এইদিন ওয়েবডেস্ক,মুর্শিদাবাদ,২৩ ডিসেম্বর : ওয়াকফ সংশোধিত আইনের প্রতিবাদের নামে সাম্প্রদায়িক হিংসায় নৃশংসভাবে খূন হওয়া মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের হরগোবিন্দ দাস ও তাঁর ছেলে চন্দন দাসের ১৩ জন ঘাতককে আজ মঙ্গলবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি দোষীদের মোট ১৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে জঙ্গিপুর মহকুমা আদালত। সাজাপ্রাপ্ত ১৩ জন আসামির নাম হলো : দিলদার নদাব (২৮), আসমাউল নদাব ওরফে কালু (২৭), এনজামুল হক ওরফে বাবলু (২৭), জিয়াউল হক (৪৫),ফেকারুল সেখ ওরফে মহক (২৫),আজফারুল সেখ ওরফে বিলাই (২৪), মনিরুল সেখ ওরফে মনি (৩৯), একবাল সেখ (২৮),নুরুল ইসলাম (২৩),সাবা করিম (২৫),হযরত সেখ ওরফে হযরত আলী (৩৬), আকবর আলী ওরফে একবর সেখ (৩০) এবং ইউসুফ সেখ (৪৯)।
চলতি বছরের ১২ এপ্রিল, ওয়াকফ আইন সংশোধনী নিয়ে এলাকায় বিক্ষোভ চলাকালীন জঙ্গিপুর মহকুমার সামশেরগঞ্জ,ধুলিয়ান সহ বিভিন্ন এলাকার হিন্দুদের ঘরবাড়ি, দোকানপাটে হামলার ঘটনা ঘটে । ব্যাপক ভাঙচুর,লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে । সেই সময় পেশায় পেশায় মৃৎশিল্পি ও সিপিএমের সমর্থক হরগোবিন্দ দাস ও তাঁর ছেলে চন্দন দাসকে বাড়ির দরজা ভেঙে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় বের করে এনে পশু কাটার অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করে । অভিযোগ,ঘটনাস্থলের কিছুটা দুরে থানায় সাহায্যের জন্য বারবার ফোন করেও পুলিশের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি । এদিকে ঘাতকরা পিতাপুত্রের মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকে বলে অভিযোগ ।
এই নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্তকারী দল বা ‘সিট’ (SIT) গঠন করা হয় । তদন্তের পর ১৩ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ । ৯৮৩ পৃষ্ঠার ওই চার্জশিটে ঘটনার পৈশাচিকতার বর্ণনা দেওয়া হয়েছিল। মামলায় মোট ৩৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় । গত ১৬ ডিসেম্বর মামলার শুনানি শেষ হয়েছিল। সোমবার কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় অভিযুক্তদের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক অমিতাভ মুখোপাধ্যায় তাঁদের দোষী সাব্যস্ত করেন এবং সাজা ঘোষণা করেন।
জঙ্গিপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এটি অত্যন্ত নৃশংস এবং বিরল একটি অপরাধ ছিল। আমরা প্রথম থেকেই আদালতের কাছে সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানিয়েছিলাম। পুলিশের পেশ করা ৯৮৩ পাতার চার্জশিট এবং ৩৮ জন সাক্ষীর বলিষ্ঠ বয়ান এই মামলা প্রমাণ করতে সাহায্য করেছে। ১৫ লক্ষ টাকার যে জরিমানা করা হয়েছে, তার একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দেওয়ার আবেদন জানানো হতে পারে।’ অন্যদিকে, আসামী পক্ষের আইনজীবীরা এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, মামলার রায়ে কিছু আইনি ফাঁক রয়ে গিয়েছে ।এই মামলার দুই তদন্তকারী অফিসার (IO)—জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার এসআই মিঠুন হালদার ও ইন্সপেক্টর প্রসূন মিত্র ।।

