এইদিন ওয়েবডেস্ক,শিলিগুড়ি,০৭ অক্টোবর : সোমবার জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটার বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ দিতে যাওয়া মালদা উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক আহত শঙ্কর ঘোষের উপর প্রাণঘাতী হামলা চালায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদল । গুরুতর আহত হয়েছেন খগেন মুর্মু৷ তার বাম দিকের চোখের নিচের হাড় ভেঙে গেছে৷ আহত হন শঙ্কর ঘোষও ৷ দু’জনেই বর্তমানে মাটিগাড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ আজ মঙ্গলবার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন সাংসদ খগেন মুর্মুর স্বাস্থ্যের খবর নিতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । সেই ভিডিও রেকর্ড করে মমতার রাজনৈতিক সৌজন্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস । বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ । তিনি মমতার এই সৌজন্যতাকে “তৃণমূল কংগ্রেসের একটা ঘৃণ্য রাজনীতির উদাহরণ” বলে অবিহিত করেছেন।
শঙ্কর ঘোষ একটি ভিডিও বার্তায় বলেছে, ‘সংবাদ মাধ্যমের কাছে জানতে পারলাম যে মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালে এসেছিলেন । আসলে দুপুরে আমাকে জানানো হয়েছিল মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালে আসতে পারেন সাংসদ এবং আমাকে দেখতে । আমি সম্মতি দিইনি । আর মাননীয় সাংসদ এতটাই গুরুতর আহত যে কথা বলার অবস্থায় নেই । ফলে সম্মতি দেওয়ারও ব্যাপারই নেই । মুখ্যমন্ত্রী এটা ভাল করে জেনেই আইসিইউ-তে গিয়ে সাংসদের সঙ্গে দেখা করতে যান । শুনেছি দেড় মিনিটেরও কম সময় ছিল । এই সময়ের মধ্যেই তার ফটোশুট টিম একটা ভিডিও রেকর্ড করে । এবং সেই ভিডিওটা রাজনৈতিক সৌজন্যের পরিচয় দেওয়ার জন্য বাজারে তুলে ধরার চেষ্টা করে । অবশ্য তিনি আমার কাছে আসেননি । হয়তো তিনি ভেবেছিলেন যে কোনো কঠোর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারে তাকে ৷ বিধানসভায় আমি তারই সহকর্মী ।’
তিনি আরও বলেছেন,’এটা হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের একটা ঘৃণ্য রাজনীতির উদাহরণ৷ একদিকে লুম্পেনদের পাটিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ এবং বিধায়ককে রক্তাক্ত করবে । আর আর একদিকে হসপিটালে দেখতে আসবার নাম করে তিনি ওই রাজনৈতিক সৌজন্যতার ফটোশুট করবে । আসলে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ওপরে উত্তরবঙ্গ তথা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কোন আস্থা নেই ।’ তিনি জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে ভারতীয় জনতা পার্টি সাংসদ এবং বিধায়করা তৃণমূলের গুন্ডাগিরি সত্ত্বেও উত্তরবঙ্গের দুর্গত পীড়িত মানুষের কাছে রয়েছে এবং থাকবেও । তা কোনভাবেই তৃণমূল কংগ্রেস আটকাতে পারবেনা।’ বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের বক্তব্য শুনুন 👇
এদিকে তৃণমূলের স্বঘোষিত মুখপাত্র কুনাল ঘোষ দলনেত্রী প্রশংসা গাইতে আসরে নেমে পড়েছেন । তিনি এক্স-এ লিখেছেন,’খগেন মুর্মূকে দেখতে গেলেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এর নাম তৃণমূল কংগ্রেস। মানুষের ক্ষোভের জন্য বিজেপিই দায়ী। কিন্তু ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে শারীরিক আক্রমণ তৃণমূল সমর্থন করে না। নিন্দা করে। আমরা খগেনবাবুর আরোগ্য কামনা করি।’
যদিও আহত সাংসদের ‘আরোগ্য কামনা’ করেই ঘৃণ্য রাজনীতি করতে দেখা গেল তার পরের কথাতেই । এরপর কুনাল লিখেছেন,’সঙ্গে প্রশ্ন, ত্রিপুরায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উপর বিজেপির আক্রমণ ভুলে গেলেন নাকি? আর সিপিএম জমানায় মমতাদির উপর বারবার আক্রমণ? তারপরেও এই ছবিটি প্রমাণ করে দিচ্ছে তৃণমূল আলাদা। মমতাদি অহিংসা, শান্তির পক্ষে। তিনি সৌজন্যের রাজনীতিতে বিশ্বাসী।’
তবে জানা গেছে যে অসুস্থ শরীরে বাবা যখন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন, ঠিক তখন সবটা দেখেও সাংসদ খগেন মুর্মুর ছেলে ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন । মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলা তো দুরের কথা, তাকে ক্ষোভে ফুঁসতে দেখা যায় । কারণ জিজ্ঞেস করতেই রীতিমতো রাগান্বিত স্বরে জানালেন, ‘তৃণমূলের লোকজনই তো বাবার ওপর হামলা চালিয়েছে, তাহলে ওনার সঙ্গে কেন কথা বলব?’