প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৬ ফেব্রুয়ারী : পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষন এখনও ঘোষণা করেনি lরাজ্যের নির্বাচন কমিশন। তবে তার আগে থেকেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও গোলা গুলিতে তপ্ত হয়ে উঠলো পূর্ব বর্ধমানের রায়না।প্রতিহিংসায় এক তৃণমূল সমর্থক বৃদ্ধ ও তাঁর ছেলেকে মারধর করার পর পায়ে গুলি করে জখম করার অভিযোগ উঠলো অপর গোষ্ঠীর একদল যুবকের বিরুদ্ধে।আক্রান্তদের নাম বাদল সিং (৭০) ও মৃগাঙ্ক সিং ওরফে লালন (৪০)। বুধবার রাতে রায়নার নতু গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন শুকুর গ্রামের এই ঘটনার জেরে উত্তেজনা চরমে পৌছেছে শুকুর গ্রামে। ঘটনার পর বুধবার রাতেই গুলিবিদ্ধ বাবা ও ছেলেকে উদ্ধার করে বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয় ।
এদিকে এই ঘটনার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁষছেন শুকুর গ্রামের বাসিন্দারা।উত্তেজনা থাকায় গ্রামে মোতায়েন রাখা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। ঘটনার পরেই তিন অভিযুক্ত গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। জেলার পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন জানান,’ঘটনার সময়ে তরুণ রায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত আগ্নেআস্ত্র ব্যবহার করেছিল বলে খবর মিলেছে’। এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী জানিয়েছেন,’ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের সন্ধান চালানো হচ্ছে।অপ্রীতিকর ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর যাতে না ঘটে তার জন্য গ্রামে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে ।’
দেখুন ভিডিও 👇
গুলিবিদ্ধ মৃগাঙ্ক সিং এর স্ত্রী মুনমুন সিং বৃহস্পতিবার বলেন,আমার স্বামী সহ শ্বশুর বাড়ির সবাই তৃণমূল কংগ্রেস পার্টি করেন।পরিবারের সবাই কৃষিজীবী । বুধবার দুপুরে আমার স্বামী গ্রামের অপর এক চাষির কাছ যায় সাবমার্সিবেলে জলসেচের খরচের টাকা আনতে যায় ।সেই টাকা নিয়ে আমার স্বামী যখন বাড়ি ফিরছিল সেই সময়ে তার পথ আটকায় বিধানসভা ভোটের পর বিজেপি থেকে তৃণমূল হয়ে যাওয়া এলাকার বাসিন্দা তরুণ রায় ,হেমন্ত মাঝি ও সৌমেন রায় । এই তিনজন আমার স্বামীকে ব্যাপক মারধোর করে। চিকিৎসা করিয়ে এই মারধোরের কথা রায়না থানায় জানায় আমার স্বামী মৃগাঙ্ক সিং । কিন্তু চিকিৎসকের লিখেদেওয়া কয়েকটি ওষুধ তখন স্থানীয় ওষুধের দোকানে না মেলায় রাত ৯ টা নাগাদ শ্বশুর মশাইকে সঙ্গে নিয়ে আমার স্বামী ওই ওষুধ কিনতে যায় । তখন ফেরই ওই তিনজন আমার স্বামী ও স্বশুর মশাইয়ের উপর চড়াও হয় । মারধোর শুরু করে । এর পর আগ্নেআস্ত্র বের করে আমার স্বামী ও বৃদ্ধ শ্বশুর মশাইয়ের পায়ে গুলি চালিয়ে জখম করে। খবর পেয়ে রায়না থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে আমার স্বামী ও শ্বশুর মশাইকে উদ্ধার করে বর্ধমান হাসপাতালে পাঠায় । তাঁর স্বামী মৃগাঙ্কর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক বলে মুনমুন সিং জানিয়েছেন।
রায়না ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি বামদেব মণ্ডল ও
নতু গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্য সুশান্ত মণ্ডল
স্বীকার করেনেন, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই ঘটেছে এই ঘটনা। পঞ্চায়েত সদস্যের অভিযোগ, গুলি চালানোর ঘটনায় যে তিনজন জড়িত তারা ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের সক্রিয় ভাবে বিজেপি পার্টি করছিল। কিন্তু বিধানসভা ভোটে বিজেপির বাংলা জয় সফল হয় না । এর পরেই তিন অভিযুক্ত তরুণ রায়,হেমন্ত মাঝি ও সৌমেনরায় রায়নার তৃণমূল বিধায়ক শম্পা ধারার সঙ্গে যোগাযোগ করে রাতারাতি তৃণমূল হয়ে যায় ।পঞ্চায়েত ভোটের আগে এলাকায় আধিপত্য কায়েম করতেই ওই তিনজন ছয় রাউণ্ড গুলি চালিয়ে আদি তৃণমূল কর্মী পরিবারের বাবা ছেলেকে মারাত্মক ভাবে জখম করেছে বলে পঞ্চায়েত সদস্য সুশান্ত মণ্ডল অভিযোগ করেছেন । বামদেব মণ্ডল বলেন,’কারা কিসের স্বার্থে বিজেপির দুস্কৃতিদের তৃণমূলে জায়গা করেদিল তা জানি না । তবে এরজন্য রায়নায় দলের ক্ষতি হচ্ছে
বামদেব বলেন,আমি উচ্চ নেতৃত্বকে সব জানিয়েছি ।’
নতু অঞ্চলের তৃণমূলের কর্মীরা দাবি করেন,রায়নায় এখন ব্লক তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বামদেব মণ্ডল ও বিধায়ক শম্পা ধারার গোষ্ঠীর লড়াই চরমে উঠেছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের উচ্চ নেতৃত্ব এতে লাগাম না পরালে এমন ঘটনা আরো বাড়বে বলেই তাঁরা মনে করছেন। অনদিকে পলাতক অভিযুক্ত তরুণ রায়ের মা গরবিনি য়ায়ও স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই তাঁদের গ্রামে অশান্তির ঘটনা ঘটেছে।
বিধায়ক শম্পা ধারা ও জেলা তৃণমূলের সভাপতি
তথা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় কে একাধিক বার ফোন করা হলেও তাঁরা ফোন না ধরায় তাঁদের কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি । তবে দলের রাজ্যের মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন ,’ঘটনার কথা শুনেছি। দলের উচ্চ নেতৃত্বের কাছেও ঘটনার সবিস্তার খবর পৌছেচে। উচ্চ নেতৃত্ব এই বিষয়ে যা পদক্ষেপ নেওয়ার নেবেন’। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’সবেতো শুরু।পঞ্চায়েত ভোট ঘোষনার পর তৃণমূলের এমন গোষ্ঠী লড়াইে শুধু রায়না নয়, গোটা রাজ্য রক্তাত হবে ।’।