এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৬ মার্চ : ফের ভুল ও বিভ্রান্তিকর জরিপ পরিচালনা করে ভোটব্যাঙ্কের জন্য তৃণমূল কংগ্রেস ত্রুটিপূর্ণ ওবিসি শংসাপত্র প্রদানকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । আজ বুধবার এক্স-এ নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্র নন্দীগ্রামের তিনটি জরিপ ফর্ম সংযুক্ত করে একটা বিস্তারিত পোস্ট করেছেন তিনি । তার মধ্যে দুটি ফর্ম রয়েছে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের সামসাবাদ মৌজার সেখ লুতফর ও শেখ আকসারের নামে ।
শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,গত সপ্তাহে, ১৮ মার্চ ২০২৫ তারিখে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার মাননীয় সুপ্রিম কোর্টকে জানায় যে তারা রাজ্যের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী (ওবিসি) চিহ্নিত করার জন্য একটি নতুন জরিপ পরিচালনা করবে এবং তিন মাসের মধ্যে এই কাজটি সম্পন্ন করবে। মাননীয় কলকাতা হাইকোর্ট ২০১০ সাল থেকে রাজ্যে জারি করা সমস্ত ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করার নির্দেশ দেওয়ার পর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিষয়টি মাননীয় সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে আসে। ২০১০ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের ওবিসি তালিকায় যুক্ত ৭৭টি সম্প্রদায়ের মধ্যে ৭৫টিই মুসলিম ছিল বলে বিতর্ক শুরু হয়। মাননীয় কলকাতা হাইকোর্ট সার্টিফিকেট বাতিল করে জোর দিয়ে বলেন যে ধর্মই একমাত্র মানদণ্ড বলে মনে হচ্ছে। আরও যোগ করে যে, ৭৭টি শ্রেণীর মুসলমানদেরকে পিছিয়ে পড়া হিসেবে নির্বাচন করা সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অপমানজনক। তদুপরি, বৈজ্ঞানিক এবং সনাক্তযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে একটি শ্রেণীকে কেবল পিছিয়ে থাকার কারণেই নয়, বরং রাজ্যের অধীনে পরিষেবাগুলিতে এই শ্রেণীর অপর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতেও ওবিসি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অন্যান্য অসংরক্ষিত শ্রেণী সহ সমগ্র জনসংখ্যার তুলনায় এই অপ্রতুলতা মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
তিনি লিখেছেন,রাজ্যের তালিকা থেকে ৭৭টি সম্প্রদায়কে ওবিসি সংরক্ষণের জন্য কীভাবে নির্বাচন করা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিপাকে পড়ে। এখন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে যে তারা তিন মাসের মধ্যে একটি নতুন জরিপ সম্পন্ন করবে। বাস্তবতা হল যে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার বর্তমানে বৈজ্ঞানিক তথ্য ছাড়াই হিন্দু ওবিসিদের সম্পদ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে এবং কোনও সামাজিক স্থায়িত্ব এবং অস্তিত্বহীন সম্প্রদায় তৈরি করে একটি জরিপ পরিচালনা করছে। এটি কল্যাণের আড়ালে তুষ্টির একটি স্পষ্ট প্রচেষ্টা। তৃণমূল কংগ্রেস সরকার অনৈতিকভাবে তাদের ভোটব্যাঙ্কের জন্য ত্রুটিপূর্ণ ওবিসি শংসাপত্র প্রদানকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করছে, আরেকটি ভুল ও বিভ্রান্তিকর জরিপ পরিচালনা করে।
পরিশেষে তিনি লিখেছেন,আমার বিধানসভা নির্বাচনী এলাকা নন্দীগ্রামের নতুন জরিপের ফর্মগুলি এখানে সংযুক্ত করা হল। বেঞ্চমার্ক নমুনা জরিপ ফর্মে সম্প্রদায়ের নামের জন্য নির্দিষ্ট কলামে পূরণ করা নামগুলি একবার দেখুন। এই ‘সম্প্রদায়ের নামগুলি’ আগে কখনও বিদ্যমান সম্প্রদায় হিসাবে শোনা যায়নি এবং সম্পূর্ণরূপে মনগড়া এবং কাল্পনিক ।
প্রসঙ্গত,কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দায়ের করা আপিলের শুনানি করার সময় গত বছরের ৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল যে ‘ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ করা উচিত নয়‘ । পাশাপাশি রাজ্যের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর (ওবিসি) তালিকায় বেশ কয়েকটি বর্ণ, মূলত মুসলিম সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করার নীতি বাতিল করে দেওয়া হয় ।
এই মামলায় রাজ্য সরকারকে তুলোধুনো করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন আইনজীবী প্রসূন মৈত্র । তিনি নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন,’নিজেদের সমস্যা সমাধানের জন্যে যদি রাজনৈতিক দলের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকেন তাহলে সমাধান যদিবা হয় সেটা হবে রাজনৈতিক দলের নিজের স্বার্থ অনুসারে। ২০১২ সালে পাশ হওয়া ওবিসি আইন নিয়ে বিরোধীরা বিভিন্ন মঞ্চে প্রতিবাদ করলেও না সেটা ছিল তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে আর না তারা দ্বারস্থ হয়েছিল আদালতের। এই কারণেই আত্মদীপ রাজনৈতিক নির্ভরশীলতা ছেড়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় এবং পরিণামে বাতিল হয় ওবিসি আইন।
মুসলমানদের অবৈধভাবে চাকরিতে ঢুকাতে না পারার ব্যথায় রাজ্য সরকার গত এক বছর ধরে বন্ধ রেখেছে সমস্ত সরকারি চাকরির নিয়োগ। বঞ্চিত হচ্ছে অমুসলিম যুবসমাজ ও তাদের পরিবারের লক্ষ লক্ষ লোক। মমতা ব্যানার্জী মঞ্চে দাঁড়িয়ে সস্তা রাজনীতি করার জন্যে দুই-তিন লক্ষ চাকরি ওবিসি কেসের জন্যে আটকে থাকার দাবী করলেও খোদ আদালত তার মুখ্যসচিব’কে আদালতে ডেকে, স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন যে আদালত নিয়োগে কোন নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। শুধুমাত্র বাতিল করা শ্রেণীতে নিয়োগ হবেনা।
নিজেদের অপদার্থতা ঢাকতে সরকার এখন বেঞ্চমার্ক সার্ভে’কে হাতিয়ার করতে চাইছে। এই মর্মে তারা সুপ্রিম কোর্টে তিনমাসের সময়ও চেয়েছে। সার্ভের যৌক্তিকতার প্রশ্নে না ঢুকে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে এই প্রক্রিয়া যেন কারুর স্বার্থের পরিপন্থী না হয়। আত্মদীপ বিশ্বাস করে যে এই সার্ভের সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক এবং এটার একমাত্র উদ্দেশ্যে আদালত দ্বারা বাতিল হওয়া শ্রেণিদের পিছনের দরজা দিয়ে ঢোকানো। এই মর্মে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছে আত্মদীপ কারণ আমরা কোন রাজনৈতিক দলের ইচ্ছার উপরে নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দায়িত্ব ও অধিকার ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ বসে থাকবনা কারণ সেটা অন্যায় নয়, সেটা পাপ।’।

