এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৬ আগস্ট : আজ ১৬ আগস্ট ভারতীয় ইতিহাসের একটা রক্তাক্ত দিন । ১৯৪৬ সালের এইদিনে কলকাতায় ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশান ডে’ বা প্রত্যক্ষ কর্ম দিবস ঘোষণা করেছিল সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের নেতা ও তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ । সেই সাম্প্রদায়িক হিংসায় বহু হিন্দু হতাহত হন । কয়েক লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া হয়ে যান। এই ঘটনার স্মৃতিতে প্রতিবছর ‘দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস’ স্মরণ সভার আয়োজন করে আসছে রাজ্য বিজেপি । পাশাপাশি একই দিনে ‘খেলা হবে দিবস’ পালন করছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস । যা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেছেন, ‘এই সরকারের খেলা হবে মানে মোথাবাড়িতে হিন্দু দোকান ভাঙ্গা ও লুট করা । খেলা হবে মানে ধুলিয়ানে মন্দির ভাঙ্গা এবং হরগোবিন্দ দাস, চন্দন দাসের খুন । খেলা হবে মানে সামসেরগঞ্জ । খেলা হবে মনে মানে মহেশতলায় তুলসী মঞ্চ তুলে ফেলে দেওয়া । খেলা হবে মানে হাওড়া শ্যামপুরে দুর্গা প্রতিমা ভাঙ্গা । কলকাতার রাজাবাজারে কালী ঠাকুর ভাঙ্গা, কার্তিক ঠাকুর ভাঙ্গা । বেলডাঙ্গাতে,বজবজের নোদাখালিতে লক্ষ্মী ঠাকুর ভাঙ্গা । খেলা হবে মনে স্কুল কলেজের সরস্বতী পুজো বন্ধ হবে । এটাই হচ্ছে ওদের খেলা হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রকৃত ভারতীয় ও সনাতনীরা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিবর্তন করতে পারেন তাহলে আমি কথা দিচ্ছি যে এই ধরনের শোকের দিনকে ব্যঙ্গ এবং তাচ্ছিল্য করার যে চেষ্টা সরকার করছে তা আমরা প্রতিহত করব । কারন ১৬ ই আগস্ট দা গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং দিবস আমরা ভুলতে পারি না ।’
তিনি বলেন,’এই নির্লজ্জ সরকার ‘খেলা হবে’ বলে খেলা দিবস পালন করছে । এটা ২১ সালে ঘোষণা করার পর আমরা সেদিন তদানীন্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের কাছে গিয়েছিলাম। আমরা বলেছিলাম যে আপনি রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দিন যাতে অন্যদিন খেলা হবে দিবস পালন করে, আজকের দিনটাতে না পালন করে । কারণ আজকে বাঙালি হিন্দুর শোকের দিন । একটা ভয়ংকর অত্যাচার ১৯৪৬ সালের এই দিনে হয়েছিল । কিন্তু তারা মানেননি । তারা খেলা দিবস পালন করছেন । এবং এমন খেলা দিবস হচ্ছে তৃণমূলের গুন্ডারা ফুটবলের লাথি না মেরে রেফারির গায়ে লাথি মারছে । আর রেফারি একজন শিক্ষক,আদিবাসী সমাজ থেকে উঠে আসা ব্যক্তি লক্ষণ মান্ডি । এই লজ্জা রাখার জায়গা আমাদের নেই।’
আজ শনিবার বিকেলে ‘১৯৪৬ দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস’, হিন্দু গণহত্যার স্মরণে কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে পদযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী । তার সঙ্গে বহু সাধুসন্ত উপস্থিত ছিলেন । পদযাত্রা শেষে তিনি একটি পথসভায় বক্তব্য রাখেন । কোন একটি পাঠ্যপুস্তক থেকে ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট কলকাতায় ঘটে যাওয়া হিন্দু নরসংহারের বিবরণ পড়ে শোনান । শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘প্রথম হামলা ঘটে ভোর ৪:৩০ নাগাদ । প্রথম নিহত হয় এক হিন্দু । সেই থেকে শুরু হয়ে চলে ১৮ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত । একজন হিন্দু বাদ যায়নি । অভিনেতা ছবি বিশ্বাস, গনিতজ্ঞ যাদব চক্রবর্তী, কেউ বাদ যাননি । হিন্দু পুলিশ থেকে হিন্দু ছাত্র কেউ বাদ যায়নি । ধর্মতলা রোডের বিখ্যাত কমলালয় স্টোর থেকে লোয়ার সার্কুলার রোডের লক্ষীকান্ত দাসের সাইকেলের দোকান কেউ বাদ যায়নি । রাজা বীরেন্দ্র স্ট্রীটের এর প্রায় সমস্ত হিন্দু বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পলাশীর যুদ্ধের থেকেও বেশি হিন্দুর মৃত্যু হয় ওইদিন । কারণ সকলেই হিন্দু ছিলেন।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং হয়েছিল কারণ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পশ্চিমবঙ্গকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিল । তাই তার লোক সূরাবর্দি এবং কলকাতার মেয়র ওসমান চেয়েছিল হিন্দুদের কোতল করে হিন্দু শূন্য করতে এবং কলকাতার জনবিন্যাস সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে। যাতে কলকাতাকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা যায় । কিন্তু আটকে দিয়েছিলেন দুজন-স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ এবং ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী।’
শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে আহ্বান জানান,’আগামী দিনে যাতে একটাও ‘দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস’ যাতে না হয় সেজন্য আপনারা ঐক্যবদ্ধ হবেন আশা করি ।’
আজ দুপুরে বলিউড পরিচালক বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রীর ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’-এর ট্রেলার লঞ্চ হল কলকাতায় । রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস সেই ট্রেলার লঞ্চ বানচাল করার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ উঠছে । শুভেন্দু অধিকারী পরিচালকের ভুয়সী প্রশংসা করে বলেছেন,’আমরা এখান থেকে বিবেক অগ্নিহোত্রী মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাবো । কারণ তিনি কাশ্মীর ফাইলসের মত আজ বেঙ্গল ফাইলস রিলিজ করেছেন । যার মধ্যে দিয়ে বাংলার প্রতিটা কোণে ৪৬-এর গণহত্যার কাহিনী মানুষের সামনে নতুন করে উঠে আসবে ।’
আসাদ সে তিনি জানান যে ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’ বা ‘দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস’-এর সময় হিন্দুদের ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া গোপাল মুখার্জি ওরফে গোপাল পাঁঠার মূর্তি উদ্বোধন হবে আজ কলকাতায় । এই বিষয়ে তিনি বলেন, একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে এই প্রথম সন্ধে ছটায় কলকাতায় গোপাল মুখার্জির মূর্তি প্রতিষ্ঠা হতে চলেছে । এটা আমাদের কাছে একটা বড় পাওনা যে ৮০ বছর পরে আমরা হিন্দু হৃদয় সম্রাট, হিন্দুদের রক্ষাকর্তা গোপাল মুখার্জিকে মহানগর কলকাতাতে প্রতিষ্ঠা করতে পারলাম ।’।