এইদিন ওয়েবডেস্ক,বালুরঘাট,১৬ এপ্রিল : সোমবার কোচবিহারের জনসভায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন যে রামনবমী হলো ওদের দাঙ্গা করার দিন । তিনি মুসলমানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যে ওরা গালাগালি করলে আপনারা সাড়া না দিয়ে আল্লাহর নাম করবেন এবং ওদেরকে চলে যেতে দেবেন । মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে অনেকেই ‘উসকানিমূলক’ বলে মন্তব্য করেছেন । আজ বালুরঘাটে নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিতে এসে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী অভিযোগ করেন যে ‘রামনবমী আটকানোর সমস্ত রকমের ষড়যন্ত্র করেছে তৃণমূল ।’ তিনি বলেন, ‘রামনবমী গুরুত্বপূর্ণ, নববর্ষও গুরুত্বপূর্ণ আর নবরাত্রিও গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রথম রামনবমী যেখানে অযোধ্যায় রামলালা বিরাজমান। আমি জানি, তৃণমূল প্রত্যেকবারের মতো এখানে রামনবমী আটকানোর জন্য সব ষড়যন্ত্র করেছে, কিন্তু জয় সত্যেরই হয়েছে। এই কারণে আদালতের থেকে অনুমতি মিলেছে। কাল রামনবমীর শোভাযাত্রা বের হবে ।’
আজ উত্তর দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটের রায়গঞ্জে দলীয় প্রার্থী সুকান্ত মজুমদারের সমর্থনে জনসভা করতে আসেন প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী । রামনবমী ইস্যুতে রাজ্যের মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের নেতিবাচক মানসিকতার তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলায় কীসের অনুমতি পাওয়া যাবে, কীসের পাওয়া যাবে না। সেটা তৃণমূলের তোলাবাজরা ঠিক করে, প্রশাসন ঠিক করে না। এখানে রামনবমীর শোভাযাত্রা করার অনুমতি পাওয়া যায় না। কিন্তু যারা রামনবমী আর দুর্গাপূজার শোভাযাত্রায় পাথর ছোঁড়ে, তাঁদের পাথর ছোঁড়ার অনুমতি আছে ।’
প্রসঙ্গত সাম্প্রতিক সময়ে হাওড়ায় তৃণমূলের এক নেত্রী ও পূর্ব বর্ধমান জেলার তৃণমূলের এক বিধায়কের মুখে বাংলাদেশীদের দেদার ভোটার কার্ড করে দেওয়ার কথা বলতে শোনা গেছিল । যা ঘিরে তোলপাড় পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে । আজ বালুরঘাটের জনসভাতেও সিএএ-এর বিরোধিতা ও বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য তৃণমূল সরকারকেই কার্যত দায়ি করেন প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ‘আজ বাংলার যে সব ভাইবোন বিভাজনের শিকার, দেশভাগের শিকার, তাঁদের তৃণমূল নাগরিকত্ব দেওয়ার বিরোধিতা করে তৃণমূল। অথচ, বাংলাদেশি-রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ কারীদের ঢুকিয়ে বাংলার জনবিন্যাস এবং আইনশৃঙ্খলা নষ্ট করার অনুমতি দিয়ে রেখেছে। এরা নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক বাড়ানোর জন্য বাংলার ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিচ্ছে ।’
কয়েক বছর আগে বালুরঘাটে বিজেপির এক বুথ সভাপতিকে হত্যার প্রসঙ্গও তোলেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি আরো বলেন, ‘সদ্য পয়লা বৈশাখ উদযাপন হল । আগামীকাল রামনবমীর উদযাপন হবে । আর আজ রায়গঞ্জে আপনাদের এই বিপুল সংখ্যায় উপস্থিতি প্রমাণ করছে যে নতুন বছর নতুন আশা নিয়ে এসেছে । আজ সবাই বলছে যে ৪ জুন ৪০০ পার । আবার একবার মোদি সরকার ।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন,’বিজেপির সংকল্পপত্র মোদীর গ্যারান্টি । আগামী পাঁচ বছরের মোদীর গ্যারান্টি হল আবাস যোজনায় ৩ কোটি মানুষকে ঘর দেওয়া । বাংলায় বন্দেভারত ও অমৃত ভারত ট্রেনের বিস্তার করা । ৭০ বছরের অধিক বয়সের প্রত্যেককে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হবে । আর রোগ লুকিয়ে রাখার দরকার নেই, হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, আপনাদের এই ছেলে দিল্লিতে বসে আছে, সেইই চিন্তা করবে সবকিছু ।’
প্রধানমন্ত্রীর বলেন,’আমার স্বপ্ন হল পূর্ব ভারতে বুলেট ট্রেন চালানো । বাংলার মহিলাদের আত্মনির্ভর করা, যুবকদের ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দান হলো মোদির গ্যারান্টি ।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন,’বিজেপি সরকার অনেক কিছু করেছে, বাংলার ৫০ লক্ষ ঘর তৈরি করে দিয়েছে, ৮০ লক্ষ মানুষের বাড়িতে জল জীবন মিশনের আওতায় পানীয় জল পৌঁছে দিয়েছে, উজ্জ্বলা যোজনায় মহিলারা রান্নার গ্যাস পেয়েছেন, জনধন যোজনায় পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করে দিয়েছে, বাংলার ছয় কোটি মানুষকে বিনামূল্যের রেশন দিচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী গ্রামসড়ক যোজনায় ২০ হাজার কিলোমিটারের অধিক সড়ক নির্মাণ করেছে, এই তালিকা এত বড় যে বর্ণনা করতে গেলে কয়েক ঘন্টা লেগে যাবে ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১০ বছরে যা হলো ওটা ট্রেলার ছিল । এখন আমাদের দেশ ও বাংলাকে অনেক আগে নিয়ে যেতে হবে ।’ সেই সাথে রাজ্যের প্রাক্তন কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট এবং বর্তমান তৃণমূল সরকারের সমালোচনা করে বলেন,’এত বছর যারা বাংলার শাসন করেছে তারা বাংলাকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। তবে আপনাদের একটা কথা বলতে চাই যে বাংলার উন্নয়ন হল মোদীর অগ্রাধিকার ।’।