শুরু হয়ে গিয়েছে বাঙালি হিন্দুর বহুপ্রতীক্ষিত শারদোৎসব । আজ রবিবার মহাষষ্ঠী (Maha Shashthi 2025) । আজ দেবীর বোধন । অশুভ শক্তির বিনাশ করতে মর্ত্যে মা দুর্গাকে আবাহন করার দিন । মহালয়া থেকে শারদোৎসবের কাউন্টডাউন শুরু হলেও , শাস্ত্রমতে দুর্গাপুজো শুরু আজ থেকেই । আজ হবে দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা ।
“বোধন” শব্দটির অর্থ জাগ্রত করা । বোধনের একটা বিশেষ রীতি রয়েছে । ষষ্ঠীর সকালে প্রথমে কল্পারম্ভ দিয়ে শুরু হয় দুর্গার বোধন । এই প্রক্রিয়া ষষ্ঠীর সকালেই শুরু হয়ে গেছে । ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত যেন কোনও বিঘ্ন না ঘটে, তার জন্য দেবী দশভূজার সামনে প্রার্থনা করা হয় । এর পর ঘট ও জলে পূর্ণ একটি তামার পাত্র মণ্ডপের কোণে স্থাপন করা হয়। এই স্থানেই দেবীদুর্গা ও দেবীচণ্ডীর পুজো করা হয়। এর পর হয়, দেবীদুর্গার বোধন। ষষ্ঠীর দিন মা দুর্গার বোধন শুরু হয় আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যে দিয়ে ৷ বোধনের পর বিল্ব শাখার দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। অশুভ শক্তি দূর করার জন্য ঘটের চারপাশে তীরকাঠিতে সুতো জড়িয়ে আমন্ত্রণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এভাবেই ষষ্ঠীর আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে দুর্গাপুজো শুরু হয়ে যায়।
দেবীপক্ষে মহষষ্ঠীতে দেবী দুর্গাকে অকাল বোধন করে পুজো করেন প্রভু শ্রীরাম। দুর্গার বোধন ঘিরে নানা পৌরাণিক কাহিনি জড়িয়ে আছে । পৌরাণিক রীতি অনুযায়ী আজ মহাষষ্ঠীর দিনেই স্বর্গ থেকে মর্ত্যে পদার্পণ করেন দেবী দুর্গা। সঙ্গে থাকেন তাঁর চার সন্তান লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী। এদিন দুর্গার মুখের আবরণ উন্মোচিত হয়। মনে করা হয়, বোধনের পর প্রতিমার মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হয়।
অকাল বোধন কি?
বোধনই হল দেবীর অকাল বোধন । হিন্দু শাস্ত্র মতে সূর্যের উত্তরায়ন দেবতাদের সকাল। উত্তরায়নের ছয় মাসকে দেবতাদের এক দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। সকালে সমস্ত দেব-দেবীর পুজো করা হয়। আবার দক্ষিণায়ন শুরু হলে ছয় মাসের জন্য নিদ্রা যান সমস্ত দেব-দেবী। এই দক্ষিণায়ন দেবতাদের রাত। রাতে দেব-দেবীর পুজো করা হয় না। কিন্তু দক্ষিণায়নের ছয় মাসের মধ্যেই দুর্গাপুজো হয় বলে বোধনের মাধ্যমে আগে দেবী দুর্গাকে ঘুম থেকে তোলা হয়। পুরাণে এর সঙ্গে একটি কাহিনিও জড়িত। রাবণের সঙ্গে যুদ্ধের আগে দুর্গার বোধন করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। এর পর দুর্গার আরাধনা করে শক্তি ও সৌভাগ্যের প্রার্থনা করেন তিনি। অকালে দুর্গাকে জাগিয়ে তোলা হয়েছিল বলেই একে অকাল বোধন বলা হয়ে থাকে ।
শারদীয়া মহাষষ্ঠীর মূল মন্ত্র হল :
‘ওঁ জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোস্তুতে’।
এছাড়াও, আর একটি মন্ত্র হলো :
‘নমঃ সৃষ্টি স্থিতি বিনাশানাং শক্তিভূতে সনাতনী গুনাশ্রয়ে গুণময়ী নারায়ণী নমোহস্তুতে’।
এই মন্ত্রগুলি দেবীর কাছে সুস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করে ।এই মন্ত্রগুলি পাঠ করার মাধ্যমে দেবী দুর্গার উদ্দেশ্যে অর্ঘ্য নিবেদন করা হয়। এই মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে দেবীর কাছে আয়ু, আরোগ্য, বিজয়, সৌভাগ্য এবং সুখের জন্য প্রার্থনা করা হয়।
দুর্গার বীজ মন্ত্র :
“ওম হৃীং দুং দুর্গায়ৈ নমঃ”
কমপক্ষে ১০৮ বার এই মন্ত্র জপ করা উচিত। তবে ১০৮ বারের চেয়ে বেশিও করতে পারেন। এটি দুর্গার প্রিয় মন্ত্র। পুজোয় এই মন্ত্র উচ্চারণ জরুরি। আবার দুর্গা সপ্তশতী পাঠের আগে এই মন্ত্র জপ বা শ্রবণ করা উচিত। স্ফটিকের মালা ব্যবহার করে এই মন্ত্র জপ করবেন।এই মন্ত্র জপ করার আগে দেশী ঘিয়ের প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করুন। সম্ভব হলে নৈবেদ্য হিসেবে কোনও মিষ্টান্ন অর্পণ করুন।
এই বীজ মন্ত্রটি দুর্গা অষ্টাক্ষর মন্ত্র নামেও পরিচিত। এটি একটি সিদ্ধ মন্ত্র যা জপ করলে ব্যক্তির জীবনের সমস্ত সমস্যার সমাধান ঘটে। যে ব্যক্তি এই মন্ত্র জপ করেন তাঁকে স্বয়ং দুর্গা নিরাপত্তা প্রদান করেন। শাস্ত্র মতে এই মন্ত্র জপের সময় কাঁচা মেঝে, কাঠের চৌকী বা সুতির মাদুরে বসা উচিত। আবার পূর্ব বা উত্তর দিকে মুখ করে এই মন্ত্র জপ করবেন। তবে রাত্রি বেলা এই মন্ত্র জপ করলে মুখ থাকতে হবে শুধুমাত্র উত্তর দিকে। নির্জন স্থানে বা মন্দিরে বসে এই মন্ত্র জপ করলে অধিক লাভ পাওয়া যায়। মাথায় আঁচল বা রুমাল রেখে মন্ত্র জপ করবেন। কেউ যাতে আপনাকে মালা জপ করতে না-দেখে সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। নিয়ম মেনে যাঁরা দুর্গার বীজ মন্ত্র জপ করেন, তাঁরা শীঘ্র ফলাফল লাভ করেন। দেবী সর্বদা এই জাতকদের রক্ষা করেন।
শাস্ত্র মতে দুর্গার বীজ মন্ত্র অত্যন্ত প্রভাবশালী। এর ফলে ধন লাভ সম্ভব হয়। এ ছাড়াও ঋণ মুক্তি ঘটতে পারে। অর্থাভাবে দিন কাটালে দুর্গার বীজ মন্ত্র জপ করবেন। এই মন্ত্র শ্রবণ মাত্রেই ব্যক্তি বুদ্ধি ও সমৃদ্ধি লাভ করতে পারে।
সন্তান সুখে বঞ্চিত যে দম্পতিরা তাঁরা দুর্গার এই মন্ত্র জপ করুন। জপ করার আগে দুর্গাকে একটি নারকেল নিবেদন করুন এবং নিজের মনস্কামনা পূরণের প্রার্থনা করুন।