দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১৫ ফেব্রুয়ারী : ২০১৯ সালের লোকসভা ও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে পরিস্থিতি খুব একটা সুবিধাজনক নয় । তার উপরে উঠছে উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন । ফলে এবারের পুরসভা নির্বাচনে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় ব্যাকফুটে রয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস । আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারী ভোট । বিদায়ী পুর প্রশাসক, কাটোয়ার বিধায়ক তথা পূর্ব বর্ধমান জেলার দলীয় সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে সামনে রেখে এবারে পুরসভায় লড়াই করছে তৃণমূল । কিন্তু লড়াইটা খুব একটা সহজ হবে না বলে অনুমান । কারন তৃণমূলের ঠিক ঘাড়ের উপরেই নিশ্বাস ফেলছে বিজেপি । পরিস্থিতি আঁচ করে প্রচারে ঝাঁঝও বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবির । এখন রাজ্যের চার পুরনিগমের মত কাটোয়া পুরসভাতেও তৃণমূল জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারে কিনা সেই দিকে তাকিয়ে আছেন রাজনৈতিক মহল ।
কাটোয়া বিধানসভা কেন্দ্রটি ৩৮ নম্বর বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত । ২০১৯ সালের লোকসভায় তৃণমূল জয়লাভ করলেও কাটোয়ায় বিজেপির কাছে কড়া প্রতিদ্বন্দিতার মুখে পড়তে হয়েছেল । সেবার কাটোয়া পুরসভার মোট ২০ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১,৩,১০,২০,১৪,৪, ১২, ৭,২,৬, ১৮, ৫,১৭ ও ১৬ -এই ১৪ টি ওয়ার্ডে জয়লাভ করেছিল বিজেপি । অবশ্য পরবর্তী ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ১৬,৪,৬,১৭ ও ৫ এই ৫ টি ওয়ার্ড তৃণমূল পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল । কিন্তু তা সত্বেও বিজেপি জিতেছিল অর্ধেকের কাছাকাছি ওয়ার্ড । আর এই ফলাফল ভাবাচ্ছে শাসকদলকে ।
এর উপরে রয়েছে পুর এলাকার উন্নয়ন নিয়ে ক্ষোভ । এই বিষয়ে তৃণমূলের মূল প্রতিপক্ষ বিজেপি বিশেষ করে এই বিষয়ে সরব হয়েছে । পূর্ব বর্ধমান জেলায় বিজেপির সাংগঠনিক কাটোয়া জেলার সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘কাটোয়া রেলস্টেশনের পাশে শহর ঢোকার মুখেই ফ্লাই ওভার নির্মানের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে দাবি উঠছে । সেই সঙ্গে ভাগীরথীর উপর কাটোয়া ও নদীয়া জেলার মধ্যে সংযোগকারী একটি সেতু নির্মানের দাবিও দীর্ঘ দিনের । অথচ তৃণমূলের এমপি,এমএলএ থাকা সত্ত্বেও সেই দাবি আজও পূর্ণ হল না । বিশেষ করে সেতুটি নির্মান করা হলে পূর্ব বর্ধমান ও নদীয়া জেলার মধ্যে দূরত্ব অনেক কমে যেতো । দুই জেলার মানুষই অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হতেন । কিন্তু হয়নি । কারন,তাতে ফেরিঘাট থেকে কাটমানি খাওয়া তৃণমূল নেতাদের চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে ।’
পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ,কাটোয়া শহরের নিকাশিনালাগুলি থেকে নির্গত নোংরা জল ক্রমাগত মিশে চলেছে গঙ্গা নদীতে । অথচ আজ পর্যন্ত গঙ্গাদূষণ রোধ করতে ‘মিশন ক্লিন গঙ্গা’ প্রকল্পের কাজ শুরু হল না । এছাড়া শহরের নিকাশি ব্যাবস্থা, পানীয় জলের সমস্যা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে গোপালবাবু বলেন, ‘নিকাশি ব্যাবস্থা যথাযথ না থাকায় ফি বছর বর্ষায় একাধিক ওয়ার্ড জলে ডুবে যায় । কিন্তু আজ পর্যন্ত এর কোনও সুরাহা হল না ।
তৃণমূলের নেতারা আবাস যোজনায় কাটমানি খাওয়া নিয়ে যতটা আগ্রহী ততটা এলাকার উন্নয়ন নিয়ে আগ্রহী নয় । এবারের পুরভোটের নির্বাচনে এর জবাব পুরবাসী দিয়ে দেবে ।’
যদিও অনুন্নয়ন ও দূর্নীতির অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন,২০১৫ সাল থেকে পুর এলাকায় প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে । চাইল্ড পার্ক, এলাকার সৌন্দর্যায়ন,ফুটপাথ নির্মানসহ প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে । আর এই উন্নয়নই তাঁদের জয়ের চাবিকাঠি হবে বলে দাবি করেছেন কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ।।