এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১২ জুলাই : পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস অনার্সের মডার্ণ ন্যাশনালিজম ইন ইন্ডিয়া বিষয়ে ষষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষায় ১২ নম্বর প্রশ্নে বিপ্লবীদের সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। যা নিয়ে তোলপাড় চলছে রাজ্যে । দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা মহান দেশপ্রেমিকদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা দেওয়ায় নিন্দার ঝড় উঠেছে ।বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রশ্নকর্তাকে “মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর অবৈধ সন্তান বা সূরাবর্দির অনুগামী” বলে অবিহিত করে জানিয়েছিলেন যে তিনি তার নাম প্রকাশ্যে আনবেন ।
অবশেষে গতকাল এই বিতর্কে কিছু প্রমাণসহ তথ্য প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছেন নিজের এক্স হ্যান্ডেলে । তিনি ২০২৩ ও ২০২৫ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের ষষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পোস্ট করেছেন । যাতে সেই একই প্রশ্ন করা হয়েছে : “মেদিনীপুরের তিনজন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের নাম করো যারা সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা নিহত হন ?” সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক দীপক কুমার কর,মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক সুজয় হাজরা ও WBCUPA-র সম্পাদকের একটা ছবি পোস্ট করেছেন ।
শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ ২০২৫ সালের ইতিহাস অনার্সের ষষ্ঠ সেমিস্টারের প্রশ্নপত্রে মেদিনীপুরের সাহসী বীর বিপ্লবীদের “সন্ত্রাসবাদী” আখ্যা দিয়ে পরম পূজনীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আবারও অপমান করেছে। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস কে ইচ্ছাকৃত ভাবে বিকৃত করার প্রয়াস। এই একই প্রশ্ন ২০২৩ সালেও ইতিহাস বিভাগের প্রধান; অধ্যাপক ডঃ নির্মল কুমার মাহাতোর তত্ত্বাবধানে স্নাতক স্তরের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ইতিহাস পরীক্ষায় করা হয়েছিল। তাই এটাকে একই লজ্জাজনক ভুলের পুনরাবৃত্তি ভাবাটা ঠিক হবে না।’
তিনি লিখেছেন,’ডঃ মাহাতো ইতিহাস বিভাগের প্রধান হওয়ার সাথে সাথে তৃণমূল কংগ্রেস অনুমোদিত WBCUPA-র (ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি প্রফেসরস অ্যাসোসিয়েশন) একজন সম্মানীয় সদস্য; যা অধ্যাপকদের নিয়ে গঠিত টিএমসি’র রাজনৈতিক সংগঠন। আশ্চর্যজনকভাবে, ডঃ মাহাতোর বারংবার তত্ত্বাবধানে ব্যর্থতার সত্ত্বেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং, ২০২৩ সালের ভুলের পর তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে, তিনি WBCUPA-র যুগ্ম সম্পাদক পদে উন্নীত হয়েছেন!’
স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের পাতা থেকে উল্লেখ করে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’যাঁরা অবগত নন, তাঁদের জন্য: ১৯৩১ সালের ৭ এপ্রিল, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেমস পেডিকে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে গুলি ছুড়ে হত্যা করেন বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্ত, জ্যোতিজীবন ঘোষ। একবছর পর ১৯৩২ সালের ৩০ এপ্রিল, আর এক ম্যাজিস্ট্রেট রবার্ট ডগলাসকে জেলা বোর্ডের অফিসে ঢুকে হত্যা করেন বিপ্লবী প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য, প্রভাংশুশেখর পাল। পরের বছর ১৯৩৩-এর ২ সেপ্টেম্বর, মেদিনীপুরের একটি মাঠে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বার্নাড ই জে বার্জকে খুন করে বিপ্লবী অনাথবন্ধু পাঁজা, মৃগেন দত্ত, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায় ও নির্মলজীবন ঘোষ। প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য, রামকৃষ্ণ রায়, নির্মলজীবন ঘোষ ও ব্রজকিশোর চক্রবর্তীর ফাঁসি হয়েছিল। বিমল দাশগুপ্ত, জ্যোতিজীবন ঘোষ, প্রভাংশুশেখর পালের কারাদণ্ড হয়েছিল। বার্জকে হত্যা করার পরে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই অনাথবন্ধু পাঁজা মৃত্যু বরণ করে শহিদ হন। পরের দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহিদ হন মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত। উল্লেখ্য, এই তিন অত্যাচারী জেলাশাসকের সমাধি এখনও মেদিনীপুর শহরের সেখপুরার গির্জাপ্রাঙ্গণে রয়েছে, যা স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস কে স্মরণ করিয়ে দেয়। অন্যদিকে, মেদিনীপুর শহর-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে এই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এবং তাঁরা আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়।’
বিরোধী দলনেতা লিখেছেন,’ডঃ নির্মল কুমার মাহাতোর এই সাংগঠনিক উত্থান ও রাজনৈতিক আশ্রয় কি তৃণমূলের আশ্বাস ও সাহায্যেই, তাই তিনি বলিষ্ঠ হয়ে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সন্ত্রাসবাদী বলছেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া ও শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে? ইংরেজ শাসকরা ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে দাগিয়ে দিতো। স্বাধীনতার এত বছর পরেও নিজের দেশের এক প্রদেশের শাসক দলের রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য কোন দুঃসাহসে বিপ্লবীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে? এটি প্রতিটি ভারতীয়ের জন্য অসম্মানজনক।আমি অবিলম্বে ড. মাহাতোর অপসারণ এবং এই প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’।

