এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৮ এপ্রিল : নিয়োগ দুর্নীতিতে নিয়ে যখন নাস্তানাবুদ মমতা ব্যানার্জি, তখন তার দলের দুই সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মহুয়া মৈত্রের মধ্যে বেনজির সংঘাত প্রকাশ্যে এল । বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য ও বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচির পোস্ট থেকে তৃণমূলের অভ্যন্তরের কোন্দল প্রকাশ্যে আসার পর কল্যাণের মুখে দলত্যাগেরও কথা শোনা গেছে ৷ কল্যাণ জানিয়েছেন যে দলনেত্রী নির্দেশ দিলে তিনি ইস্তফা পর্যন্ত দিতেও রাজি আছেন ।
অমিত মালব্য এক্স-এ ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, ‘গত ৪ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে দুই তৃণমূল সাংসদের মধ্যে বিবাদ বাধে। স্মারকলিপি জমা দিতে কমিশনে গিয়েছিলেন সাংসদরা। মনে হচ্ছে, কমিশনের কাছে যাওয়ার আগে স্মারকলিপিতে সই করার জন্য সংসদে অফিসে সাংসদদের জড়ো হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল দল। স্মারকলিপি নিয়ে যাওয়া একজন সাংসদ সংসদীয় দলের সঙ্গে সেই সাক্ষাৎ এড়িয়ে সরাসরি কমিশনে গিয়েছিলেন। যার জেরে রেগে যান অন্য সাংসদ। কমিশনে মুখোমুখি হলে দুই সাংসদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। পরিস্থিতি এমন হয় যে, মহিলা সাংসদ সেখানে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের হস্তক্ষেপ করতে বলেন।’ এই ঘটনার কথা জানানো হয় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায়কে। ‘অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস এমপি ২০২৪’ গ্রুপে এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয় কথা কাটাকাটি।’ পরে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বের হয়ে যান সেই মহিলা সাংসদ।’ সেই সমস্ত কথোপকথনের স্ক্রিনশটও পোস্ট করেছেন তিনি ।
অমিত মালব্য তৃণমূলের দুই সাংসদের বার্তালাপ ফাঁস করতেই সংবাদ মাধ্যমের সামনে সেদিনের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি । তিনি বলেছেন,গত ৪ এপ্রিল ভুয়ো ভোটার নিয়ে দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। তার আগেরদিন তিনি স্মারকলিপিতে সই করার জন্য দলের নির্দিষ্ট করে দেওয়া কয়েকজন সাংসদকে দলের সংসদীয় দফতরে ডেকে পাঠান। ওই দিন সকালে তাঁরা একজোট হয়ে স্মারকলিপিতে সই করে নির্বাচন কমিশনে যান। সেই তালিকায় নাম ছিল না তৃণমূলের ওই মহিলা সাংসদের। ওই মহিলা সাংসদ কল্যাণকে প্রশ্ন করেছিলেন স্মারকলিপিতে তাঁর নাম নেই কেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘নাম নেই তো আমি কী করব? আমাকে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সেইমতো আমি কাজ করছি।’ কল্যাণের এই মন্তব্য শুনে বেজায় ক্ষেপে যান ওই মহিলা তৃণমূল সাংসদ। পাশে থাকা কর্তব্যরত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের কল্যাণবাবুকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন মহিলা সাংসদ। মহিলা সাংসদের অভিযোগ তাঁকে কটূক্তি করেছেন কল্যাণ। এর পর কমিশনের দফতরে প্রবেশের সময়ও মহুয়ার উদ্দেশে ক্ষোভ ব্যক্ত করতে থাকেন কল্যাণ। সেই ভিডিয়োই প্রকাশ্যে এনেছেন অমিত মালব্য ও কৌস্তভ বাগচি ।
কল্যাণ নাম না করে মহুয়াকে তোপ দেগে বলেন, ‘সেই মহিলা সাংসদের আর কোনও ইস্যু নেই। শুধু আদানি আর নরেন্দ্র মোদী। বিজেপির কোনও নেতাকে চ্যালেঞ্জ করেন না তিনি। কোনও মহিলা সাংসদ তো কংগ্রসের কোন বড় নেতার বান্ধবী বলে জেলার রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছে। আমার মতো একজন লোককে বলছে জেলে ঢোকাও! আর অন্য প্রদেশের এক তৃণমূল সাংসদ এই ভিডিয়ো করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছে।’
এদিকে তৃণমূলের সাংসদদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কথোপকথনের স্ক্রিনশটও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আজ মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকও করে কল্যাণ ওই মহিলা সাংসদকে আক্রমণ করে বলেন, ‘সুন্দরী মহিলা ফট ফট করে ইংরেজি বলতে পারেন বলে অপমান করতে পারেন না, কোনও অবদান নেই। ২০০৯ সালের পর এসেছে। কংগ্রেসের কোনও বড় নেতার বান্ধবী বলেই তো জেলার রাজনীতিতে ঢুকে গিয়েছিল? এদের সব ব্যাকগ্রাউন্ড এমন।’ তিনি বলেন,’নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে বলো, কিন্তু অমিত শায়ের বিরুদ্ধে তো কিছু বলো না ভাই? রাজনাথ সিং, পীযূস গোয়েলের বিরুদ্ধে বলো না কিছু। শুধু আদানি আর নরেন্দ্র মোদী । সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসা লোক আমি। কোটায় আসা লোক নই । ২০১১ সালের পরে এসে রাজনীতি করার লোক নই। দল যেদিন বলবে সব ছেড়ে দিয়ে চলে যাব। কিন্তু এসব অসভ্য মহিলা সাংসদদের সহ্য করব না।’
কল্যাণ বলেন, এই ঘটনার আগের দিন কীর্তি আজাদ কয়েকজন মহিলা সাংসদ ও কয়েকজন পুরুষ সাংসদের সই সংগ্রহ করেছিলেন। সেই চিঠিতে লোকসভার স্পিকারকে দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের একটা বিখ্যাত সন্দেশের দোকানের কাউন্টার সংসদের ক্যান্টিনে খোলার আবেদন জানানো হয়েছিল। আমি সেই চিঠির বিরোধিতা করি। পার্টির অনুমতি ছাড়া কে দোকান খুলবে এই আবেদন জানানো যায় না। এতেই আমার ওপর ওর রাগ। কে জানে কী কথা হয়ে ছিল।
তিনি আরও বলেন, এই মহিলা সাংসদ আমাকে সংসদের ভিতরে ছোটলোক বলেছে। আমার মেয়ে নিয়ে কথা বলেছে। ওই মহিলা সাংসদের সংসদে বলার জন্য পুরো সময় চাই। কোনও বিতর্কে আমাদের দলের জন্য ২০ মিনিট বরাদ্দ হলে ২০ মিনিটই ওনার চাই। আর কাউকে বলতে দেবে না। উনি সম্প্রতি একটি ছোট বিলে ১৭ মিনিট বলেছিলেন। ওয়াকফ বিলে আমাকে ৩৫ মিনিট বলতে দেওয়া হয়েছে বলে ওনার গাত্রদাহ হচ্ছে। আমি তো সাধারণ মানুষের কথা বলি, তুমি এক শিল্পপতির হয়ে আরেক শিল্পপতিকে আক্রমণ করো।’ যদিও এত গুরুতর আক্রমণ করলেও ওই মহিলা সাংসদের নাম নেননি কল্যাণ ব্যানার্জি৷ পালটা জবাবও আসেনি মহুয়া মৈত্রের তরফে । দলও এখনো মুখ খোলেনি । তবে শুধু মহুয়াই নয়,সৌগত রায়ের বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন কল্যাণ ।।