এইদিন ওয়েবডেস্ক,কালনা(পূর্ব বর্ধমান),০৩ নভেম্বর : বলিদানের মুহূর্তে দেবী নাকি বড় চঞ্চলা হয়ে পড়েন। তিনি মন্দির ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে চান। রুদ্ররূপী দেবীকে তখন শান্ত রাখাই দায় হয়ে পড়ে। পূর্ব বর্ধমান জেলার ধাত্রীগ্রামে প্রথা রয়েছে চঞ্চলাদেবীকে বশে আনতে মোটা লোহার শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। ধাত্রীগ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের কালীপুজোয় এই প্রথা শতাব্দীকাল ধরেই চলে আসছে। এই কালী ‘ডাকাতকালী’ নামে খ্যাত। আজও প্রথা রয়েছে গভীর রাতে মশাল আলোয় দেবীর সামনে বলিদান দেওয়া হয়। সেসময় সকলের আশঙ্কা থাকে দেবী স্বয়ং রূদ্ররূপ ধরে মন্দির ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে পারেন। এই বিশ্বাস থেকেই দেবীমূর্তিকে পড়ানো হয় মোটা শিকলের বেড়ি।
জানা যায় ৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে ধাত্রীগ্রামের ব্রাহ্মণ পাড়ার চট্টোপাধ্যায় পরিবারের এই পুজো চলে আসছে। দেবীকে ডাকের সাজ পড়ানো হয় । সাজানো হয় নানান গহনায়। পাশাপাশি দেবীমূর্তির কোমরে পড়ানো হয় মোটা লোহার শিকল। পরিবারের সদস্য গৈরিক চট্টোপাধ্যায়ের কথায়,”আমাদের পূর্বপুরুষদের আমল থেকেই দেবীকে শিকলে বেঁধে রাখার প্রথা চলে আসছে। কারন শোনা যায় বলিদানের সময় দেবী বড় বিচলিত হয়ে পড়েন। চঞ্চলা হয়ে দেবী বেড়িয়ে আসতে চান। তাকে বশে রাখতেই এই প্রথা মেনে আসা হয়।
গৈরিকবাবু জানান, বলিদানের সময় মশাল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। আগে মহিষ বলিহত। এখন শুধু ছাগবলি দেওয়া হয়।
চট্টোপাধ্যায় পরিবারের কালী ডাকাত কালী নামে পরিচিত। পরিবারের প্রবীণ সদস্য সুবীর চট্টোপাধ্যায় জানান,“বহু বছর আগে ডাকাত সর্দাররা এই দেবীর পুজো করে ডাকাতি করতে বের হত।পরবর্তীকালে এক পূর্বপুরুষ ত্রিলোচন চট্টোপাধ্যায় গভীর অরণ্যের মধ্যে দেবীকে দেখতে পান।তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়ে দেবীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। তারপর পুজো শুরু করেন।
”চট্টোপাধ্যায় বাড়ির এই পুজোয় দেবীকে ভোগ হিসাবে এখানে চার রকমের ডালের খিচুরি,দেওয়া হয়। ইলিশ মাছ, কাতলা, চিংড়ি,ইত্যাদি বিভিন্ন মাছের পদের ভোগ দেওয়া হয়। দেওয়া হয় মানকচু,ওল,এঁচোরের তরকারি। দেবীকে শোভাযাত্রা সহকারে গঙ্গায় বিসর্জন করতে নিয়ে যাওয়া হয়।।