি ।
সন্দেশখালির তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা শাহজাহান শেখের প্রতি রাজ্য পুলিশ ও গোয়েন্দা দপ্তরের এই প্রকার ‘নরম’ মনোভাব দেখে প্রশ্ন তুলেছে খোদ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট । উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি থানার সরবেড়িয়া গ্রামে আক্রান্ত হওয়ার পর ইডি স্পষ্ট অভিযোগ তুলেছিল যে ৮০০ থেকে ১,০০০ জনের ভিড় হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের উপর হামলা চালিয়েছিল । ইডির অভিযোগ যে হামলাকারীদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হলেও তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শেখ শাহাজাহানের বিরুদ্ধে লঘু ধারায় মামলা দিয়েছে পুলিশ । একটি বিবৃতি প্রকাশ করে পুলিশের এই প্রকার ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছে ইডি ।
এদিকে ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেছে । কিন্তু এখনও ধরা পড়েনি তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা শেখ শাহজাহান । ফেরার হওয়ার পরে দলীয় নেতাদের আশ্বস্ত করে শাহজাহান একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করলেও রাজ্য পুলিশ তার অবস্থান এখনো কেন খুঁজে পেল না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । ইতিমধ্যেই রাজ্যপাল রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন যে অভিযুক্ত শাহাজাহান শেখ বাংলাদেশে পালাতে পারে, তাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করার জন্যেও নির্দেশ দেন তিনি । কিন্তু এখনো পর্যন্ত শাহাজাহানকে গ্রেফতারির বিষয়ে রাজ্য পুলিশের মধ্যে তেমন কোনো সদর্থক ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে ।
এদিকে সোমবার রাতেই কলকাতায় এসেছেন ইডির ডিরেক্টর রাহুল নবীন । সন্দেশখালিতে হামলা ও তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতারির বিষয়ে তিনি স্পেশাল ডিরেক্টর সুভাষ আগরওয়াল, অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর বিনোদ শর্মা, সিআইএসএফ আইজি, সিআরপিএফ আইজি বীরেন্দ্র কুমার শর্মা, প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর, আয়কর দপ্তর পঙ্কজ কুমার এবং রেশন দুর্নীতির তদন্তকারী আধিকারিকদের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার দুপুরে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন । তবে ইডির তরফে এই বৈঠকের বিষয়ে এখনো কোনো অফিসিয়াল বিবৃতি দেওয়া হয়নি ।।