আমিরুল ইসলাম,বর্ধমান,১৬ মে : স্বার্থ ছাড়া এই যুগে কেউ কোন কাজই করতে চান না এমনটা হামেশাই শোনা যায় । কিন্তু তারই মধ্যে ব্যতিক্রম পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের কালুত্তক গ্রামের দিন দরিদ্র টোটো চালক কামাল উদ্দিন। দ্বিতীয় দফার লকডাউনে রোজগার বন্ধ হয়ে গেলেও লকডাউন শুরুর প্রথম দিনটায় তিনি জনস্বার্থেই টোটো নিয়ে বের হলেন পথে ।তবে অবশ্য যাত্রীদের গন্তব্যে পৌছে দিয়ে উপার্জনের জন্যে নয়। কামাল উদ্দিন দীর্ঘ সড়কপথে পড়ে থাকা কাদা এদিন নিজের হাতে করে তুলে টোটোয় চাপিয়ে নিতে নিতে এগিয়ে চলেন । পরে সেই কাদা তিনি ফেলে দেন রাস্তার ধারে জমিতে ।এই ভাবে দীর্ঘ সড়কপথ তিনি কাদা মুক্ত করেন।
রাস্তায় পড়ে থাকা কাদার কারণে কোন পথ দুর্ঘটনা ঘটেগেলে কারুর প্রাণ চলেযেতে পারে।তা যাতে না হয় তাই লকডাউনে এইভাবে পথে নামা বলে কামাল উদ্দিন এদিন জানান।এক টোটো চালকের এমন মানবিক কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন আপামোর ভাতারবাসী । হঠাৎ করেই সড়কপথে পড়ে থাকা কাদা সরানোর ভাবনা কেন এল ?এই প্রশ্নের উত্তরে কামাল উদ্দিন এদিন বলেন,কয়েকদিন আগে ভাতারের নর্জা বাসস্টাণ্ডের কাছে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান এক আইনজীবী।রাস্তার উপরে পড়ে থাকে কাদাই ছিল ওই দুর্ঘটনার কারণ।কাদায় স্লিপ কেটে যাওয়াতেই ওই দিন বাইক পড়ে গিয়ে বাসের চাকায় পিষ্ট হন আইনজীবী। দুর্ঘটনাস্থলেই তিনি প্রাণ হারিয়ে ছিলেন ।
কামাল উদ্দিন জানান,ওই দুর্ঘটনাই তাঁকে নাড়ায়ি দিয়েছিল । তার পরেই তিনি সংকল্প নেন প্রশাসন সড়কপথের উপরে পড়ে থাকা কাদা সরানোর ব্যবস্থা না করলে তিনিই তা করবেন ।সেই সংকল্প অনুযায়ী এদিন তিনি মাঠ থেকে ট্রাক্টরের চাকায় উঠে এসে পাকা রাস্তায় পড়া কদা নিজেই সরিয়ে পরিস্কার করলেন ।
ভাতারের কালুত্তক গ্রামের বাসিন্দা শেখ
মুক্তার বলেন ,টোটো চালিয়ে যে টুকু রোজগার হয় তা দিয়েই কামাল উদ্দিন ও তাঁর পরিবারের দিন গুজরান হয় । কিন্তু কামাল উদ্দিন মনের দিক থেকে বড় মানুষ। এদিন তিনি যে কাজটি করলেন তা আপাত দৃষ্টিতে ছোটখাটো কাজ বলে মনে হলেও বাস্তবে এই কাজের গুরুত্ব অনেক । সড়কপথ কাদা মুক্ত থাকলে দুর্ঘটনা থেকে অনেকেই রক্ষা পাবেন । শেখ মুক্তার বলেন ,কামাল উদ্দিন মহৎ মনের মানুষ বলেই অপরের প্রাণ বাঁচাতে তিনি নিঃস্বার্থ ভাবে এই কাজটি করলেন। যা আসলে প্রশাসনেরই করা কথা ছিল ।।