এইদিন ওয়েবডেস্ক,বীরভূম,৩০ মার্চ : ইদানিং সময়টা মোটেই ভালো যাচ্ছে না বীরভূম জেলার তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের । একদিকে রামপুরহাটের বগটুই কান্ডের অস্বস্তি, তাই উপর গরু পাচার মামলায় রক্ষা কবচ খারিজ হয়ে যাওয়ায় যথেষ্ট চাপে রয়েছেন বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ এই তৃণমূল নেতা । তাই নেতার মঙ্গলকামনায় এবার যজ্ঞের আয়োজন করলেন অনুব্রত অনুগামীরা । বীরভূম জেলার তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদীব ভট্টাচার্যের উদ্যোগে বুধবার রীতিমত ঘটা করে যজ্ঞের আয়োজন করা হল । ছিলেন হাসনের দলীয় বিধায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায়, তারাপীঠের ব্লক সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায়সহ দলীয় কর্মীরা । তবে কি উদ্দেশ্যে এদিনের যজ্ঞ তা স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ।
প্রসঙ্গত,গরু পাচার মামলায় বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে ৪ বার নোটিস দিয়েছে সিবিআই । কিন্তু বারবার সেই হাজিরা এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি । গ্রেফতারি এড়াতে গত ফেব্রুয়ারী মাসে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অনুব্রত । গরু পাচারকাণ্ডে তখন তিনি রক্ষাকবচ পেয়েছিলেন । কিন্তু মঙ্গলবার তাঁর রক্ষা কবচ খারিজ করে দেয় আদালত ।
এদিকে বগটুই কান্ডের তদন্তভার নিজেদের হাতে নেওয়ার পর থেকেই তেড়েফুঁড়ে আসরে নেমে পড়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা ।
ইতিমধ্যে যেটুকু তথ্য সংগ্রহ হয়েছে তাতে ঘটনার মাস্টার মাউন্ডের নাগাল পাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছে সিবিআই । তারই মধ্যে বগটুই মামলায় সন্দেহভাজন ৩ জনকে তিন জেলা থেকে গ্রেফতার করেছে বীরভূম পুলিশ । পুলিশ জানিয়েছে,ধৃতদের নাম শেরা শেখ, সঞ্জু শেখ ও রাজা শেখ । তাদের যথাক্রমে মালদহ, ঝাড়গ্রাম ও রামপুরহাট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে । তদন্তকারীদের আশা ধৃতদের কাছ থেকে মিলতে পারে নতুন কিছু তথ্য ।
সুত্রের খবর, রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের বাসিন্দা অগ্নিদগ্ধ নাজিমা বিবি সিবিআইকে মৃত্যুলাকীন জবানবন্দি দিয়ে গেছেন । তাতে কিছু বিস্ফোরক তথ্যও হাতে পেয়েছে সিবিআই । বগটুই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী ছিলেন নাজিমা বিবি । সোমবার রামপুরহাট হাসপাতালে তিনি মারা যান । স্ত্রীর মৃত্যুর পর নাজিমার স্বামী সেকলাল শেখ একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন । তিনি সরাসরি অনুব্রত মণ্ডলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন । সেকলালের কথায়,ভাদু শেখের দু’নম্বরি কারবারির ভাগ পেতেন অনুব্রত মণ্ডল । সেই সঙ্গে বগটুই গনহত্যার ঘটনায় ধৃত আনারুল, অনুব্রত মণ্ডল, এসডিপিও এবং আইসির জড়িয়ে আছে বলে তিনি বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন ।
এদিকে বগটুইয়ের বাসিন্দা মিহিলাল শেখ ও সেকলাল শেখের বাড়িতে সেদিন আগুন ধরানো হয় । তাঁরা উভয়েই হারিয়েছেন প্রিয়জনদের । নিজেদের ওই রাতের নৃশংসতার প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করছেন মিহিলাল ও সেখলাল । স্ত্রী নাজেমা বিবি মারা যাওয়ার পর থেকেই বগটুইয়ের অদূরে কুমাড্ডা গ্রামে মেয়ে সাজেনা খাতুনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন শেখলাল । মঙ্গলবার রামপুরহাটের পান্থশ্রী অস্থায়ী সিবিআই শিবিরে মিহিলালের বয়ান রেকর্ড করার পর তাঁকে নিয়ে কুমাড্ডা গ্রামে যান সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা আধিকারিকরা । তাঁরা সেখানে মিহিলাল ও সেকলালকে মুখোমুখি বসিয়ে দীর্ঘক্ষণ জেরা করেন । ফের শেখলাল ও মিহিলালকে নিয়ে রামপুরহাটে ফেরে সিবিআই । শেখলাল তার হেফাজতে থাকা সেই রাতের মোবাইলের কিছু ভিডিও ফুটেজ সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয় । শেখলাল আগেই অভিযোগ করেছিলেন, ‘ওই ছবিতে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, দুষ্কৃতিরা আমার বাড়িতে আগুন লাগাচ্ছে আর কিছুটা পাশে পুলিশ তা দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে দেখছে ।’ শেখলাল ও মিহিলাল ছাড়াও একই দিনে দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয় সাসপেন্ড হওয়া আইসি ত্রিদিব প্রামাণিককেও । সেই সঙ্গে ভাদু শেখের মৃত্যুর পর কারা কারা থানায় এসেছিল তা জানতে ওই দিনের থানার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা । এদিকে বগটুই মোড়ের যে সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড় করেছিলেন সিবিআই তাতে ৪ আততায়ীকে স্পষ্ট দেখা গেছে । এখন তাদের পাকড়াও করতে পারলেই বাগটুই কান্ডের মূল মাথার হদিশ পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে ।
ইতিমধ্যে নাজিমা বিবির স্বামী সেখলাল শেখ দাবি করেছেন,তাঁদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের আগেই অনুব্রত মণ্ডলের কাছে সঙ্গে সঙ্গে খবর পৌঁছে গিয়েছিল । তিনি চাইলেই গনহত্যা রুখতে পারতেন । কিন্তু তিনি তা রোখার কোনও চেষ্টাই করেননি বলে অভিযোগ তুলেছে সেখলাল । এখন কিসের ভিত্তিতে সেকলাল এই সমস্ত দাবি করছেন তা খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা । ফলে সব মিলিয়ে অনুব্রত মণ্ডল এখন যথেষ্ট চাপে আছেন বলাই বাহুল্য । এখন দলীয় কর্মীদের দ্বারা আয়োজিত যজ্ঞ তাঁর চাপ কাটাতে কতটা সহায়ক হয় সেটাই লক্ষ্যনীয় ।।