এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৯ মার্চ : নবদ্বীপ থেকে বালুরঘাটগামী ‘বালুরঘাট এক্সপ্রেস’ ট্রেনে সফর করার সময় ফারাক্কার তোফাপুর গ্রামের বাসিন্দা মাফিকুল ইসলাম নামে এক বৃদ্ধ ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ভাবে শরীরের ছবি তোলার অভিযোগে এক তরুনী সহযাত্রী তাকে মুহুর্মুহু চড় কষিয়ে দেয় । এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ওই বৃদ্ধের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ এবারে বৃদ্ধের পাশে দাঁড়িয়ে তরুনীকেই কাঠগড়ায় তুললো সিপিএম । আজ সিপিএমের মুখপত্র ‘গনশক্তি’ পত্রিকায় এই সংক্রান্ত একটা প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে৷ প্রথম পাতার ‘লিড নিউজ’ প্রতিবেদনের হেডলাইন হল : “ট্রেনে এলোপাথাড়ি মার,ভিডিও বানিয়ে বিদ্বেষ ছড়ানো হল সমাজমাধ্যমে” ।
প্রতিবেদনের ইনট্রোতে লেখা হয়েছে,’চলন্ত ট্রেনের মধ্যে এক মাঝবয়সি যাত্রীর ওপর চড়াও হয়ে বেপরোয়া চড় মেরে যাচ্ছেন এক মহিলা। মুখে কুৎসিত ভাষ্য। চলন্ত ট্রেন থেকেই সেই আক্রমণের ভিডিও তৈরি হয়ে গেল। সেখানেই থামলো না। দাড়িওলা মানুষটির ওপর আক্রমণের সেই ভিডিও মুহুর্তে ছড়িয়ে পড়ল সমাজমাধ্যমে। সেই ভিডিও নিয়ে ট্যুইট করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তারপর থেকে ফেসবুক জুড়ে শুরু হয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে একের পর এক বিষ জড়ানো মন্তব্য।’ লেখা হয়েছে,’বিজেপি শাসিত রাজ্যের ঘটনা নয়। দু’দিন আগে ধুলিয়ান স্টেশন জোরে ট্রেনে উঠেছিলেন ফরাক্কার তোফাপুর আামের বাসিন্দা মফিদুল ইসলাম। তাঁর সহযাত্রী ছিলেন গ্রামেরই হিন্দু পরিবারের পাঁচ, সাত জন। তাঁরা ছিলেন ট্রেনের অন্য কামরায়। বাফদুল ইসলাম একাই ছিলেন ট্রেনের আলাদা কামরায়। আচমকাই তাঁর ওপর বেপরোয়া আক্রমণ শুরু করেন এক মহিলা যাত্রী। অভিযোগ, মাফিদুল ইসলাম তাঁর ভিডিও করছেন। কিন্তু এলোপাতাড়ি আক্রমণের মধ্যেই টেনের মেঝেতে আছাড় মেরে ভেঙে দেওয়া হয় মফিদুল ইসলামের ফোনটিকে। কেড়ে নেওয়া হয় তাঁর ব্যাগ। চোখ থেকে চশমা খুলে ট্রেনের মেঝেতে ফেলে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর কুৎসিত মুখের ভাষার সঙ্গে এক বয়স্ক যান্ত্রীর গালে পড়তে থাকে থাপ্পরের পর থাপ্পর । মারার কারণ বুঝতে পারছিলেন না তিনি। কোনও সহযাত্রীর কাছ থেকে সহায়তা না পেয়ে একসময় নিজেকে বাঁচানোর তাগিদে মাফিদুল ইসলাম বলেন, “আমার অন্যায় কী ম্যাডাম। আমার কোনও ভুল হয়ে থাকলে পুলিশের হাতে তুলে দিন।”
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে,’সপ্তাহ খানেক আগেই হাওড়ার উলুবেড়িয়াতে আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে একযোগে বৈঠকে বসেছিল সঙ্ঘ ও রাজ্য বিজেপির নেতারা। তারপর থেকে বিভাজনের রাজনীতির ক্রমশ চড়াচ্ছে বিজেপি। এরমধ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা মন্ত্রীর গাড়ির নিচে ছাত্র গিষে মারার ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে ওঠে ছাত্ররা। পরে নামে নাগরিক সমাজও। আরজি কর হাসপাতালের নৃশংস ঘটনার পর রাজ্যে…..।’ প্রতিবেদনের মাঝে বড় হরফে লেখা হয়েছে,’আতঙ্কিত পরিবার চাইছে, আইনের পথেই ভরসা রাখতে’ ।
ওই পত্রিকার প্রতিবেদনের কপি স্যাফ্রন কলকাতা নামে একটি ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়েছে । প্রতিক্রিয়ায় লেখা হয়েছে,’ভিকটিম ব্লেমিং কাকে বলে গণশক্তির থেকে শিখুন। নারীবাদ, প্রগতিশীলতার আড়ালে মুখোশ একেবারে খুলে গেলো কারণ কালপ্রিট একটি বিশেষ ধর্মের। গা ঘিনঘিন করছিল, লিখতে টিখতে বিশেষ পারি না, নিচের লেখাটা Soham Paul এর -ভিক্টিম ব্লেমিং বলে একটা কথা আছে। যার মোদ্দা বক্তব্য, নারীরা যেহেতু সামাজিক ক্ষমতা সমীকরণে পিছিয়ে আছেন, কাজেই যৌন হেনস্থা-নির্যাতন-হিংসার অভিযোগ এলে প্রাথমিকভাবে নারীর বয়ানটিতে বিশ্বাস রাখা। অভিযোগকারিণীর দিকে আঙুল তোলা অসঙ্গত। প্রগতিশীল নাগরিক বামদের জারগনে যায় বিভাবরী ধরনের লেখালিখিতে এই টার্মটা প্রায়শই দেখা যায়।’
লেখা হয়েছে,’আজ সিপিএমের পার্টি মুখপত্র ফার্স্ট পেজ নিউজে যে জিনিসটি করেছে, সেটি হল ভিক্টিম ব্লেমিংয়ের একটি আদর্শ উদাহরণ। ‘রোজাদার’ অভিযুক্ত কী করেছিলেন গোটা বাংলা দেখেছে, সহযাত্রিণীর বুকের দিকে ফ্রন্ট ক্যামেরা ঘুরিয়ে রেকর্ড করার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল। আজ গণশক্তি এই পার্ভার্ট মলেস্টারটিকে শহীদ বানিয়ে দিয়েছে। না, এটা শুধু ফেসবুকে কয়েকজন বোদ্ধার বক্তব্য নয় যে সেটাকে ‘পার্টির অফিশিয়াল লাইন নয়’ বলে গা-বাঁচানোর চেষ্টা করা যাবে। এটা পার্টি মুখপত্রের ফার্স্ট পেজ নিউজ। যতজন নারী ট্রেনে বাসে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে এই ধরনের ঘটনার শিকার হন, এবং এখনও সিপিএম ভোটার, মনে রাখবেন আজ সকালে পার্টি আপনাদের পিঠে ছুরি মারল। কাল আরেকজন রোজাদার আপনার সঙ্গে এরকম করলে, আপনার বিরুদ্ধে নিউজ হবে।’
ওই পেজে লেখা হয়েছে,’অতীতে কী এই ধরনের ঘটনা হয়নি? হয়েছে। তাপসী মালিকের পোড়া দেহ খুঁজে পাওয়ার পরদিন গণশক্তি বিরাট খবর করেছিল ‘কেন সবটাই চক্রান্ত’ তা বুঝিয়ে। কিন্তু ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাসী’ সুহৃদ দত্ত ছিলেন পার্টির সম্পদ। দেবু মালিক তখনও পার্টিকর্মী। এখানে অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়কের কোলে চড়ে গিয়ে নির্যাতিতার নামে এফ আই আর করে এসেছেন। কিন্তু সিপিএম তার পক্ষে। তবুও কেন? কারণ তিনি রোজাদার। আপনার দিদিমা-মা-প্রেমিকা- বোন-মেয়ে-নাতনিদের ওই রেকর্ড করার ভিডিওটি দেখানোর পরে আজকের এই খবরটি অবশ্যই পড়ান। ৯ই মার্চ ২০২৫। গতকাল গিয়েছে নারীদিবস। আজ এই ফার্স্ট পেজ নিউজটি করল গণশক্তি। মহ-ম্মদ সেলিমের পার্টির মুখপত্র। নিরপেক্ষ নয়, রোজাদার মলেস্টারের পক্ষে।’।
