এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৬ ডিসেম্বর : মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের বহিষ্কৃত তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক হুমায়ুন কবির বর্তমান সময়ে রাজ্য রাজনীতির বহু চর্চিত নাম । আজ শনিবার (৬ ডিসেম্বর) মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গায় ‘লক্ষাধিক মুসলিমের উপস্থিতিতে’ “বাবরি মসজিদ’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে চলেছেন তিনি । ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হবে সৌদি আরবের মৌলবীদের হাত দিয়ে । থাকছে দেশ- বিদেশের বহু ইসলামিক পন্ডিত । হাজার তিনেক পুলিশের নিরাপত্তায় আজ দুপুরে বাবরি মসজিদের ভিত্তির প্রস্তর স্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে । মমতা ব্যানার্জি প্রথমে দলীয় বিধায়কের এই কর্মকাণ্ডের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিলেন । ফিরহাদ হাকিমকে দিয়ে সাসপেন্ডও করান তাকে । কিন্তু পুরো ঘটনাটা “হিন্দুদের চোখে ধুলো দেওয়ার” জন্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর । শুভেন্দুর দাবি যে মমতা ব্যানার্জির প্রচ্ছন্ন মদতে এবং সুনির্দিষ্ট গেম প্ল্যানে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গায় এই বাবরি মসজিদ নির্মাণ হতে চলেছে ।
অন্যদিকে বহিষ্কৃত তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবির দিঘায় ‘জগন্নাথ মন্দিরের’ নির্মানকে ইস্যু করে মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জির গায়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের(আর এস এস) লেভেল পর্যন্ত সেঁটে দিয়েছেন । আপাতদৃষ্টিতে হুমায়ূনের এহেন ভূমিকাকে “বিদ্রোহ” হিসাবে মনে হলেও, এর পিছনে মমতা ব্যানার্জির “সুগভীর রাজনৈতিক পরিকল্পনা” আছে বলে মনে করছে বিজেপি । বিজেপি মনে করছে যে হুমায়ূনকে কাজে লাগিয়ে ধর্মীয় উন্মাদনার সৃষ্টি ও মমতার গায়ে আরএসএস- এর লেভেল সেঁটে দিয়ে আদপে হিন্দু ও মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক সুরক্ষিত রাখতে চাইছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ।
ভরতপুরের বহিষ্কৃত তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক হুমায়ুন কবিরের এই প্রকার “উগ্রতা” নিয়ে এর আগেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য ও যুবনেতা তরুনজ্যোতি তিওয়ারিরা । তারা মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, ফিরহাদ হাকিমের উসকানিমূলক মন্তব্যের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে,শুধুমাত্র হুমায়ূন কবিরকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন । শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন দাওয়াত এ ইসলাম, মুখ্যমন্ত্রী হিন্দু ধর্মকে ‘গন্দা ধর্ম ‘ বলেছিলেন তার বিচার কে করবে?’ তিনি আরও প্রশ্ন তুলেছেন,’এর আগে হুমায়ূন কবির বলেছিলেন হিন্দুদের কেটে ভাগীরথীর জলে ভাসিয়ে দেবেন। তখন তিনি চুপ ছিলেন কেন?’ হুমায়ূন ইস্যুকে তিনি সম্পূর্ণ “সুপরিকল্পিত চিত্রনাট্য” বলে অবিহিত করেছেন ।
প্রায় একই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন তরুনজ্যোতি তিওয়ারি৷ তিনি এক্স-এ লিখেছেন,’যখন মুখ্যমন্ত্রী আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনও উপাস্যের অস্তিত্ব অস্বীকার করে একচেটিয়া ইসলামী বাক্যাংশ ব্যবহার করেন, তখন তা “ধর্মনিরপেক্ষতা”। যখন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর প্রকাশ্যে বলেন যে মুর্শিদাবাদের ৩০% হিন্দুকে ভাগীরথীতে ফেলে দেওয়া উচিত, তখন তা “ধর্মনিরপেক্ষতা”। যখন ফিরহাদ হাকিম ঘোষণা করেন যে ইসলামে জন্মগ্রহণ না করা যে কেউ “দুর্ভাগ্যজনক” জন্মগ্রহণ করে এবং প্রকাশ্যে দাওয়াত-এ-ইসলাম প্রচার করে, তখন তা “ধর্মনিরপেক্ষতা” । যখন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি দাবি করেন যে কোনও জমিতে কয়েকদিন নামাজ পড়লে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়াকফ সম্পত্তিতে পরিণত হয়, তখন সেটাই “ধর্মনিরপেক্ষতা”। যখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ভগবান রামের নামকে “খারাপ শব্দ” বলেন, তখন সেটাই “ধর্মনিরপেক্ষতা”। কিন্তু যদি আমরা বাংলাদেশের নির্যাতিত হিন্দুদের কথা বলি… যদি আমরা মুর্শিদাবাদ, মালদা, গার্ডেন রিচ এবং বাংলার অসংখ্য স্থানের হিন্দুদের কথা বলি যারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন… তাহলে আমাদের “সাম্প্রদায়িক” বলা হয়?”
তিনি আরও বলেছেন,”যদি হিন্দুদের পক্ষে কথা বলা সাম্প্রদায়িকতা হয়, তাহলে হ্যাঁ, আমরা সাম্প্রদায়িক। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দল ভোট-ব্যাংক তুষ্টির জন্য ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠের অধিকারকে পদদলিত করলেও, তারা “ধর্মনিরপেক্ষ” হিসেবে স্বীকৃতি পায়, কিন্তু হিন্দুরা কথা বলার সাথে সাথেই তাদের “সাম্প্রদায়িক” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়েছিল। পাকিস্তান ও বাংলাদেশে আজও হিন্দু গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে। এবং ভারতের কিছু রাজনীতিবিদ একই পথে হাঁটছেন। যদি নির্যাতিত হিন্দুদের পাশে দাঁড়ানোকে সাম্প্রদায়িকতা বলা হয়, তাহলে আমি গর্বের সাথে সেই “সাম্প্রদায়িকতা” পরিধান করি।আমি একজন গর্বিত হিন্দু। আমি একজন নিঃসন্দেহে হিন্দু।”
প্রসঙ্গত,হুমায়ুন কবিরকে সাসপেন্ড করার আগে মালদায় জনসভায় মমতা ব্যানার্জি বিজেপিকে নিশানা করতে গিয়ে বলেছিলেন,”আমি এমন খেলা খেলব, তোরা টেরও পাবি না৷ আমার সঙ্গে খেলতে আসিস না ।” বাস্তবিক ২০২৬ সালের বিধানসভার ভোটের আগে হুমায়ূনকে দিয়ে “বাবরি মসজিদ” নির্মানকে ঘিরে মমতা ব্যানার্জি আদপে যে “খেলা” খেলে দিয়েছেন তাতে রাজ্য বিজেপি খেই হারিয়ে ফেলেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞমহল । শুক্রবার রাজ্যসভায় আদিনা মসজিদ এবং আদিনাথ মন্দির ইস্যুকে রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমিক ভট্টাচার্য তুলে ধরেছেন ঠিকই, কিন্তু একে রাজ্য বিজেপি আন্দোলনে রূপ দিতে পারবে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ আছে । এদিকে হুমায়ুন কবিরের বাবরি মসজিদ ইস্যু যদি আগামী বছর বিধানসভা ভোট পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে রাজ্যের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, যোগ্য শিক্ষকদের চাকরিহারা হওয়া,রাজ্যের ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব প্রভৃতি কোর ইস্যুগুলি ধামাচাপা পড়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে । তাই শুভেন্দু অধিকারী “আগুন নিয়ে খেলছেন” বলে মমতা ব্যানার্জিকে সতর্ক করে দিলেও, তার এই নতুন “খেলা”কে তারা কতটা অকার্যকর করতে পারবেন, সেটাই লক্ষ্যণীয় ।।

