এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),২৩ জুলাই : চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থানার রাজুয়া গ্রামে বোমা বাঁধতে গিয়ে প্রবল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে । বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে । যে ঘরে বসে বোমা বাঁধা হচ্ছিল সেই ঘরটি ধূলিস্যাৎ হয়ে যায় । মারা যায় বীরভূমের এক দুষ্কৃতী বরকত শেখ (২৮) । গুরুতর আহত হয় ঘটনার মাস্টারমাইন্ড রাজুয়া গ্রামের বাসিন্দা শেখ সেখ তুফান চৌধুরী ছাড়াও ইব্রাহিম সেখ ও সফিক মণ্ডল নামে আরও ২ দুষ্কৃতী । একসঙ্গে বেশ কয়েকটি বোমায় বিস্ফোরণ ঘটায় এই বড়সড় ঘটনা ঘটে বলে মনে করা হচ্ছে । শুধু তাইই নয়,পরে পুলিশ গ্রাম থেকে প্রচুর বোমার মশলা ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র উদ্ধার করে । কিন্তু এত বিপুল সংখ্যক বোমা কেন বাঁধা হচ্ছিল তার প্রকৃত কারন এখনো স্পষ্ট নয় ।
এদিকে কাটোয়ার রাজুয়া গ্রামে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় এনআইএ তদন্ত চেয়ে কলকাতা উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন যুব তৃণমূলের পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সহ সভাপতি আইনজীবী শুভেন্দু দাস। আর তার এই অপরাধের জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জির নির্দেশে তাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে । একথা তৃণমূলের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি ও কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় আজ বুধবার রাতে সাংবাদিক বৈঠক করে জানালেন । তিনি বলেন,’অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শুভেন্দুকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে ।’ বিজেপির জেলা কোঅর্ডিনেটর কৃষ্ণ ঘোষ এই নির্দেশকে ‘বিপজ্জনক’ বলে আখ্যা দিয়ে “বাংলার ভবিষ্যৎ অন্ধকার” বলে মন্তব্য করেছেন । পাশাপাশি তিনি বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শুভেন্দু দাসকে সমর্থন জানিয়েছেন ।
রাজুয়া বিস্ফোরণকাণ্ডে এযাবৎ মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে ঘটনার মাস্টারমাইন্ড রাজুয়া গ্রামের বাসিন্দা শেখ সেখ তুফান চৌধুরী । রাজুয়া গ্রামে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পরেই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ তুলেছিলেন, জঙ্গল শেখের পরিকল্পনায় বালিঘাটের দখল নেওয়ার উদ্দেশ্যে এবং তাকে প্রাণে মারার ছক কষা হচ্ছিল।
বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা কাটোয়ার দাঁইহাট শহরের বাসিন্দা আইনজীবী শুভেন্দু দাস এদিন বলেছেন, যেখানে বিধায়ক নিজেই আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।দুস্কৃতীদের দ্বারা কাটোয়া শহরে দলীয় কার্যালয় দখল হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন তাই কাটোয়া এলাকার সাধারণ মানুষ আদৌও নিরাপদ কিনা সন্দেহ রয়েছে। বিধায়কের এই আশঙ্কার পর আর পুলিশের প্রতি আস্থা রাখা যায় না। তাই এলাকার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে আমি জনস্বার্থে উচ্চ আদালতের কাছে রাজুয়ার বিস্ফোরণের ঘটনায় এন আই এ তদন্ত চেয়ে আবেদন রেখেছি। সেখানে খুব বড় ধরনের বিস্ফোরণ হয়েছিল। একজন মানুষ মারা যায়। একাধিক আহত হন । একটা বাড়ি উড়ে যায়। আমি মনে করি এটা ছোটখাটো ঘটনা নয়।’ তবে আজ উলটো শুর শোনা যায় রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের গলায় । তিনি বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শুভেন্দু দাসের পুলিশের প্রতি অনাস্থার প্রশ্নে বলেছেন,’আমার পুলিশের প্রতি পূর্ন আস্থা রয়েছে। পুলিশ ঠিকঠাক কাজ করছে।’
বিজেপি নেতা কৃষ্ণ ঘোষ বলেন,’শুভেন্দু দাস এনআইএ-এর দাবি যথাযথ । আমরাও চাই এনআইএ হোক । কাটোয়ার রাজুয়া গ্রামে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা কোনো ছোটখাটো ঘটনা নয় । কে বলতে পারে যে এর সঙ্গে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যোগ নেই ? তারপরেও এই ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন খোদ অভিষেক ব্যানার্জি । যা রাজ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক । পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎতে অন্ধকারের মুখে ঠেলে দিচ্ছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ।’
জানা গেছে, হেফাজতে থাকাকালীন সেখ তুফান চৌধুরীকে টানা জেরা করে তার বাড়ি থেকে দুটি দেশি পাইপগান,তিন রাউন্ড গুলি এবং দুকেজি বোমার মশলা উদ্ধার করেছে পুলিশ । পুলিশ জানতে পেরেছে যে বড় ধরনের কোনও অপারেশনের উদ্দেশ্যে তুফান চৌধুরী বিপুল পরিমাণ মশলা কিনে এনে ভাড়া করা দুস্কৃতীদের দিয়ে বোমা বাঁধাচ্ছিল। তবে ঠিক কি উদ্দেশ্যে বা কোথায় সেই অপারেশনের ছক ছিল তদন্তের স্বার্থে পুলিশ এখনও প্রকাশ করতে রাজি হয়নি ।।

