প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৪ অক্টৌবর : রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সম্পর্কে রাজ্যের কারা মন্ত্রী অখিল গিরির করা মন্তব্য নিয়ে এখনও প্রতিবাদ জারি রেখেছে বঙ্গ বিজেপি। তারা পথে নেমে অখিল গিরিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে চলেছে। ঠিক এমন সময় কালেই তপশিলী সম্প্রদায় ভুক্ত মহিলা পঞ্চায়েত প্রধানকে জাত তুলে গালিগালাজ করা এবং ধর্ষণ করে খুন করা হবে বলে হুমকি দেবার অভিযোগে শ্রীঘরে ঠাঁই হল পূর্ব বর্ধমানের রায়না ১ ব্লক তৃণমূলের যুব সভাপতি ও দুই পঞ্চায়েত সদস্য সহ ১৭ জন তৃণমূল কর্মীর।এই ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে রায়নার পলাশন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়।ঘটনার কথা জেনে বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছে,গোষ্ঠীদ্বন্দে জর্জরিত তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও কর্মীরা যে তপশিলী জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায় বিদ্বেষী,তা এই ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করে দিল ।
পঞ্চায়েত প্রধানের কথায় জানা গিয়েছে ,
ঘটনার সূত্রপাত হয় চলতি বছরের ১৫ জুলাই
তারিখে।ঘটনা বিষয়ে পলাশন গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিলা প্রধান রায়না থানা এবং জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে অভিযোগ দায়ের করেন।পরে তিনি তাঁর উপর হওয়া অত্যাচারের সবিস্তার উল্লেখ করে বর্ধমান আদালতে মামলা করেন। প্রধানের অভিযোগ,১৫ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২ টা নাগাদ পলাশন গ্রাম পঞ্চায়েত অধীন রামবাটী গ্রামে ’দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প’ চলছিল। ওই সময়ে বাসুদেব ঘোষ,শুভেন্দু দলুই এবং শেখ জাকির হোসেনের নেতৃত্বে আরও আটজন সদস্য ও ৩০-৩৫ জন দুস্কৃতি পঞ্চায়েত অফিসে হামলা চালায়।তারা পঞ্চায়েত অফিসে থাকা সরকারী সম্পত্তি ভাঙচুর করার পাশাপাশি পঞ্চায়েত অফিস থেকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র লোপাট করে এবং লুটপাট চালায়। এমনকি তারা তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেয় ও তালাও ঝুলিয়ে দেয় পঞ্চায়েত অফিসে ।
প্রধানের অভিযোগ অনুযায়ী এই ঘটনার পরেও তাঁর উপর অত্যাচার অব্যাহত থাকে। ১৮ জুলাই তিনি যখন গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে উপস্থিত ছিলেন তখন ফের বর্তমান ব্লক তৃণমূলের যুব সভাপতি কল্লোল মণ্ডলের নেতৃত্বে পঞ্চায়েত সদস্য বাসুদেব ঘোষ এবং জাকির হোসেন সহ ১৭ জন অবৈধ ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে চড়াও হয়। তারা তাঁকে জাত তুলে অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ করে এবং প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তায় ফেলে ধর্ষণ করে খুন করে দেবে বলে হুমকি দেয়। প্রধানের অভিযোগ পর পর দু’দিন হওয়া এই পৃথক ঘটনা বিষয়ে তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ
জানান।পুলিশ মামলা রুজু করলেও ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া না হওয়ায় চলতি বছরের ২ আগষ্ট তিনি বর্ধমান আদালতে এসসিএসটি অ্যাক্টে মামলা দায়ের করে ন্যায় বিচারের আবেদন জানান ।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে,পঞ্চায়েত প্রধান
পলাশন পঞ্চায়েত এলাকা নিবাসী যে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন তারা বৃহস্পতিবার বর্ধমান আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।তাঁদের হয়ে আইনজীবী শান্তিরঞ্জন হাজরা জামিনের সওয়ালে করেন। তিনি আদালতে বলেন,“পদের প্রভাব খাটিয়ে প্রধান এই মামলা করেছেন। মিথ্যা মামলায় অভিযুক্তদের ফাঁসানো হয়েছে। অভিযুক্তরা। সবাই একই দলের“।পাল্টা সওয়ালে পঞ্চায়েত প্রধানের আইনজীবী আসাদুজ্জামান বলেন, “পঞ্চায়েত অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধানকে অশ্লীল ভাষায় জাত তুলে গালিগালাজ করা হয়েছে। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় থানা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তাই আদালতে মামলা করা হয়। অভিযুক্তরা জামিন পেলে সমাজের কাছে অন্য বার্তা যাবে“।দু’পক্ষের সওয়াল শুনে প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিশেষ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক বিশ্বরূপ শেঠ আত্মসমর্পণকারী ১৭ জনের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে তাদের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়ে ৭ ডিসেম্বর ফের আদালতে পেশের নির্দেশ দেন
এই ঘটনা বিষয়ে রায়না ১ ব্লক তৃণমূলের নেতৃত্ব মুখে কুলুপ অাঁটলেও কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি নেতৃত্ব।জেলা বিজেপির সহ সভাপতি সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,গোষ্ঠী বিবাদে জর্জরিত তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা এসসি-এসটি সম্প্রদায়ের মানুষ জনকে আগাগোড়াই বিদ্বেষের চোখে দেখেন।
তাই তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের তপশিলী মহিলা প্রধানও তৃণমূলের নেতা ও কর্মীদের দুর্ব্যবহার ও হুমকি থেকে রেহাই পাননি।এটা যে নিছক কথার কথা নয় তা তৃণমূলের নেতা তথা রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি দেশের আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য
আরও একবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন।।