এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১১ জুলাই : এরাজ্যের ভূমি রেকর্ড ও জরিপ ও যুগ্ম ভূমি সংস্কার কার্যালয়গুলিকে (বি এল আর ও) শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দপ্তর বলে মনে করা হয় ! এই সরকারি দপ্তরগুলিতে এতটাই অনিয়ম যে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি পর্যন্ত একবার একে “বাস্তুঘুঘুর বাসা” বলে অবিহিত করেছিলেন । কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এই কটাক্ষের পরেও এক শ্রেণীর ‘বেপরোয়া’ আধিকারিকরা অর্থের বিনিময়ে জমিজায়গা ‘উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ করে দেওয়ার কাজ সমানতালে চালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ । এনিয়ে ব্যাপক ক্ষোভবিক্ষোভ রয়েছে প্রতিটি ব্লকে । এবারে রাজ্যের কিছু বিএলআরও অফিস গুলিতে ব্যাপক রদবদল করল রাজ্য সরকার ৷ বদলি করে দেওয়া হল বেশ কিছু আধিকারিককে৷ তাদের মধ্যে রয়েছেন ভাতারের বিএলআরও প্রদীপ মন্ডলসহ তিন আধিকারিক ৷ বাকি দু’জন হলেন মনোজ কুমার সাউ ও শুভজিৎ পোদ্দার ।
বৃহস্পতিবার(১০ জুলাই) পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভূমি রেকর্ড ও জরিপ ও যুগ্ম ভূমি সংস্কার কমিশনারের কার্যালয় থেকে বেশ কিছু বিএলআরও অফিসের আধিকারিকদের বদলির আদেশ জারি করা হয়েছে । নির্দেশে বলা হয়েছে,”সংযুক্ত তালিকা অনুসারে রাজস্ব কর্মকর্তাদের এতদ্বারা বদলি করা হচ্ছে এবং তাদের নামের সাথে উল্লেখিত অফিসে পদায়ন করা হচ্ছে। সরকারি নিয়ম অনুসারে টিএ/ডিএ গ্রহণযোগ্য হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ১৪.০৭.২০২৫ (এ.এন.) এর মধ্যে অব্যাহতি দিতে হবে, অন্যথায় তারা ১৬.০৭.২০২৫ (এ.এন.) থেকে তাদের বর্তমান পদ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত বলে গণ্য হবে।জনস্বার্থে আদেশটি জারি করা হলো ।” যাদের মধ্যে ৬ জনের বদলির নির্দেশ “তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর” করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । ওই তালিকার ৩ নম্বরে রয়েছে ভাতার ব্লকের বিদায়ী বিএলআরও প্রদীপ মন্ডলের নাম । তাকে উত্তর দিনাজপুর কালেক্টরেটে পাঠানো হয়েছে ৷ তার পরিবর্তে উত্তর দিনাজপুর কালেক্টরেট থেকে তমাল তরু মিশ্রকে ভাতারের বিএলআরও করা হয়েছে । অন্য একটা ৪৫ জনের তালিকায় ২৭ নম্বরে থাকা মনোজ কুমার সাউকে ভাতার থেকে বজবজ বিএল আরও অফিসে এবং ৯ নম্বরে থাকা শুভজিৎ পোদ্দারকে ব্যারাকপুর-২ বিএল আরও অফিসে বদলি করা হয়েছে ৷
প্রসঙ্গত,ভাতার বিএলআরও অফিসের একাংশের কর্মীদের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে একজনের সম্পত্তি অন্যের নামে রেকর্ড করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বহুবার৷ এমনকি এক নম্বর খতিয়ানের সম্পত্তি পর্যন্ত অর্থের বিনিময়ে ব্যক্তির নামে রেকর্ড করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে৷ সিপিএমের ৩৪ বছরের রাজত্বকালে এই প্রকার দুর্নীতির প্রবণতা শুরু এবং সিপিএমের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এক নম্বর খতিয়ানের সম্পত্তি পর্যন্ত নিজেদের বা পরিজনের নামে রেকর্ড করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল । সেই প্রবণতা ২০১১ সালের ক্ষমতা পরিবর্তনের পরেও সমানতালে চলে আসছে বলে অভিযোগ । ভাতার বিএলআরও অফিসের একাংশের কর্মীদের এই প্রকার দুর্নীতির কারনে ভাতার বাজারের এক ব্যবসায়ীর বেঘোরে প্রাণ পর্যন্ত চলে গেছে বলে অভিযোগ ওঠে । এমনকি ভাতারের একটি গ্রামের স্থানীয় গ্রামবাসীর জমি অর্থের বিনিময়ে মসজিদ কমিটির নামে রেকর্ড করে দেওয়ার অভিযোগ পর্যন্ত উঠেছিল । বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হলে সম্প্রতি রেকর্ড সংশোধন করতে বাধ্য হন বিদায়ী বিএলআরও প্রদীপ মন্ডল। এছাড়া ভুয়া দলিল দেখিয়ে অন্যের জায়গা রেকর্ড করার পর সেই জায়গায় সরকারি আবাস যোজনার অনুদান পাওয়ার নজির পর্যন্ত রয়েছে ভাতারে ।।

