এইদিন ওয়েবডেস্ক,গাজা,১৬ নভেম্বর : গত ৭ অক্টোবর সন্ত্রাসী হামাস ইসরায়েলে নাশকতা চালিয়ে নির্বিচারে নিরীহ মানুষ খুন পর থেকেই শুরু হয়েছে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ । ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের মুহুর্মুহু বোমা বর্ষণে গাজার অর্ধেকের বেশি ভবন ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে । এই পরিস্থিতির মাঝেই গাজায় জন্ম নিচ্ছে হাজার হাজার শিশু । মানবাধিকার সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরো ১৫ হাজার শিশু জন্ম নেবে গাজায় ।
মানবাধিকার সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় বর্তমানে চুড়ান্ত মানবিক সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে । খাদ্য,পানীয় জল,চিকিৎসা পরিষেবা বা বিদ্যুৎ অনিয়মিত । এই পরিস্থিতিতেই গাজায় আরো ১৫ হাজার শিশু জন্ম নিতে যাচ্ছে। ফলে অনাগত শিশুদের জীবন গুরুতর ঝুঁকিতে থাকবে।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ জানিয়েছে, সন্তান প্রসূতিদের মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ নারী প্রসবকালীন বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছে ।
জাতিসংঘের মতে, অবরুদ্ধ গাজায় বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১৮০ নারী সন্তান প্রসব করেন । বিবৃতিতে গাজার হাসপাতালে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে সেখানে পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয় জলের সংকট, এমনকি প্রয়োজনীয় ওষুধেরও অভাব রয়েছে। স্তন্যদানকারী নারীরা পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছেন না । তারই মাঝে হামাসের সন্ত্রাসীরা হাসপাতালে লুকিয়ে থাকায় ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে । যেকারণে হাজার হাজার অন্তঃসত্ত্বা এবং নবজাতকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে ।
গাজা উপত্যকায় সেভ দ্য চিলড্রেনের কর্মী মাহা শিফা হাসপাতালের বাইরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে তাকে অঞ্চলটির দক্ষিণাঞ্চলে সরিয়ে নেওয়া হয়। হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, হাসপাতালের অবস্থা ভয়ংকর ছিল। বারান্দায় অন্তঃসত্ত্বা নারীরা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। ইনকিউবেটরে অজ্ঞাত নবজাতক শিশু। যার পরিবারের কোনো সদস্যই জীবিত নেই। হাসপাতালে জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে। আমি সেখান থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হই। আমি জানি না তারা বেঁচে আছে কি না ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, গাজার মোট ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে ২২টিই এখন ‘অকার্যকর’। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর জেসন লি বলেন,’মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে গাজায় জন্ম নিচ্ছে শিশুরা। এ যেন এক দুঃস্বপ্ন। তাদের পরিবারগুলো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। চিকিৎসাসেবা ছাড়াই সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হচ্ছেন নারীরা। নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুরা ইনকিউবেটরেই মারা যাচ্ছে ।’ হাসপাতালের জেনারেটরগুলোকে সচল করতে গাজায় জ্বালানি প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোকে হামলা থেকে সুরক্ষিত রাখার দাবি জানান তিনি । জেসন বলেন, এই সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। আমাদের যুদ্ধবিরতি দরকার এবং তা এখনই দরকার ।
এদিকে গাজার শিফা হাসপাতালের অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসী হামাসের বিপুল অস্ত্রভান্ডারের হদিশ পেয়েছে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী(আইডিএফ) । আইডিএফ সর্বসমক্ষে অস্ত্রের প্রমাণও প্রকাশ করেছে । গাজার মানুষদের ‘মানব ঢাল’ হিসাবে ব্যবহার করায় ইরান সমর্থিত ফিলিস্থিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের নিন্দায় সরব হয়েছে আন্তর্জাতিক মহল । যদিও এই প্রমান সত্ত্বেও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাই আল-কাইলা এখনো ইসরায়েলকেই দোষারোপ করে যাচ্ছে । তার কথায় ‘গাজার আল-শিফা হাসপাতালে সামরিক অভিযান চালানোর মাধ্যমে ইসরাইল ‘মানবতাবিরোধী নতুন অপরাধ’ করছে।’ কিন্তু হাসপাতালকে সন্ত্রাসী হামাসের অপারেশনাল হেডকোয়ার্টার করার বিষয়ে নীরব থেকেছেন ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ।
আল-শিফা ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল। এই হাসপাতালটিতে ৬৫০ জনের মতো রোগী, ২০০ থেকে ৫০০ কর্মী ও আশ্রয় নেওয়া প্রায় দেড় হাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনি আছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে । এই হাসপাতালের নিচে, ভূগর্ভে হামাসের একটি কমান্ড সেন্টার রয়েছে । ইসরাইল বুধবার ভোররাত থেকে এই হাসপাতালটিতে ঝটিকা অভিযান শুরু করে ‘হাসপাতালের নিচে টানেলে থাকা হামাস সসন্ত্রাসীদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছে । কিন্তু তারা আত্মসমর্পণ না করে আইডিএফের সাথে হাসপাতালের ভিতরেই যুদ্ধে লিপ্ত হয় । যেকারণে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের প্রাণ সংশয়ের মধ্যে পড়েছে ।।