প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৩১ জুলাই : অডিটের কাগজপত্র হাতাতে তালা ভেঙে স্কুল ঘরে ঢুকে আলমারির তালা ভেঙে ফেলে চোরেরা। কিন্তু সেইসব না পেয়ে একেবারে খালিহাতে ফিরে যাওটা বোধহয় চোরেদের কাছে নীতি বহির্ভূত ঠেকেছিল। তাই আমেজ করে চা বিস্কুট খেয়ে মিডডে মিলের জন্যে স্কুলে রাখা থাকা পোস্ত, সর্ষের তেল সহ নানা রকম মশলা নিয়ে পালিয়ে গেল চোরেরা । অবাক করা এমনই ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারির দেবীপুরের আলিপুর ইউনাইটেড নিম্ন বুনিয়াদি স্কুলে।
এই ঘটনা চাক্ষুষ করে রবিবার সকালে অভিভাবক ও প্রধান শিক্ষক কার্যত স্তম্ভিত হয়ে যান। তাঁরা এও দেখেন,একই দেওয়ালে থাকা দেবীপুর স্টেশন হাইস্কুলেও প্রধান শিক্ষকের ঘর-সহ আরো বেশ কয়েকটি ঘরের তালাও ভাঙা অবস্থায় রয়েছে । খবর পেয়ে মেমারি থানার পুলিশ ওই স্কুলে তদন্তে যায়। তবে কোন চোর ধরা পড়ার খবর পর্যন্ত পাওয় যায়নি ।
দেবীপুরের আলিপুর ইউনাইটেড নিম্ন বুনিয়াদি স্কুলে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পঠন পাঠন হয়। ছ’টি ক্লাসের মোট পড়ুয়া ২৩৮ জন। শিক্ষক আছেন পাঁচ জন। স্থানীয়রা এদিন বলেন, স্কুলের বাইরে মিড-ডে মিলের চাল পড়ে থাকতে দেখে আমাদের সন্দেহ হয়।আমরা এর দেখি স্কুল ঘরের দরজা খোলা রয়েছে। আরো দেখা যায় চায়ের পাতা, বিস্কুটের প্যাকেট এমনকি খাওয়া চায়ের কাপও আশেপাশে গড়াগড়ি খাচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি,কিছু সমাজবিরোধী প্রতিদিন বিদ্যালয় চত্বরে আড্ডা দেয়। তারা এই অপকর্মে জড়িত থাকতে পারে ।
নিম্ন বুনিয়াদি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সোমা সাহা জানান, “আগামী ৪ অগস্ট তাঁর স্কুলে অডিট হওয়ার কথা রয়েছে।চোরেরা সম্ভবত সেই সংক্রান্ত নথি চুরি করতে রাতের অন্ধকারে তালা ভেঙে স্কুলে ঢোকে । কিন্তু নথি পায়নি, কারণ কাজের প্রয়োজনে ওই সব নথি তিনি স্কুলে না রেখে তিনি নিজের কাছে রেখেছিলেন।শুধুমাত্র কম গুরুত্বপূর্ণ যে দুটি নথি স্কুলে ছিল সেগুলি চোরেরা নিয়ে পালিয়েছে ।
প্রধান শিক্ষিক আরো জানান,সোমবার স্কুলে মিড-ডে মিলে পড়ুয়াদের পোস্ত দেওয়ার কথা ছিল, সে জন্যেই আগেথেকে পোস্ত এনে স্কুলে রাখা ছিল
। এছাড়াও এক লিটার সর্ষে তেলের প্যাকেট, নানা রকম মশলা এনে স্কুলের একটি আলমারিতে মজুত রাখা ছিল। চুরি করতে এসে চা-বিস্কুট খাওয়ার পরে চোরেরা ওই পোস্ত ও সব মশলা নিয়ে পালিয়েছে। চুরির সবিস্তার উল্লেখ করে রবিবার বিকেলে প্রধান শিক্ষিকা সোমা সাহা মেমারি থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ।
দেবীপুর স্টেশন হাইস্কুলেও প্রধান শিক্ষকের ঘর-সহ একাধিক ঘরের তালা ভাঙা থাকা নিয়েও এদিন এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায় । ওই স্কুলের টিচার-ইন চার্জ মহম্মদ আকবর হোসেন বলেন,চোরেরা একাধিক ঘরের তালা ও আলমারি ভেঙেছে। চোরেরা স্কুলে থাকা ল্যাপটপ পর্যন্ত চুরি করে না নিয়ে গেলেও সিসি ক্যামেরার হার্ড ডিস্ক নিয়ে পালিয়েছে।অন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিয়ে গেছে কিনা সেটা সোমবার স্কুল খোলার পর সব খতিয়ে দেখে বুঝতে পারা যাবে।চোরেদের উদ্দেশ্য কি ছিল সেটাই বুঝতে পারা যাচ্ছে না বলে আকবর হোসেন মন্তব্য করেন“।পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, অডিট-সংক্রান্ত নথি চুরি করতেই দুষ্কৃতীরা নিম্ন বুনিয়াদি স্কুলে ঢুকেছিল। পালানোর সময় সিসি ক্যামেরা দেখে তার হার্ড ডিস্ক নেওয়ার জন্যেই হাই স্কুলে ভাঙচুর চালায় ।।