এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,২৩ নভেম্বর : যাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা,সেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মালদা জেলার রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল প্রধান লাভলি খাতুনের বিরুদ্ধে উঠল বুথ লেভেল অফিসারকে(বিএলও) চাপ দিয়ে এসআইআর-এর গননা ফর্ম(এ্যনুমারেশন ফর্ম) পূরণের অভিযোগ । ইতিমধ্যেই হরিশ্চন্দ্রপুরের রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের লাভলি খাতুনের এ্যনুমারেশন ফর্ম ৫৩ নম্বর বুথে আপলোড এবং ডিজিটাইজেশন করা হয়েছে। আর ওই বুথের বিএলও হলেন লাভলি খাতুনের ভাসুর মুজিবর রহমান । খোদ বিএলও-ই নাকি তার ভ্রাতৃবধূর বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে এই অভিযোগ জানিয়েছে বলে জানা গেছে ।
প্রসঙ্গত,লাভলি খাতুনকে পঞ্চায়েত ভোটে প্রথম টিকিট দিয়েছিল কংগ্রেস । ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেসের “হাত” চিহ্নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেন লাভলি খাতুন। পরে তিনি তৃণমূলে যোগদান করেন । আর তৃণমূলে যোগদান করতেই মিলে যায় প্রধানের পদ । প্রধান পদটি ছিল ওবিসি মহিলা সংরক্ষিত । কিন্তু সেই ভোটে লাভলি খাতুনের প্রতিদ্বন্দ্বী রাহেনা সুলতানা পরাজিত হয়ে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেন। লাভলি খাতুন একজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হয়েও কিভাবে ভোটে লড়তে পারে এই প্রশ্ন তুলে রাহেনা সুলতানাসহ চারজন প্রশাসনের দ্বারস্থ হন । তারা কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও করেন ৷ তাদের অভিযোগ যে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে ঢুকেছেন লাভলি খাতুন এবং একাধিক জাল শংসাপত্রের ভিত্তিতে ভারতীয় নাগরিক সেজে ভোটে দাঁড়িয়ে প্রধান হয়ে গেছেন ।
তাদের অভিযোগ,লাভলি খাতুনের আসল বাড়ি বাংলাদেশে । তার প্রকৃরলত নাম ‘নাসিয়া শেখ’। পাসপোর্ট ছাড়াই অবৈধভাবে তিনি ভারতে ঢুকে বিয়ে করে স্থায়ীভাবে ঘাঁটি গেড়েছেন । বাংলাদেশী পরিচয় লুকোতে নিজের সমস্ত পূর্ব পরিচয় নষ্ট করে ফেলেছেন লাভলি । বাবার নামও বদলে ফেলেন তিনি। এই ভুয়া পরিচয় পত্রের ভিত্তিতে ২০১৫ সালে ভারতে তার ভোটার কার্ডও ইস্যু হয়ে গেছে । ২০১৮ সালে ইস্যু হয় তার ভুয়ো জন্ম শংসাপত্র । সেই নথিতে নাসিয়া শেখ তার বাবা বানিয়ে ফেলেন জনৈক শেখ মুস্তাফা নামে এক ব্যক্তিকে । কিন্তু তাদের অভিযোগ যে লাভলির বাবার নাম শেখ মুস্তাফা নয়,তার বাবার আসল নাম জামিল বিশ্বাস। এমনকী ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রারেও শেখ মুস্তাফার পরিবারে লাভলির কোনও অস্তিত্ব নেই। শেখ মুস্তাফাকে ‘মিথ্যা’ বাবা সাজিয়ে সরকারি নথিপত্র তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ তাদের ।
এনিয়ে বছর খানেক ধরে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা চলে। মুস্তাফাকে হাইকোর্টে তলবও করা হয়। কিন্তু বারবার ডাকা সত্ত্বেও তিনি হাজিরা দেননি। শেষ পর্যন্ত বিষয়টির নিষ্পত্তি করার জন্য চাঁচোলের তৎকালীন মহকুমা শাসক শৌভিক মুখার্জিকে নির্দেশ দেয় আদালত । আদালতে নির্দেশ পেতেই ভুয়ো ওবিসি শংসাপত্রের বিষয়ে লাভলি খাতুনকে শোকজ করেন মহকুমা শাসক । কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেও লাভলি খাতুনের কাছ থেকে কোনো জবাব না মেলায় লাভলি খাতুনের পঞ্চায়েতের সদস্যপদ খারিজের নির্দেশ দেন তিনি ।
এদিকে এসআইআর-এর গননা ফর্ম জোর করে পূরণ করার অভিযোগের পর এটা প্রমানিত যে লাভলি খাতুন এখনো তৃণমূল কংগ্রেসে সক্রিয় আছেন । ফলে ফলের শাসক দলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের বাঁচানোর যে অভিযোগ বিজেপি তুলছে তা লাভলি খাতুনের ঘটনাতেই প্রমাণিত বলে মনে করছেন অনেকে । তাদের দাবি যে ওই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে অবিলম্বে তার নিজের দেশে ফেরত পাঠানো হোক ।।

