জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বর্ধমান,২৯ সেপ্টেম্বর :
অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, অবশেষে সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ২৮ শে সেপ্টেম্বর তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন ব্লকের ব্লক সভাপতি সহ অন্যান্য পদাধিকারীদের নাম ঘোষণা করে। যেকোনো রাজনৈতিক দলের পদাধিকারী নিয়োগ খুব স্বাভাবিক ঘটনা হলেও এক্ষেত্রে তাৎপর্য যথেষ্ট। অনেকের নজর ছিল তিনটি ব্লকের দিকে ।
পূর্ব বর্ধমান জেলায় হলেও দীর্ঘদিন ধরে আউসগ্রাম, মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামের দলীয় সংগঠনের কাজ পরিচালিত হতো বীরভূম থেকে, বলা ভাল অনুব্রত মণ্ডলের নেতৃত্বে। তিনিই ছিলেন শেষ কথা। কার্যত তিনি রাজ্য নেতৃত্বকেও খুব একটা গুরুত্ব দিতেন না। তার প্রমাণ বারবার পাওয়া গ্যাছে। এই তিনটি ব্লকে শুধু মূল সংগঠন নয় শাখা সংগঠনের ক্ষেত্রেও তিনিই ছিলেন শেষ কথা। তার দাপটে বিরোধী সিপিএম বা বিজেপি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারত না। এমনকি এখনো বিরোধীরা নিষ্প্রভ । তাঁর কার্যপদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তিনি যে একজন দক্ষ সংগঠক এটা নিয়ে তর্কের কোনো অবকাশ নাই। দুর্দান্ত প্রতাপ সিপিএমের চোখে চোখ রেখে তিনি তিল তিল করে তৃণমূলের সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন – এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। সেই অনুব্রত মণ্ডল আজ জেলে এবং গত ১৪-১৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের জন্য তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব সরাসরি এই তিনটি ব্লকে দলীয় নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটালো।
দক্ষিণপন্থী দলে দলীয় পদই মর্যাদার ক্ষেত্রে শেষ কথা। স্বাভাবিক ভাবে যারা পদ হারালো, প্রকাশ্যে যাই বলুক, তাদের মধ্যে একটা ক্ষোভ থাকবেই। তার ইঙ্গিত একটা পাওয়া যাচ্ছে। আউসগ্রাম, মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামে কতটা বিক্ষোভ হবে সেটাই আলোচনার বিষয়। কারণ তৃণমূলের অনেক পদাধিকারী নিজেদের যোগ্যতায় নয়, অনুব্রত মণ্ডলের বদান্যতায় পদ পেয়েছিলেন । এরপর অঞ্চল সভাপতি নির্বাচন। শোনা যাচ্ছে পদ হারানোর আশঙ্কায় অনেকেই নাকি ‘ছোটাছুটি’ শুরু করেছেন ।
তবে পদাধিকারী পরিবর্তনের টাইমিংটা কিন্তু চমৎকার। সামনে দুর্গাপুজো। সেই সময় যদি কেউ বিক্ষোভ দেখাতে চায় মনে হয় না পুলিশ প্রশাসন অনুমতি দেবে না । পরে ক্ষোভ থাকবে না । পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এর উল্টোদিকও আছে। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। পদ হারানো নেতারা তখন অন্তর্ঘাত করতে পারে। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের সমূহ বিপদ। একে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত দূর্নীতি নিয়ে দল নাজেহাল, তারপর যদি পদ নিয়ে বিক্ষোভ হয় তাহলে তো সোনায় সোহাগা । এখন দেখার বিষয় পরিবর্তন এই তিনটি ব্লকে তৃণমূলের পক্ষে কতটা সুখবর আনতে পারে ।।