প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০১ জুলাই : পঞ্চায়েত ভোটে মহিলা ভোটরদের নিজেদের পক্ষে টানতে ’লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পকে হাতিয়ার করছে।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের কথা তুলে ধরেই পূর্ব বর্ধমান জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে জোরদার প্রচার চালাচ্ছেন।সেই প্রচারের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন থাকছেন তেমনই থাকছেন দেবী লক্ষ্মী ও লক্ষ্মীর ভাঁড়। প্রচারে সামিল থাকা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা দাবি করছেন ,একা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পই পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী প্রার্থীদের কুপাকাত করে দেবে ।
তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার প্রতিষ্টা হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ’লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প চালু করেন । সেই থেকে তপসিলি জাতি এবং উপজাতি পরিবারের মহিলারা এই প্রকল্প মাধ্যমে মাসে ১ হাজার টাকা ,আর সাধারণ শ্রেণীর মহিলারা মাসে ৫০০ টাকা করে পাচ্ছেন।রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন,’গোটা রাজ্যে ২ কোটি ১২ লক্ষ মহিলা এখন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করছেন। সংখ্যাটা দিন দিন আরো বাড়ছে। শুধু এই প্রকল্পের জন্যই বছরে বেশ কয়েক হাজার কোটির টাকা রাজ্য সরকারের খরচ হয় বলে পঞ্চায়েত মন্ত্রী জানিয়েছেন ।’ আর রাজ্যের অপর মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানান,পূর্ব বর্ধমান জেলাতে ১১ লক্ষ্য ৬৫ হাজার ৪২৫ জন মহিলা লক্ষীর ভাণ্ডার প্রকল্পের উপভোক্তা রয়েছেন।এরই মধ্যে আবার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে সব শ্রেণীর মহিলাদের জন্য আরও ২৫০ টাকা করে বাড়ানোর চিন্তাভাবনা নিয়েছে সরকার । শাসক দলের নেতৃত্বের দাবি এরই জন্য মহিলা মহলে ’লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের জনপ্রিয়তা আরও বহুগুন বেড়ে গিয়েছে।।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প যে গ্রামের মহিলা মহলকে ব্যাপক ভাবে আকৃষ্ট করেছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি তৃণমূল নেতৃত্বের।তাই পঞ্চায়েত ভোটে মহিলা ভোট ব্যাঙ্ককে নিজেদের পক্ষে এক-কাট্টা করতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পকেই প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার করছে শাসক দল।শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানের রায়না ও জামালপুরে দেখা গেল লক্ষীর ভাণ্ডার প্রকল্পকে হাতিয়ার করে তৃণমূলের প্রার্থীদের অভিনব প্রচার।
রায়না-১ ব্লকের সেহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮৫ নম্বর বুথের তৃণমূল প্রার্থী রিঙ্কু সাহা ও একই ব্লকের ১২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি আসনে তৃণমূলের হয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করা উমা কেশ এদিন বেঁন্দুয়া গ্রামে প্রচারে বের হন । প্রার্থীদের মধ্যে উমা কেশের হাতে ছিল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি । আর রিঙ্কুর সাহার এক হাতে ছিল দেবী লক্ষীর ফটো,অন্য হতাতে ছিল মাটির তৈরি লক্ষ্মীর ভাঁড় ।এই দুই প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারে বের হওয়া মহিলাদের অনেকেও হাতে নিয়ে ছিলেন লক্ষীর ভাঁড়।একই রকম ভাবে এদিন লক্ষ্মীর ভাঁড় ও দেবী লক্ষ্মীর ফটো নিয়ে প্রচারে বের হন জামালপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩৯/৫ এবং ১৩৯/৬ বুথে তৃণমূলের হয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করা দুই প্রার্থী মিঠু রক্ষিত ও রীণা দে। তাঁদের সঙ্গে থাকা দলীয় সমর্থকদের মুখে মুখে ঘুরছিল একটাই শ্লোগান,“জয় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের জয়“ ।
ভোট যুদ্ধের ময়দানে দেবী লক্ষ্মীকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলের প্রার্থীদের এমন প্রচার চাক্ষুষ করতে এলাকার ভোটাররা যে যার ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন । আর সেই ফাঁকেই তৃণমূলের প্রার্থীরা রাজ্য সরকারের চালু করা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প সহ বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের কথা তুলে ধরে তৃণমূলে পক্ষে ভোট দেওয়ার আবেদন জানান। ভোটারদের অনেকে হাত নেড়ে ,আবার কেউ কেউ ইঙ্গিতে তৃণমূলের পক্ষে তাঁদের সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেন।তা দেখে উৎফুল্ল তৃণমূলের প্রার্থীদের সাফ জবাব ,লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে সহায়তা পাওয়া মহিলাদের ভোটেই কুপোকাত হবে যাবে সিপিএম সহ বিরোধী দলের প্রার্থীরা।
এই বিষয়ে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা জামালপুরের বিধায়ক অলক মাঝি বলেন,’বাম সরকার ৩৪ বছর রাজ্যে ক্ষমতায় থাকলেও গরির মানুষের প্রকৃত উন্নয়ন যেমন করেনি, তেমনই রাজ্যের উন্নয়নও সেভাবে ওরা করে নি। শুধু ভেঙে দাও- গুঁড়িয়ে দাও শ্লোগান আর বনধ, ধর্মঘট এই ছিল বামেদের ভিত্তি । সেই তুলনায় তৃণমূল সরকার মাত্র ১২ বছরে অসংখ্য জনহিতকর প্রকল্প যেমন চালু করেছে,তেমনি গ্রাম গঞ্জ সহ গোটা রাজ্যে প্রচুর উন্নয়ন কাজ করেছে। তবে এটা ঠিক যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প গ্রামের মহিলা মহলে খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অলক মাঝি জানান, জামালপুর বিধানসভায় এখনই ৬১ হাজার ৫৭২ জন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সহায়তা পাচ্ছেন।এইসব মহিলারাই পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীদের কুপোকাত করে দেবেন বলে অলক মাঝি দাবি করেন ।
তৃণমূলের এই দাবিকে যদিও নস্যাৎ করে দিয়েছে
সিপিএম ও বিজেপি নেতৃত্ব। জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যূঞ্জয় চন্দ্র এই বিষয়ে বলেন,
‘এটা আমরা আগে থেকেই বুঝেছিলাম । তবে সরকারী প্রকল্পকে দলীয় প্রচারের হাতিয়ার করে তৃণমূলের নেতারা আখেরে বুঝিয়ে দিতে চাইছেন তৃণমূলকে ভোট না দিলে আর মিলবে না লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সহায়তা । তবুও বলবো সরকারী প্রকল্পকে সামনে রেখে তৃণমূল যতই ফায়দা তোলার চেষ্টা করুক না এবার লক্ষ্মী আর ওদের দিকে হবেন না । কেননা গোটা রাজ্যের মহিলারা জেনে গিয়েছেন যে তৃণমূল আপাদ মস্তক দুর্নিতিগ্রস্ত ও চোরেদের পার্টি । পঞ্চায়েত ভোটে চোরেদের পর্টির বিপক্ষেই রায় দেবেন গ্রাম বাংলার মানুষ ।’
এদিকে সিপিএমের মহিলা সংগঠন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সহ- সভানেত্রী ভারতী ঘোষাল কটাক্ষ করে বলেন,’তৃণমূলের সরকার ৫০০ টাকা দিয়ে মহিলাদের ব্ল্যাকমেল করছে। মহিলারাও জানেন যে তৃণমূলের রাজত্বে এই বাংলায় মহিলাদের কোন উন্নতি হয়নি। উল্টে নারী ধর্ষণ,নারী হত্যা বহুগুন বেড়ে গিয়েছে। এমন কি শিশুরাও তৃণমূলের রাজত্বে নিরাপদ নয়। বল ভেবে খেলতে গিয়ে বোমায় কোথাও শিশুর মৃত্যু হচ্ছে, আবার কোথাও শিশুরা জখম হচ্ছে। এইসব নিয়ে মহিলারা তৃণমূল প্রতি চরম বীতশ্রদ্ধ হয়ে আছে। তাই তৃণমূল এখন চমকের রাজনীতি করছে । কিন্তু আমরা চমকের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না । আমরা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রচার করছি ,কোন সামাজিক প্রকল্প বন্ধ না করে আমরা দুর্নীতিমুক্ত আরো উন্নতর পঞ্চায়েত গড়বো ।’ সেই প্রচারে সাধারণ মানুষের অভাবনীয় সাড়াও মিলছে। আর সেটা দেখেই তৃণমূল চমকের রাজনীতির পথ বেছে নিয়ে ভোটারদের বিভ্রান্ত করছে বলে ভারতী ঘোষাল মন্তব্য করেন ।।