শ্যামসুন্দর ঘোষ,কালনা(পূর্ব বর্ধমান),০৯ নভেম্বর : টিউশন শেষের পর মেয়ের অপেক্ষায় থাকা মায়ের সঙ্গে দেখা না করেই উধাও হয়ে গিয়েছিল দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী । পরিচিতদের সাথে মা খোঁজাখুঁজি শুরু করলে সেই সময় মেয়ের ফোন আসে । ‘ওরা আমাকে বাঁচতে দিল না মা’- শুধু একথা বলেই ফোন কেটে দেয় ওই ছাত্রী । তারপর রেলপুলিশ ফোনে খবর দেয় যে রেল লাইনের পাশ থেকে ছাত্রীর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে । শুক্রবার সন্ধ্যায় পূর্ব বর্ধমান জেলার অম্বিকা কালনার রেল স্টেশনের অদূরে রেল লাইনের পাশে ওই ছাত্রীর রক্তাক্ত নিথর দেহ উদ্ধারের পর রহস্য দাঁনা বেঁধেছে । মৃতের নাম অঙ্গনা হালদার(১৮) । তাকে চলন্ত ট্রেন থেকে ঠিলে ফেলে মেরে ফেলা হয়েছে নাকি সে আত্মঘাতী হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয় । যদিও মৃতের মা রিঙ্কু হালদার(৫২) রেলপুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সন্দেহ প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে তার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে খুন । এখন কারা মেয়েটিকে ‘বাঁচতে দিল না’ তা জানতে এই রহস্যমৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ ।
জানা গেছে,কালনা থানার আটঘড়িয়া গ্রামে বাড়ি মা রিঙ্কু হালদারের । তাঁর স্বামী জয়দেব হালদার বেশ কিছু সময় আগে মারা গেছেন । তাঁদের মেয়ে অঙ্গনা দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন। রিঙ্কুদেবী জানিয়েছেন,তাঁর মেয়ে কালনা এলআইসি অফিসের পাশের বাসিন্দা এক গৃহশিক্ষকের কাছে সপ্তাহে ২-৩ দিন করে টিউশন পড়তে যেত । শুক্রবার টিউশন পড়তে যাওয়ার দিন ছিল।তিনি জানান,অনান্য দিনের মত শুক্রবার বিকেল ৫ টা নাগাদ তিনি মেয়েকে শিক্ষকের কাছে পৌঁছে দিয়ে আসেন । তারপর মেয়েকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাশের এক পরিচিতের বাড়িতে মেয়ের ছুটি হওয়ার অপেক্ষা করছিলেন ।
রিঙ্কুদেবী জানিয়েছেন,তার মেয়ে ছুটি হওয়ার ১ ঘন্টা আগে ৬:০৫ নাগাদ শিক্ষকের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় । কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পরেও ছুটি হচ্ছে না দেখে তিনি শিক্ষকের কাছে খবর নিতে যান । কিন্তু তিনি জানতে পারেন যে তার মেয়ে অনেকক্ষণ আগেই ছুটি নিয়ে চলে গেছে । এরপর তিনি স্থানীয় লোকজনদের সাথে নিয়ে হন্যে হয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন । তারই মাঝে সন্ধ্যা ৬:৫২ নাগাদ
মেয়ের ফোন আসে তার মোবাইল ফোনে । “ওরা আমায় বাঁচতে দেবে না মা” বলেই তার ফোন কেটে দেয় । তার ঠিক কিছু পরেই কালনা জিআরপি ফোন করে তার মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানায় । তিনি বলেছেন,’যে জায়গায় আমার মৃতদেহ পড়েছিল সেখানে তখন ঘন অন্ধকার ছিল । আমার মেয়ে কিছুতেই সেখানে যেতে পারে না । আমি নিশ্চিত যে আমার মেয়েকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে ।’
এদিকে ওই ছাত্রীর এই প্রকার মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে । মেয়েটি কাদের দিকে ইঙ্গিত করেছিল তা এখনো স্পষ্ট নয় । পুলিশ মৃতদেহটি আজ শনিবারে ময়নাতদন্তের জন্য কালনা মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছে । পাশাপাশি ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।।