এইদিন ওয়েবডেস্ক,কোচবিহার,১৫ জুন : লোকসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যজুড়ে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা ঘটেই চলেছে । রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বহু বিজেপি কর্মী সন্ত্রাসের জেরে ঘর ছাড়া রয়েছেন বলে অভিযোগ । আজ শনিবার ঘর ছাড়া দের অভাব অভিযোগ শুনতে কোচবিহারে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতার শুভেন্দু অধিকারী । কোচবিহার জেলা বিজেপি কার্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া এলাকার মহিলারা শুভেন্দুর কাছে তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নৃশংসতার কাহিনী বর্ণনা করেছেন । দিনহাটা বিধানসভার এলাকার এক গৃহবধূ অভিযোগ করেছেন যে মহিলারারেশন আনতে গেলে তাদের কাপড় খুলে নগ্ন করে রেশন কেড়ে নিয়ে পালাচ্ছে তৃণমূলের গুন্ডারা । পাশাপাশি তিনি একটি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন । ওই বধুর অভিযোগ যে তাদের এলাকার মুসলিমরাই সব থেকে বেশি অত্যাচার চালাচ্ছে ।
শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কথা বলার সময় দিনহাটা বিধানসভার এলাকার ওই মহিলা বলেন,’চার তারিখের পর থেকে আমাদের রেশন নিতে দেয়নি । আমাদের পাড়ার মুসলিমরা আমাদের রেশন কেড়ে কেড়ে নিত । বলত, দিদির রেশন তোরা কেন নিবি? নোংরা নোংরা ভাষা বলতো । মহিলাদের কাপড় ধরে টেনে উলঙ্গ করে তারপর রেশন কেড়ে নিয়ে চলে যেত । মুসলিমরা আমাদের প্রতি অত্যাচার বেশি করছে । আমরা বিজেপি করি এটাই আমাদের অপরাধ ।’ বধূর আরও অভিযোগ,’ওরা বলে তোমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বাড়িতে ফেলে দিয়ে চলে যাব ।’ প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ বাবাকে মারধরের হুমকির কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন ওই বধূ । তিনি বলেন, ‘১৯ তারিখের পর আরও বেশি অত্যাচার হবে বলে শাসিয়ে গিয়েছে গুন্ডারা ।’
দিনহাটার বধূর বক্তব্য শুনুন 👇
নাটাবাড়ি বিধানসভার ২৩৭ নম্বর বুথের বাসিন্দা চিত্রমালা অধিকারী নামে এক ঘর ছাড়া গৃহবধূ বলেন, ‘আমার বাড়িতে ভাঙচুর করে৷ গ্যাস সিলিন্ডার থেকে সবকিছু ফেলে দিয়ে চলে যায় । বাড়ির সবকিছু ভাঙচুর করে দিয়েছে । সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারে না । বিজেপিকে সমর্থন করেছে বলে সাধারণ মানুষকে রাস্তা দিয়ে গেলেই মারছে । এভাবে চলতে থাকলে আমার ছেলেকে মানুষ করতে পারবোনা ।’
পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয় শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘কোচবিহার দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে গেছে । পুলিশ মন্ত্রী এবং উদয়ন গুহরা বিশেষ সম্প্রদায়ের গুন্ডাদের দিয়ে কোচবিহার জেলার রাজবংশী,নমঃশূদ্র সহ বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচার পালিয়ে আসা পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়ের উপর সীমাহীন অত্যাচার করছে ।’ তিনি বলেন,’এখানে যেভাবে মানুষ অত্যাচারিত হয়েছেন তা ৭-৮ জনের মুখে শুনলাম । আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব । ঘর ছাড়াদের দায়িত্ব আমরা কাঁধে তুলে নিলাম । যতজন আহত হয়েছে পার্টি তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও নেবে । যে সমস্ত পঞ্চায়েতগুলো খুলতে দিচ্ছে না তা নিয়ে বিডিও ও জেলাশাসককে চিঠি করা হয়েছে । এরপরেও যদি পুলিশ প্রশাসন কোন পদক্ষেপ না করে তাহলে আক্রান্তদের নিয়ে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব ।’
কোচবিহারের জেলাশাসকের বিরুদ্ধে বিরোধী দলনেতার অভিযোগ,’আমরা আজ দুপুর দুটোর সময় জেলাশাসনের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম।জেলাশাসক অরবিন্দ মিনা, যিনি এখানকার তৃণমূলের সভাপতি । তিনি আমাদের দেখা করার অনুমতি দেননি । এটা দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যে জেলায় যে সন্ত্রাস চলছে সেটা একজন নির্বাচিত বিধায়কের মুখ থেকে শুনতে তিনি রাজি নন ।’ প্রসঙ্গত,ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই কোচবিহার জেলায় বিজেপি শাসিত একাধিক পঞ্চায়েত খুলতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ । এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,
‘তৃণমূল জানে যে এটা প্রকৃত রায় নয় । সেই কারণে ওরা হুমকি, জরিমানা,বাড়ি ভাঙচুর এবং জোর করে তৃণমূলের পতাকা হাতে ধরিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে কোচবিহারের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব হাতে নিতে চায় । বুথ স্তরে বিজেপিকে শেষ করতে চায় । আমরা এটা হতে দেব না । আমি আবার আসবো।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আজ সিদ্ধান্ত হয়েছে নিশীথ প্রামাণিকের নেতৃত্বে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সিতাই, নাটাবাড়ি, কোচবিহার দক্ষিণ এবং দিনহাটা প্রভৃতি সবচেয়ে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে তারা পরিদর্শন করবে ।’ তিনি আক্রান্ত বিজেপি কর্মী সমর্থকদের নিরাপত্তার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে না ফেরার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন । পাশাপাশি পুলিশের নিরাপত্তায় পঞ্চায়েতের পরিষেবা স্বাভাবিক করার দাবি জানান তিনি ।।