প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৬ জুলাই : শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে জেরবার বাংলায় এবার তোলপাড় ফেললো বই পাচার কাণ্ড। তাও আবার সরকারী বইয়ের ভাণ্ডার থেকে বই পাচার। এ নিয়েই হুলস্থুল পড়ে গিয়েছে বহু কাল আগে পূর্ণ স্বাক্ষর জেলা শিরোপা পাওয়া পূর্ব বর্ধমান জেলায়। বই পাচারের ঘটনায় অভিযোগের অঙুল যার দিকে উঠেছে তিনি আবার যে সে কোন বক্তি নন। তিনি হলেন খোদ বর্ধমান সদর উত্তর চক্রের স্কুল পরিদর্শক সৌমেন মণ্ডল। তাতেই ফাঁপড়ে পড়ে গিয়েছে জেলা শিক্ষা দফতর । ঘটনা জানাজানি হতেই রাজনৈতিক চাপান উতোর তুঙ্গে উঠেছে ।
শিক্ষা দফতরে জমা পড়া অভিযোগপত্রে লেখা হয়েছে,“ছাত্রছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ হওয়া বই সদর উত্তর চক্রের এসআই অফিসে জমা ছিল। গত ১২ এপ্রিল এবং ৩০ এপ্রিল দু’টি ট্রাকে করে সেই স্কুল পাঠ্য বইগুলি অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। বই গুলি বিক্রি করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীদের দাবি,অনৈতিক ভাবে স্কুল পাঠ্যবই বিক্রি হয়ে যাওয়ার কারণে স্কুলে ছাত্র ছাত্রীদের প্রয়োজন পড়লেও বই সরবরাহ করা যাচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এক কপি করে বই দিতে হয়। সেটাও দেওয়া যাচ্ছে না বলে শিক্ষা দফতরে অভিযোগ করা হয়েছে।
এমন অভিযোগ সামনে আসতেই নড়ে চড়ে বসেছে শিক্ষা দফতর। জেলা শিক্ষা দফতর পত্রপাঠ ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য বলেন, “গুরুতর অভিযোগ । সদর উত্তরচক্রের অফিস থেকে পঞ্চম শ্রেণির, পড়ুয়াদের জন্য রাখা বই পাচার হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে । অফিসে বই নষ্ট হয়ে গেলেও তা গোডাউনে রাখতে হয়। অভিযোগ সত্য হলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” একই সঙ্গে মধুসূদন ভট্টাচার্য এও বলেন,“সরকারি অফিস থেকে নতুন বা পুরনো কোনও বই বিক্রি করা যায় না। তদন্তের জন্য কয়েকজন আধিকারিককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে মধুসূদন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন।”
মিডডে মিলের চাল চুরি বা স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতের টাকা নয়-ছয়ের অভিযোগ এই বঙ্গের মাঝে মধ্যেই উঠে থাকে। মিডডে মিলে আর্থিক গরমিলের প্রমাণও অনেক ক্ষেত্রে মিলেছে । কিন্তু স্কুলের পাঠ্যবই পাচারের মতো অভিযোগ তেমন উঠে নি। এবার সেই অভিযোগ ওঠাতে আর কিছু দুর্নীতি বাকি থাকলো না । পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের শিক্ষা দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোনার এই প্রসঙ্গে বলেন, স্কুলপড়ুয়াদের পাঠ্যবই পাচার হয়ে যাচ্ছে, সেটা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে। এই অভিযোগ আমার কাছেও জমা পড়েছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
আর যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই স্কুল পরিদর্শক সৌমেন মণ্ডল বলেন, “অভিযোগ একেবারে মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তিনি বলেন, অভিযোগকারীরা সকলেই ২১ জুলাই শহীদ দিবস পালন করতে গিয়েছিলেন অফিসে কিছু না জানিয়েই।” সৌমেন বাবুর দাবি ওনাদের বেনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি সরব হাওয়াতেই তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। বিষয়টি জানতে পেরে জেলা বিজেপি নেতা দেবজ্যোতি সিংহ রায় বলেন,“ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল।তার বলি করা হচ্ছে একজন আধিকারিককে ।” যদিও বিরোধীদের এই দাবি মানতে চাননি তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস । তিনি বলেন ,“তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ সত্য না মিথ্যা তা তদন্তেই স্পষ্ট হবে । বিরোধীরা এই ঘটনা নিয়ে অহেতুক রাজনীতি করছে ।”।

