এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৫ মার্চ : এক সময়ে এরাজ্যের মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক ছিল কংগ্রেসের দখলে । ক্রমে তারা সিপিএমের দিকে ঝোঁকে । ২০১১ সালে সেই মুসলিম ভোটব্যাঙ্কই একচেটিয়া তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে সিপিএমের অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় । তারপর থেকে তৃণমূলের মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে আর কেউ থাবা বসাতে পারেনি । মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সেই কারনে মুসলিম ভোটারদের কার্যত “দুধেল গরু” আখ্যা দিয়েছিলেন । এদিকে পরবর্তী বিধানসভার ভোটও আসন্ন । তার আগে ভোটার তালিকায় ঝাড়াই বাছাইয়ের কাজ চলছে । রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির অভিযোগ যে হিন্দু ভোটারদের নাম বাদ দিয়ে ভোটার তালিকায় বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাম ঢোকাচ্ছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ।
বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কৃষ্ণনগর-২ ব্লকের বিডিও-এর একটা নির্দেশনামার শেয়ার করা হয়েছে । সেই নির্দেশে বলা হয়েছে, ‘যেহেতু মিস্টার আবদুর রহমান শেখের কাছ থেকে ২১.০৩.২০২৫ তারিখে ডকেট নং ১৭৫৬-এর মাধ্যমে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে, যেখানে তিনি ৯৮ জন ভোটারের নাম সংশ্লিষ্ট এলাকায় বসবাসকারী বা শারীরিকভাবে উপস্থিত না থাকার কারণে তালিকাভুক্তির বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এই ৯৮ জন ভোটারের প্রকৃত তথ্য অর্জনের জন্য, সংযুক্ত তালিকায় উল্লেখিত AERO-দের এতদ্বারা সংযুক্ত তালিকায় তাদের নামের বিপরীতে উল্লেখিত ভোটারদের স্পট তদন্ত করার এবং ৩ দিনের মধ্যে ৯৮ জন ভোটারের সাধারণ নাগরিকত্ব উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
লকেট চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন,’তৃণমূল সরকার পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা থেকে হিন্দুদের নাম মুছে ফেলছে এবং সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে বিশেষভাবে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করছে। উদাহরণস্বরূপ, বিজেপির শক্ত ঘাঁটি নদিয়া জেলায়, আব্দুল রহমান শেখ নামের একজনের অনুরোধের পর ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার (বিডিও) একই দিনে ৯৮ জন হিন্দুর নাম ভোটার তালিকা থেকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করেন।এই পদক্ষেপটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে নেওয়া হচ্ছে। ভোটার তালিকা প্রস্তুতিতে বিডিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন যে মুসলিমরা ব্যাপকভাবে তার পক্ষে ভোট দেন। এই কারণে, এটি হিন্দুদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার একটি উদ্দেশ্যমূলক প্রচেষ্টা।’
এই বিষয়ে প্রতিবাদ করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় আইটি সেলের ইনচার্জ অমিত মালব্যও । তিনি এক্স-এ লিখেছেন,’পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার ভোটার তালিকা থেকে হিন্দুদের নাম বাদ দিচ্ছে, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা ভোটারদের নাম যুক্ত করছে। উদাহরণস্বরূপ, বিজেপির শক্ত ঘাঁটি নদীয়াতে, আব্দুল রহমান শেখের অনুরোধ পাওয়ার পর, ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার (বিডিও) একই দিনে ৯৮ জন হিন্দুর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ভোটার তালিকা তৈরিতে বিডিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে – এবং ব্যানার্জি জানেন যে রাজ্যে মুসলিমরা তাকে ভোট দেয় – এই বিষয়টি হিন্দুদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার একটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা ।’
পাশাপাশি সুকান্ত মজুমদার বাগদা বিধানসভার ভোটার লিস্টের ১১৮ নম্বর অংশে এমন ৫ জন ভোটারকে চিহ্নিত করেছেন যারা আদপেই ভারতীয় নাগরিক নয় বলে তার দাবি । ওই নামগুলি হল নিহারবানু বিশ্বাস(৩২২),গদ্দাফি বিশ্বাস(৩২৫), সাহিদুল বিশ্বাস(৩২৩),ছাদ্দাম বিশ্বাস(৩২৬) এবং মিনারা বিশ্বাস(৩২৪)৷ পাশাপাশি তিনি মহম্মদ শাহিদুল বিশ্বাস নামে একজনের ‘জাতীয় পরিচিতি তথ্য’ শেয়ার করেছে যেখানে বর্তমান ঠিকানা লেখা রয়েছে, ‘গ্রাম / রাস্তা – বিল এড়োল,পাশাপোলা,ডাকঘর- কায়েমকোলা ৭৪২০,চৌগাছা,যশোর” ।
সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন,’কিভাবে রাজ্যের তোষণসর্বস্ব মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি গভীর চক্রান্ত করে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের বেছে বেছে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছেন তার উপযুক্ত প্রামাণ্য নথি গতকালই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মানীয় শ্রী অমিত শাহ জী-কে পৌঁছে দিয়েছি। এবার দেখুন বাংলাকে ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ বানানোর স্বপ্ন দেখা রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের আরও মারাত্মক একটি চক্রান্ত! কিভাবে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় সংযুক্ত করা হয়েছে! বাংলাদেশের যশোর জেলার চৌগাছা অঞ্চলের বাসিন্দা শহিদুল বিশ্বাস, তার নাম রয়েছে বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার তালিকায়। শুধু একজন শহিদুল নয়, গোটা পশ্চিমবঙ্গে এমন লক্ষ লক্ষ অনুপ্রবেশকারীদের সম্মানের সঙ্গে ভোটার তালিকায় সংযোজিত করেছে তৃণমূল। ভারতকেশরী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কঠিন সংগ্রামে ছিনিয়ে আনা ‘হিন্দু হোমল্যান্ড’ কে হিন্দু শূন্য করে ঠিক কাদের কে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরসূরি বানানোর চক্রান্ত করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝে নিন!’।
