প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০১ আগষ্ট : রাজ্যজুড়ে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গি।আর তারই মধ্যে ফের হানা দিয়েছে ‘কোভিড’। সেই কোভিডের হানাতেই পর পর তিনদিনে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হল তিনজনের। মৃত তিনজনের ডেথ সার্টিফিকেটেই উল্লেখ রয়েছে ’কোভিড’ আক্রান্ত হওয়ার কথা।যদিও কোভিড আক্রান্ত হওয়ার কারণেই যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এমনটা মানতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । তাদের দাবি তিন জনেই বিভিন্ন রোগে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন।এ সব দেখে বিরোধীরা বলছেন,কোভিডে মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতেই স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভিন্ন কথা বলছেন ।
বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সন্ধ্যায় ভাতারের ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান । তিনি দীর্ঘদিন কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। হাসপাতালে কোভিড পরীক্ষার পর তার রিপোর্ট ‘পজিটিভ আসে’ । রবিবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান ।
এই মৃত্যুর ঘটনার পর ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতে
সোমবার সকালে হাসপাতালে মারা যান ৬১ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ।তাঁর বাড়ি বর্ধমানের দেওয়ানদিঘী থানা এলাকায়।কয়েকদিন আগে তিনি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর কোভিড রিপোর্ট ’পজিটিভ’ আসে।এর পর মঙ্গলবার সকালে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান আরো একজন কোভিড পজিটিভ ধরা পড়া রোগী । বছর ২৫ বয়সী ওই রোগীর বাড়ি বীরভূমের কীর্ণাহারে ।পড়ে গিয়ে তিনি গুরুতর চোট পেয়েছিলেন।চিকিৎসার জন্য তিনি বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল ভর্তি হয়েছিলেন। সেখান থেকে রেফার হয়ে ২৪ জুলাই তিনি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ২৮ জুলাই বর্ধমান হাসপাতালে তাঁর কোভিড ‘পজিটিভ’ ধরা পড়ে । আজ মঙ্গলবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয় ।
কোভিড আক্রান্ত হওয়ার কারণেই যে এই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এমনটা অবশ্য মানতে চান না বর্ধমান মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ কৌস্তভ নায়েক । তিনি দাবি করেন,ভাতার ও দেওয়ানদিঘীর যে দু’জন বাসিন্দ বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেই দুজনেরই বয়স ষাটের উপর । দু’জনেই কয়েকদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হন ভাতারের রোগীর কিডনি কাজ করছিলনা। তার উপর জ্বর আসছিল । তাই ‘এন্টিজেন’ টেস্টে করানো হয়। রিপোর্ট ’পজিটিভ’ আসে । আর দেওয়ানদিঘীর বাসিন্দা এনকেফেলাইটিস নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর কনডিশন খারাপ ছিল।জ্ববও আসছিল। এঁনারও ’এন্টিজেন’ টেস্টে করানো হলে রিপোর্ট ’পজিটিভ’ আসে। একই ভাবে বীরভূমের কীর্ণাহারে রোগীরও ’এন্টিজেন’ টেস্টের রিপোর্ট ’পজিটিভ’ আসে। অধ্যক্ষ কৌস্তভ নায়েকের বক্ত্যব্য,’এন্টিজেন টেস্টে ’কোভিড পজিটিভ’ হয়েছে । এটা হতেই পারে । এরকম কোভিড পজিটিভ রুগী হাসপাতালে আরো বেল কয়েকজন ভর্তি আছে । আর টি- পি সি আর টেস্টে করলে এদের রিপোর্ট ’কোভিড পজিটিভ’ নাও আসতে পারতো । তাই কোভিড আক্রান্ত হয়েই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে একথা বলা যাবে না ।’
অধ্যক্ষ এমনটা জানালেও ,তিন মৃতের ’ডেথ সার্টিফিেট ’ বলছে অন্য কথা । তিনজনেরই ডেথ সার্টিফিকেটে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে তাদের কোভেড আক্রান্ত হওয়ার কথা। অভিজ্ঞ মহলের
দাবি সেই বিষয়টিই কোন কারণে মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ কৌস্তভ নায়েক ধামাচাপা দিতে চাইছেন। কিন্তু ’ডেথ সার্টিফিকেটই’ বলে দিচ্ছে এ বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ’কোভিড’ সক্রিয় আছে।যে তিন জন মারা গেলেন তাঁরা প্রত্যেকেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ’কোভিড পজিটিভ’ হয়েছেন ।
জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র এই প্রসঙ্গে বলেন,’রাজ্যে এখনও পর্যন্ত কতজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ,কতজনই বা মারা গিয়েছেন ,সেই তথ্য সরকার আড়াল করছে। স্বাস্থ্য দফতরও পরিষ্কার করে কিছু জানাচ্ছে না। একই ভবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশেই হয়তো ডেথ সার্টিফিকেটে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও বর্ধমান হাসপাতাল কর্তৃপক্ কোভিডে ’ মৃত্যুর কথা ধামাচাপা দিতে চাইছে।’।