এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৮ মে : আজ মঙ্গলবার যাদবপুর লোকসভার বিজেপি প্রার্থী ডঃ অনির্বাণ গাঙ্গুলি ও দক্ষিণ কলকাতার বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরীর সমর্থনে কলকাতার বারুইপুরে জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । সভাতে বিগত ১০ বছরে কেন্দ্র সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরার পাশাপাশি মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে তীক্ষ্ণ ভাষায় আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী । তিনি অভিযোগ তোলেন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার এরাজ্যে দুর্নীতিগ্রস্ত ইকো সিস্টেমকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । শাহজাহান শেখের মত পাপীদের বাঁচানোর জন্য নোংরা খেলা খেলছে । মাইক্রোস্কোপ দিয়েও এরাজ্যের সুশাসন খুঁজে পাওয়া যায় না । পাশাপাশি তিনি দাবি করেন চার জুন বড় সংখ্যায় পদ্ম ফোটাতে যাচ্ছে এরাজ্যের ভোটাররা।
নরেন্দ্র মোদী বলেন,’খানে সন্দেশখালীর মত ঘটনা একটা স্বাভাবিক ঘটনার মত হয়ে গেছে । যেখানে মা বোনেদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে । আর শাহজাহান শেখের মত পাপীদের বাঁচানোর জন্য নোংরা খেলা খেলছে৷ যে তৃণমূল সরকার ল’অ্যান্ড অর্ডারের মত প্রাথমিক কাজগুলো পর্যন্ত করতে পারেনা তাদের সাজা দেওয়া জরুরী । তৃণমূলের রাজনীতি হলো রক্তাক্ত রাজনীতি । তৃণমূল দুর্নীতিগ্রস্ত ইকো সিস্টেমকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । তৃণমূলের রাজনীতি হল ভোট ব্যাংকের জন্য । এর তাজা উদাহরণ আমরা কয়েকদিন আগেই দেখেছি । তৃণমূল অসংবিধানিক ভাবে ৭৭ মুসলিম জাতিকে ওবিসি ঘোষণা করে দিয়েছিল । কিন্তু যখন হাইকোর্টের ফয়সালা এল তখন এদের উদ্দেশ্য বর্বাদ হয়ে গেল। কিন্তু হাইকোর্টে ফয়সালা তোদের মানতেই হবে । এদের ষড়যন্ত্রে লাগাম পড়ে গেছে । তবুও এরা মুসলমানদের খুশি করার জন্য বলছে যে হাইকোর্টের ফয়সালা আমরা মানিনা ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃণমূল দিনরাত ভোট ব্যাংকের রাজনীতি করছে, দিনরাত গালিগালাজ করছে, দিনরাত বেআইনি কাজ করছে । দেশের জন্য এদের কি কোন ভিসন আছে ? বাংলার ভবিষ্যতের জন্য এদের কোন ভিসন আছে কি? তৃণমূল ভোট ব্যাংকের জন্য যতটা কাজ করে, ততটা বাংলার যুবকদের জন্য করে না । তৃণমূল আপনাদের গরীব এবং পিছিয়ে রাখতে চায়,যাতে ওদের দোকান চলে ৷ আর অন্যদিকে মোদী বিকশিত ভারতের জন্য কাজ করছে ।’
তিনি বলেন,’তৃণমূল এবং সুশাসন এর মধ্যে কোন সম্পর্কই নাই । বাংলায় সুশাসন দূরবীন দিয়ে খুঁজেও পাওয়া যায় না। মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখেও বাংলার সুশাসন খুঁজে পাওয়া যায় না। মোদি দেশজুড়ে দেশ জুড়ে ১২ কোটি পরিবারে নল বাহিত পানীয় জল পৌঁছে দিয়েছে৷ কিন্তু আজও বাংলায় মানুষ আর্সেনিকযুক্ত জল পান করতে বাধ্য হচ্ছে । মোদী শহরের গরীব আর মধ্যবিত্তদের পাকা ঘর দিচ্ছে, প্রোমোটারদের দৌরাত্ব বন্ধ করতে আইন এনেছে, কিন্তু এখানে প্রকাশ্যে মাফিয়াদের জমি দেওয়া হচ্ছে । বেআইনিভাবে নির্মাণ হচ্ছে ।’
সিপিএমের বিরুদ্ধে তৃণমূলকে সুবিধা করে দিতে ভোটে লড়ার অভিযোগ তোলেন প্রধানমন্ত্রী । এই বিষয়ে তিনি বলেন,’মানুষ জানে যে সিপিএমকে ভোট দেওয়া মানে, সেটা তৃণমূলকেই দেওয়া । সিপিএম এখানে ভোটের লড়ছে তৃণমূলকে সাহায্য করার জন্য । আর পর্দার পিছনে এদের খেলা চলছে, এরা একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ । এখানকার মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে দিয়েছেন যে দিল্লিতে ওদের সমর্থন করবেন । আপনারাই বলুন বামপন্থীদের ভোট দিয়ে আমরা তৃণমূলকে মজবুত করতে চান ? যাদবপুরের লোকেদের জিজ্ঞেস করুন কেন্দ্রে কার সরকার আসবে? দেখবেন ১০০ জনের মধ্যে ৯০ জন বলবে মোদী সরকার আসছে । আপনারা যদি বুঝেই গেছেন যে মোদীর সরকার আসছে তাহলে ভোট নষ্ট করছেন কেন? ভোট ফালতু দেওয়া কি উচিত ? আপনার ভোট কেন্দ্রের সরকারকে মজবুত করার জন্য দেওয়া উচিত ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন,’কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি পঙক্তি-‘বাংলার মাটি বাংলার জল বাংলার বায়ু বাংলা স্থল পূর্ণ হোক পূর্ণ হোক পূর্ণ হোক হে ভগবান’- বাংলার দর্শন করায় । কিন্তু বামপন্থী আর তৃণমূল মিলে এই বাংলাকে বরবাদ করে দিয়েছে । এরা দুটো পার্টি হল এদের দোকানে একটাই । আর দোকানের পণ্যও একই । তৃণমূল আর বামপন্থী দু’দলই ইন্ডি জোটে আছে । ওই দলই তোষামোদের রাজনীতি করে । এ দুটো পার্টি পশ্চিমবঙ্গকে দুর্নীতিগ্রস্ত একটা সিস্টেম দিয়েছে । তোলাবাজের সিস্টেম দিয়েছে । আর সবচেয়ে বড় কথা হল এই দুটো পার্টি গণতন্ত্র বিরোধী । পঞ্চায়েত, বিধানসভা, লোকসভা, কোন নির্বাচনই বাংলায় খুন-খারাবি ছাড়া হয় না । এখানে গণতন্ত্র বাঁচানোর জন্য পাহাড়া দিতে হয়৷ এখানে মানবতার সেবা করা সাধু সন্তরা পর্যন্ত আওয়াজ তুলছেন । ওদের বেঁচে থাকাই মুশকিল করে দিয়েছে । ওদের গালাগালি পর্যন্ত করা হচ্ছে । ওদের উপর হামলা হচ্ছে । এটা তৃণমূলের ট্রেরর মডেল । আজ দেশের সামনে ওদের মুখোশ খুলছে।’
সিএএ-এর বিরোধিতা করা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘সিএএ নিয়ে তৃণমূল যেভাবে মিথ্যাচারিতা করছে তা গোটা দেশ দেখছে । দেশভাগের পর অত্যাচারের কারণে পালিয়ে আসলো লোকজনদেরকে আমরা কি আশ্রয় দেবো না ? এটা মোদী কখনো হতে দেবে না । এটা নাগরিকত্ব দেওয়া আইন, নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার আইন নয় । কিন্তু তৃণমূল পরিকল্পিতভাবে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে নিজের ভোট ব্যাংকে ভয় দেখানোর জন্য ৷ যাতে ওরা টিএমসির কাছ থেকে পালিয়ে না যায় । মোদী গরিবের জন্য সস্তা সিলিন্ডার যোজনা চালাচ্ছে এতে লক্ষাধিক বোনেদের লাভ হচ্ছে, কিন্তু তৃণমূল সরকার এতেও বাধা দিচ্ছে ।’
প্রধানমন্ত্রী বিগত ১০ সালের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে বলেন, বিগত ১০ বছরে প্রতিদিন ভারতে দুটো করে কলেজ খুলেছে । প্রতি সপ্তাহে একটা করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। প্রতিবছর ত্রিশের অধিক মেডিকেল কলেজ হয়েছে। ১০ বছর আগে দেশের ৪-৫ ইনস্টিটিউট গ্লোবাল র্যাঙ্ককিং-এ আসত । আজ কয়েক ডজন ইনস্টিটিউট গ্লোবাল র্যাঙ্ককিং-এ চলে এসেছে । ভারত বিশ্বের তৃতীয় বড় স্টার্ট আপ ইকো সিস্টেম হয়ে গেছে । আগামী পাঁচ বছরে আমরা ভারতকে গ্লোবাল এডুকেশনাল রিসার্চ এবং স্কিল ডেভেলপমেন্ট হাব হিসাবে দেখতে চাই । আমরা ভারতকে স্পেস,ডিফেন্স,সেমিকন্ডাক্টর সহ একাধিক ক্ষেত্রে আগে নিয়ে যাচ্ছি । এরে সরাসরি লাভ হবে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের । মোদী সরকার ভারতকে ট্যুরিজম এবং টেক্সটাইলে গ্লোবাল হাব বানানোর চেষ্টা করছে । এই কারণে আধুনিক কানেক্টিভিটি, ট্রান্সপোর্টে অভূতপূর্ব খরচ করা হচ্ছে । দশটা লাগে দেশের ৫-৬ শহরে মেট্রো অসুবিধা ছিল । আজ দেশের অন্তত কুড়িটা শহরে মেট্রোর সুবিধা আছে পৌঁছে গেছে। কলকাতা মেট্রোর আমরা দ্রুত বিকাশ করছি । কলকাতা প্রথম জলের নিচে মেট্রোর গৌরব অর্জন করেছে ৷’
প্রধানমন্ত্রী ফের দাবি করেন যে এরাজ্যে ভালো ফলাফল করতে চলেছে বিজেপি । তিনি বলেন,’আমি বিগত দুমাস ধরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছি । লক্ষ্য করছি তৃণমূল আর ইন্ডি জোটের বড় বড় কেল্লা এবারে বিধ্বস্ত হবে । গোটা বাংলা চার জুন বড় সংখ্যায় পদ্ম ফোটাতে যাচ্ছে।’
আজ যাদবপুরে জনসভা ছাড়াও উত্তর কলকাতা লোকসভার বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের সমর্থনে শ্যামবাজারে রোড শো করেন প্রধানমন্ত্রী । রোড শো করেন বারাসাতেও । বারাসাত লোকসভার বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদার ও বসিরহাট লোকসভার বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র -এর সমর্থনে অশোকনগরে বিজয় সংকল্প সভায় যোগ দেন তিনি । তারই মাঝে কলকাতায় বাগবাজারে সারদা মায়ের বাড়ি দর্শন ও পুজো দেন প্রধানমন্ত্রী । এদিন প্রধানমন্ত্রীর একাধিক কর্মসূচি ঘিরে কার্যত মোদীময় হয়ে ওঠে গোটা কলকাতা ।।