এইদিন ওয়েবডেস্ক,হাওড়া,১২ মে : কংগ্রেসের ভ্রষ্টাচার-পরিবারবাদ- তুষ্টিকরণ এবং বামপন্থীদের অত্যাচার আর নৈরাজ্যের সংমিশ্রণ হল তৃণমূল-বলে মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে আজ বিকেলে হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি এই মন্তব্য করেছেন । প্রধানমন্ত্রী বলেন,’একদিকে কংগ্রেসের ভ্রষ্টাচার, পরিবারবাদ এবং তুষ্টিকরণ – অন্যদিকে বামপন্থীদের অত্যাচার আর নৈরাজ্য এইসব কিছুকে যদি একজোট করা হয় তাহলে জন্ম হয় তৃণমূলের ।’
এরপর কংগ্রেস,সিপিএম ও তৃণমূলকে নিশানা করে তিনি বলেন,’কংগ্রেস বামপন্থী এবং তৃণমূল মিলে বাংলার কিভাবে সর্বনাশ করেছিল তার প্রমাণ হচ্ছে এই হাওড়া । একটা সময় ছিল যখন হাওড়ায় শিল্পহাব ছিল। এখানকার মিল….এখানকার কারখানা….কি ছিল না এখানে । কিন্তু প্রথমে বামপন্থী এবং পরে তৃণমূল এখানকার সমস্ত কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে । এখানকার রেডিমেড গার্মেন্টস সেক্টর সংঘর্ষ করছে । কৃষক বাজারে ফসল বিক্রি করতে পারছে না । কারণ ওখানে তৃণমূলের তোলাবাজরা কব্জা করে রেখেছে । তোলা বাজদের কমিশন দেওয়া না পর্যন্ত কেনা বা বিক্রি করা যায় না ।’
নরেন্দ্র মোদী বলেন,’আজ তৃণমূল লুটতরাজের জন্য দুটো ডিপার্টমেন্ট চালু করেছে । তৃণমূলে নেতাদের কাজ হল গন্ডগোল করা । আর তৃণমূলের গুন্ডাদের কাজ হল জমি দখল করা । আর এই সবকিছু হচ্ছে সরকারের ছত্রছায়ায় । সরকার কি করছে ? গন্ডগোল ।’ দুর্নীতি ইস্যুতে তিনি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে বলেন,’তৃণমূল দুর্নীতিকে ফুল টাইম বিজনেস করে নিয়েছে । কংগ্রেস, বামপন্থী বা ইন্ডি জোটের কমন ক্যারেক্টার হল দুর্নীতি । ইন্ডি জোটের বেশিরভাগ দল গোপনে দুর্নীতি করে । কিন্তু তৃণমূল দুর্নীতির ওপেন ইন্ডাস্ট্রি চালায় ।এখানকার লটারি দুর্নীতি এর উদাহরণ । বাংলার জনতা এই লটারি দুর্নীতিতে নিজেদের অর্থ খুইয়েছে । এখন বাংলার যুব সম্প্রদায় এই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে । এই লটারি দুর্নীতির পিছনে রয়েছে তৃণমূলের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা । এই চক্র বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত । কিন্তু তৃণমূল সরকার তাদের বাঁচাচ্ছে ।’
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন,’কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ লুটতরাজের পুরো চেষ্টা করে যাচ্ছে তৃণমূল । যারা দলের সঙ্গে যুক্ত অথবা নেতাদের যারা কাটমানি দেয় একমাত্র তাদেরেই আবাস যোজনার ঘর দেয় তৃণমূল ।’ প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, জল জীবন মিশন প্রকল্পেও ভ্রষ্টাচার করছে তৃণমূল । রাজনৈতিক ফায়দার জন্য এরা সাধারণ মানুষকে জলের জন্যও কষ্ট দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ।
পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ নিয়েও রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে তুলোধুনো করেন প্রধানমন্ত্রী । তিনি বলেন,’তৃণমূলের লক্ষ্য আপনাদের কল্যাণ নয়, বরঞ্চ অনুপ্রবেশকারীদের স্বার্থ সিদ্ধি করা । দেশের লোকেদের এরা বহিরাগত বলে কিন্তু অন্য দেশ থেকে আশা লোকেদের আশ্রয় দেয় । এই সমস্ত অনুপ্রবেশকারীরা বাংলার জন্য বিপদজ্জনক । ভোট ব্যাংকের রাজনীতি করতে গিয়ে কংগ্রেস, বামপন্থী এবং তৃণমূল বাংলার পরিচয়কে নিলাম করে দিয়েছে। অনেক এলাকায় এখানকার লোক অল্পসংখ্যক হয়ে গেছে । তৃণমূলের এমএলএ প্রকাশ্যে হিন্দুদের হুমকি দিচ্ছে । ও বলছে এখানে হিন্দু সংখ্যা কম আমি হিন্দুদের ভাগীরথীতে ঢুবিয়ে দেবো । আর তৃণমূল ওকে বাঁচাচ্ছে ।’
তিনি বলেন,’আগে রাজনৈতিক দলগুলো আপনাদের ভোট তো নিয়ে নিত কিন্তু সরকারে আসার পর ওদের ভাষা বদলে যেতে । আপনার নেতাদের কাছে গেলে চিনতে পারত না । এই ভাবনা, এই আচরণ মোদী বদলে দিয়েছে ।’ ভাষণের শুরুতে বেলুড় মঠকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নরেন্দ্র মোদী বলেন,’মোদী যা কিছু হয়েছে এই তপভূমির আশীর্বাদেই হয়েছে৷ এখন আমার জীবনের লক্ষ্য আরও বেড়েছে । আমার জন্য নয়,আপনাদের জন্য,আপনাদের সন্তানের জন্য । আমার জন্য নয়, ভবানীর জন্য । সংকল্প আরও উঁচু হয়েছে । ভোট আসবে যাবে, কিন্তু আপনারা যা ভালবাসা আমাকে দিয়েছেন তো অমৃতের স্বাদ নিয়ে এসেছে আমার জন্য । পরমাত্মা মোদীর জন্ম দিয়েছে গরিবের সেবা করার জন্য ৷’।