এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৪ ডিসেম্বর : পশ্চিমবঙ্গের বহু বেকার মুসলিম যুবক উড়িষ্যায় হকারি করেন। তাদের সিংহভাগই মুর্শিদাবাদ ও মালদা জেলার । কিন্তু বিতর্কিত সংগঠন বাংলাপক্ষের কথিত বাংলাভাষা রক্ষার নামে প্রাদেশিকতা মূলক কর্মকাণ্ড এবং সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবিরের “আমরা ৭০ ওরা ৩০”, প্রভৃতি উসকানিমূলক মন্তব্যের কারনে অনান্য রাজগুলিতে খুবই খারাপ প্রভাব পড়েছে । তার উপর রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলিমরা পশ্চিমবঙ্গকে করিডর করে দেদার ঢুকে পড়ে কোথাও কোথাও জনবিন্যাসের আমূল পরিবর্তন ঘটানোয় বিভিন্ন রাজ্যের স্থানীয় বাসিন্দারা চরম ক্ষুব্ধ । বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর উড়িষ্যার সাধারণ মানুষ রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের রাজ্য থেকে বের করে দেওয়ার দাবি তুলতে শুরু করেছে । যার প্রতিক্রিয়ায় ওড়িশার নয়াগড় প্রশাসন বাংলাভাষী হকারদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য ৭২ ঘন্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে৷ এদিকে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এটাকে হাতিয়ার করে বিজেপির উপর “বাঙালি বিদ্বেষী” লেভেল সাঁটাতে মরিয়া চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে ।
অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইনে গত ২ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনের লিঙ্ক শেয়ার করে লেখা হয়েছে, ‘বাংলার বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধের জন্য বিজেপি প্রকাশ্যে মুখ খুলছে! বিজেপি শাসিত ওড়িশায়, মুর্শিদাবাদের বাঙালি ব্যবসায়ীরা, যারা বছরের পর বছর ধরে সেখানে বসবাস এবং কাজ করে আসছে, তাদের ৭২ ঘন্টার মধ্যে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। গুন্ডাদের দ্বারা নয়, স্থানীয় পুলিশ নিজেই। তারা আধার দেখিয়েছিল, ভোটার কার্ড দেখিয়েছিল। তারা বারবার তাদের পরিচয় প্রমাণ করেছিল। তবুও, তাদের “রোহিঙ্গা”, “বাংলাদেশী” বলা হয়েছিল এবং কেবল তাদের ভাষার কারণেই তাদের বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।’ আরও লেখা হয়েছে, ‘এটি বিজেপির প্রকল্পের প্রত্যক্ষ ফলাফল: বাঙালিদের তাদের নিজস্ব দেশে বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত করা, তাদের পুলিশ, তাদের কর্মী এবং তাদের রাজ্যের মনকে আমাদের ভাষায় কথা বলা বা আমাদের পরিচয় বহনকারী যে কারও বিরুদ্ধে বিষাক্ত করা। যেখানে নথিপত্র গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেখানে নাগরিকত্ব গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেখানে বাংলার অন্তর্ভুক্তি লক্ষ্যবস্তু হওয়ার জন্য যথেষ্ট। বিজেপিকে স্পষ্টভাবে এই কথাটি শুনতে দিন: বাংলা মাথা নত করে না। বাংলা মনে রাখে। বাংলা প্রতিরোধ করে। এবং বাংলা কখনই, কখনও কোনও বাংলা-বিরোধী শক্তিকে আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে দেবে না।’
ওই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “শত শত মুসলিমের মধ্য্ব চারজনের একটি দল রয়েছে ওড়িশায় তাদের বাড়িঘর ছেড়ে বাংলায় ফিরে যাওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ছে, কোনও আনন্দের উপলক্ষে নয়, বরং চাপের মুখে । ওড়িশার নয়াগড় ছেড়ে যাওয়ার জন্য তাদের ৭২ ঘন্টার সময়সীমা দেওয়া হয়েছে, যেখানে তারা বছরের পর বছর ধরে বাস করে আসছে এবং দুই চাকার গাড়িতে মশারি, লেপ এবং পশমী কাপড় বিক্রি করে আসছে। স্থানীয় ওডাগাঁও পুলিশ স্টেশন কর্তৃক জারি করা এই সময়সীমা সোমবার শেষ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।”
সংবাদপত্রটি দাবি করেছে, “এই চারজনেরই জন্মস্থান মুর্শিদাবাদের ডোমকল মহকুমার জলঙ্গি ব্লকের সাগরপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে।বৃহস্পতিবার ওডাগাঁও থানায়, একজন অফিসার তাদের আধার এবং ভোটার কার্ড দেখানোর পরেও তিন দিনের মধ্যে শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেন। একাধিকবার, ইউনিফর্ম পরা পুরুষরা বাংলায় কথা বলার জন্য তাদের “রোহিঙ্গা” এবং “বাংলাদেশী” বলে সম্বোধন করেছে বলে অভিযোগ।”
প্রতিবেদনের শেষের দিকে লেখা হয়েছে,২৪শে নভেম্বর, মুর্শিদাবাদের ২৪ বছর বয়সী শীতকালীন পোশাক বিক্রেতা রাহুল ইসলামকে “জয় শ্রী রাম” বলতে অস্বীকৃতি জানানোর পর ওড়িশার গঞ্জাম জেলায় একদল জনতা তাকে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে এবং মারধর করে বলে অভিযোগ। সাহেবের দল যেখানে থাকে সেখান থেকে ওই জায়গাটি প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে যখন দুটি পুলিশের গাড়ি তাদের দরজায় এসে পৌঁছায়, তখন কেবল সাহেবই বাড়িতে ছিলেন। একজন অফিসার দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সাহেব বললেন,“সে বললো আমরা ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গা। সে আমার পরিচয়পত্র চাইলো। আমি তাকে আমার আধার এবং ভোটার কার্ড দেখালাম। সে সন্তুষ্ট হলো না। সে আমার বাড়িওয়ালাকে ফোন করে আমাদের সবাইকে বিকেল ৫টার মধ্যে স্টেশনে রিপোর্ট করতে বললো” । থানায় তাদের আবার বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা বলা হয়েছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ তাদের স্বাক্ষরিত নথির ফটোকপি নিয়েছিল এবং তারপর আল্টিমেটাম দিয়েছিল বলে অভিযোগ।”
উল্লেখ্য,মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবির বেলডাঙ্গায় “বাবরি মসজিদ” নির্মানের ঘোষণার পর থেকেই সংবাদের শিরোনামে আছেন। যদিও তিনি বেলডাঙ্গার যে জায়গায় মসজিদটি নির্মানের কথা প্রথমে ঘোষণা করেছিলেন,সেই জায়গার মালিকপক্ষ বিধায়ককে জায়গা দিতে অস্বীকার করেন । শুধু তাইই নয়,তিনি অভিযোগে জানান যে তৃণমূল বিধায়কের এই প্রকার সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের কারনে মূর্শিদাবাদের বহু হকার আর ভিন রাজ্যে ভয়ে কাজে যোগ দিতে যেতে পারছে না । ফলে তারা কর্মহীন অবস্থায় বাড়িতে বসে আছেন । এগুলো তৃণমূল বিধায়কের বিতর্কিত মন্তব্যের কুফল বলে তিনি মন্তব্য করেন ।।

