এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,০৪ জুন : ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের সময় বীরভূমে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় কঠোর মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট । আদালত বলেছে যে বিজেপি সমর্থক হিন্দু পরিবার এবং মহিলাদের উপর এই আক্রমণগুলি,’গণতন্ত্রের মূলে কুঠারাঘাত’ । পাশাপাশি অভিযুক্ত ৬ তৃণমূল কর্মীর জামিন বাতিল করে দিয়েছে । যারা এর আগে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের যোগসাজশে জামিন পেয়েছিল। আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের সেই আদেশের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে, যেখানে শেখ জমির হুসেন, শেখ নূরাই, শেখ আশরাফ, শেখ করিবুল এবং জয়ন্ত ডোমকে জামিন দেওয়া হয়েছিল।
২০২১ সালের ভোট পরবর্তী হিংসায় বীরভূমে এক বিজেপিকর্মীর বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, সেই বিজেপিকর্মীর বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর ও লুঠপাটের পর বাড়ির এক মহিলাকে ঘর থেকে টেনে বাইরে নিয়ে এসে বিবস্ত্র করে যৌন হেনস্তা করা হয়। কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচে যান ওই নির্যাততা। অভিযোগ, এই ঘটনার পর পরিবারের লোকেরা থানায় গেলেও অভিযোগ নেয়নি পুলিশ। এমনকী পরিবারটিকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে পরামর্শ দেন স্থানীয় থানার পুলিশ আধিকারিকরা। এরপরে হাইকোর্টের নির্দেশে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনার তদন্তভার নেয় সিবিআই। হাইকোর্টের নির্দেশে নতুন করে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সিবি আইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হয় ৬ তৃণমূল কর্মী । যদিও ২০২৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে যায় তারা। সেই জামিনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল সিবিআই।
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার দিনই এই আক্রমণ করা হয়েছিল। এটি স্পষ্ট করে যে এই আক্রমণগুলির পিছনে উদ্দেশ্য ছিল কেবল প্রতিশোধ, কারণ ভুক্তভোগী পরিবারগুলি বিজেপিকে সমর্থন করেছিল। বিচারপতি মেহতা মন্তব্য করেছেন, ‘এই ঘটনা কেবল মানবতাবিরোধী নয়,এটি গণতন্ত্রেরও বিরুদ্ধে।’ আদালত বিশেষভাবে মহিলাদের প্রতি দুর্ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে বলেছে যে, অভিযুক্তরা যদি জামিনে থাকে, তাহলে একটি সুষ্ঠু ও স্বাধীন বিচার সম্ভব হবে না । রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনকে তীব্র ভর্ৎসনা করে সুপ্রিম কোর্ট ।
আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে এই মামলার শুনানি ৬ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়াও, ভুক্তভোগী পরিবার এবং সাক্ষীদের পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে হবে যাতে তারা কোনও ভয় ছাড়াই আদালতে সাক্ষ্য দিতে পারেন । এর জন্য, পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্র সচিব এবং পুলিশ প্রধানকে এই নিরাপত্তা নির্দেশাবলী মেনে চলা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় হস্তক্ষেপ এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন
তবে এটিই প্রথম ঘটনা নয় যেখানে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক হিংসায়, তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে হিন্দু পরিবারগুলিতে আক্রমণের অভিযোগও আনা হয়েছিল, যেখানে ৩ জন মারা গিয়েছিল। বিজেপিকে সমর্থন করার কারণে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা ভুক্তভোগী হিন্দু পরিবারগুলিতে আক্রমণ করেছিল।
বীরভূমের ২০২১ সালে ভোট পরবর্তী হিংসায় একজন ভুক্তভোগী মহিলাকে নিগ্রহ করা হয়েছিল এবং তার বাড়িও লুট করা হয়েছিল। আক্রমণ থামাতে ভুক্তভোগী মহিলা নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার হুমকি দিলে মুসলিম জনতা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে পুলিশ অনেক মামলা দায়ের করেনি এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তার কোনও নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। ফলস্বরূপ অভিযোগকারীকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের এই হস্তক্ষেপের ফলে অভিযুক্তের জামিন বাতিল করা হয় এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই পুরো বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করে এবং এই ঘটনার দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তীব্র হয়ে ওঠে। আজ বুধবার অভিযুক্তদের জামিন খারিজ করে রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনকে তীব্র ভর্ৎসনা করল সুপ্রিম কোর্ট। এদিন সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি শোনেন বিচারপতি বিক্রম নাথ ও বিচারপতি সন্দীপ মেহেতা।।

