এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৫ অক্টোবর : গতকাল কলকাতা হাই কোর্ট বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর আইনি “রক্ষাকবচ” প্রত্যাহার করে নেওয়ায় পর তৃণমূলের নেতাদের চরম উচ্ছ্বসিত দেখা যায় । আসলে, তিন বছর আগে হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার জারি করা অন্তর্বর্তী রক্ষাকবচ শুক্রবার প্রত্যাহার করে নেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। তবে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে দায়ের করা মোট ১৯টির মধ্যে ১৫ টি মামলা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে । বাকি ৪টি মামলা বিশেষ তদন্তকারী দল ‘সিট’ গড়ে তদন্ত শুরুরও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক । তবে এই ‘সিট’-এ রাজ্য পুলিশের একছত্র অধিপত্য থাকছে না । কারন বিশেষ তদন্তকারী দলে রাখা হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর সম সংখ্যক প্রতিনিধিকে । আর এতেই জয় দেখছে বিজেপি ৷ স্বয়ং বিরোধী দলনেতারও দাবি যে মামলার রায় তারই পক্ষে গিয়েছে।
শুক্রবার হাওড়ার একটি কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দু বলেন,’আমার বিরুদ্ধে যতগুলো মিথ্যে মামলা দিয়েছিল এই জেহাদি সরকার, সব স্থগিত করে দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি, খুন, হামলা থেকে শুরু করে যা যা মিথ্যে মামলা সাজিয়েছিল, সেগুলোও খারিজ করেছে। এই রায় আমার কাছে কোনও নেগেটিভ রায় নয়।’
বিচারপতি সেনগুপ্তর রায়ের পর আইনজীবী ও তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জির প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘শুভেন্দুর রক্ষাকবচ উঠে যেতেই এখন তদন্তের রাস্তা খুলে গেল। এবার ওঁর মস্তানিটা বন্ধ হবে। শুভেন্দু কেন, ওর ক্লোজ সার্কেলে যারা আছে, তাদের বিরুদ্ধেও মামলা হবে। তদন্ত শুরু হলে চাকরি চুরিতে কত টাকা তুলেছিল শুভেন্দু – সব বেরিয়ে আসবে।’ উচ্ছ্বসিত তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষও । তবে শুধু তৃণমূলই নয়,সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীকেও গতকালের রায়ে খুশি দেখা গেছে । তার কথা,’কেন এই রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছিল, সেটাই আগে দেখা দরকার।’
আসলে,শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে মোট ১৯ টি মামলা দায়ের করেছিল রাজ্য পুলিশ । গত বছর ৮ ডিসেম্বর মামলার শুনানিতে বিরোধী দলনেতার পক্ষের আইনজীবী হয় ওই এফআইআরগুলি খারিজ করে দেওয়া , নয়তো অভিযোগের তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার আবেদন জানানো হয় । এরপর বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা নির্দেশ দেন, আদালতের আগাম অনুমতি ছাড়া শুভেন্দুর বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর দায়ের করা যাবে না। শুভেন্দুর বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা ১৫টি এফআইআরের উপর স্থগিতাদেশও দেন বিচারপতি মান্থা । যাকে তৃণমূল “আদালতের সুরক্ষাকবচ” বলে অবিহিত করে । সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেছিল রাজ্য সরকার । শুক্রবার বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত-এর বেঞ্চে মামলার শুনানি হয় । বিচারপতি শুভেন্দুর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ১৫টি মামলা খারিজ করে দেন । তবে মানিকতলা থানা-সহ পাঁচটি মামলার ক্ষেত্রে সিবিআই ও রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী টিম গড়ে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি । বিচারপতি জানিয়েছেন, এসপি পদমর্যাদার আধিকারিক থাকবে সিবিআই ও রাজ্য থেকে। এই ‘সিট’-এর সর্বোচ্চ সদস্য হবেন ১২ জন। সেখানে ৬ জন সিবিআই আধিকারিক ও ৬ জন রাজ্য পুলিশের আধিকারিক থাকবেন। বিচারপতি এও বলেন, এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা বা তাঁর আইনজীবীদের কিছু বলার থাকলে আগামী সোমবারের মধ্যে আদালতে লিখিতভাবে তা জানাতে হবে।
এদিকে ২০২৬ সালের বিধানসভার ভোটের আগে আদালতের এই রায়কে শুভেন্দুর জন্য একটা “বড় ধাক্কা” বলে মনে করছে তৃণমূল । যদিও রাজ্য বিজেপির যুবমোর্চার সহ-সভাপতি ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারি এই রায় বিরোধী দলনেতার জয় হিসাবেই দেখছেন । তিনি এক্স-এ গতকাল কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় প্রসঙ্গে লিখেছেন,’আবারও শুভেন্দু অধিকারীর জয়! আজ কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকার ও মমতা-রাজীব কুমার বাহিনীর ১৫টি ভুয়ো FIR খারিজ করে দিল! অর্থাৎ — আমাদের ট্যাক্সের টাকায় চালানো মিথ্যে মামলা আজ আদালতে ধসে পড়ল। বাকি ৪টি মামলায় সিবিআই ও রাজ্য পুলিশের যৌথ তদন্তের নির্দেশ — মানে রাজ্যের হাতে একক ক্ষমতা নেই!’
তিনি লিখেছেন,’আদালত জানিয়েছে, মমতা সরকার আরও ৬টি ভুয়ো FIR করেছে! তবুও মিডিয়া চুপ… কারণ ওরা “সত্যের সৈনিক” নয়, তৃণমূলের দালাল। আর কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের মুখ বাঁচাতে এখন এলোমেলো বুলি আওড়াচ্ছেন — তার কথা শুনে তৃণমূলের চোরেরা যেমন চেঁচায়, ঠিক তেমনই লাফাচ্ছে!’ সবশেষে তিনি লিখেছেন,’শুভেন্দু অধিকারী — সেই মানুষ যাঁর নন্দীগ্রাম আন্দোলন ছাড়া মমতা আজ মুখ্যমন্ত্রীই হতেন না। আজ সেই নায়ককেই ফাঁসাতে গিয়ে আদালতে আবার মুখ থুবড়ে পড়ল তৃণমূল!’
যদিও শুভেন্দু এখনও নন্দীগ্রাম থানার ২ টি মামলা, তমলুক থানার ১ টি মামলা, কাঁথি থানার ১ টি মামলায় রক্ষাকবচ চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেননি। আদালত জানিয়েছে, সেই মামলাগুলিতে রক্ষাকবচ চেয়ে আবেদন করলে আদালত তা বিবেচনায় আনবে ।।

