প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২২ সেপ্টেম্বর : রাজ আমলের রীতিমেনে প্রতিপদে সর্বমঙ্গলা মন্দিরে ঘট স্থাপন হতেই পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গেল বর্ধমানে।সোমবার প্রতিপদের দিন বর্ধমানের রাজাদের খনন করা কৃষ্ণসায়র জলাশয় থেকে জল ভরা হল ঘটে।প্রথা অনুযায়ী সেই ঘট এদিনই স্থাপন হবে সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দিরে।একই সাথে দেবীকে এদিন পরানো হবে রাজবেশ। এ সবের সাথে সাথে বর্ধমান সহ গোটা রাঢ়বঙ্গে দুর্গা পুজোর সূচনা হয়ে যায় বলেই মনে করা হয়ে আসছে।
বর্ধমানের রাজারা জন্মসূত্রে ছিলেন পাঞ্জাবী। পরে বধূ হিসেবে নানা রাজ্যের মেয়েরা এসেছেন রাজ পরিবারে। নানা সংস্কৃতি,লোকাচারের মিশেল হয়েছে এখানে।প্রতিবার প্রতিপদে শুরু হয় রাঢ়-জননী সর্বমঙ্গলার পুজো। আচার মেনে কৃষ্ণসায়র থেকে জল ভরা হয়। এরপর হয় ঘটস্থাপন। পুজো চলবে নবমী অর্থাৎ নবরাত্রি অবধি।
বহু প্রাচীন সর্বমঙ্গলা মন্দিরে অধিষ্ঠাতা দেবীকে অত্যন্ত জাগ্রত দেবী হিসাবেই মানেন গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলার বাসিন্দারা। কথিত আছে,’রাজা তেজচন্দের আমলে এই মন্দির নির্মাণ হয়েছিল’। মন্দির ঘিরে অনেক উপকথা আছে। চুনুরী বাড়ির মেয়েরা নাকি দেবীর পাষাণপ্রতিমায় গুগলি থেতো করতেন।স্বপ্নাদেশ পেয়ে দেবীকে এই প্রাচীন মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেবী দুর্গা এখানে সর্বমঙ্গলা রূপে পুজিতা হন। সারাবছরই তিনি বিরাজ করেন ।পুজোর চারদিন ষোড়শোপচারে দেবী আরাধনা হয় সর্বমঙ্গলা মন্দিরে। আগে মহিষ ও পাঁঠা বলি হত। এখন বলিদান বন্ধ হয়েছে। আগে সন্ধি পুজোর মহালগ্নে কামান দাগা হত।কিন্তু ১৯৯৭ এ বিস্ফোরণের পর থেকে সেই প্রথা বন্ধ হয়ে যায়।
চারপাশে বিশাল বাজেটের থিমের পুজোর ঘনঘটা যাই থাকনা কেন সর্বমঙ্গলা দেবীর আরাধনা ঘিরে ভক্তদের আবেগ এখনও একই রকম। পুজোর পাঁচদিন এখানে তিলধারণের জায়গা থাকে না। হাজারে হাজারে ভক্ত সমবেত হন। মাছের টক সহ নানা উপাচারে মায়ের ভোগ দেওয়া হয়। মালসাভোগ নিতে ভক্তরা ভিড় করেন। নবমীতে কয়েক হাজার মানুষকে ভোগ বিলি করা হয়।
এদিন সকালে পূজার্চনার পর মন্দির থেকে মায়ের রূপোর ঘট নিয়ে শোভাযাত্রা বের হয়। ঢাক সহ বিভিন্ন বাজনা নিয়ে ঘোড়ায় টানা রথের ওপর বিশেষ ছাতার তলায় ঘট নিয়ে বসেন পুরোহিতরা। বেশ খানিকটা পথ পরিক্রমা করে শোভাযাত্রা যায় কৃষ্ণসায়রে। সেখানে মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ঘট জলপূর্ণ করেন। এরপর তা নিয়ে এসে মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়।অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রশাসনের আধিকারিকরা।।