প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১১ এপ্রিল : বিজেপির কেউ উস্কানি দেওয়া কথা বলছেন না। সিংহাসনটা আগলে রাখার জন্যেই ওরা উস্কানি দিচ্ছে ।উস্কানি দিয়েই চারটে মায়ের কোল খালি করা হল।শীতলকুচিতে গুলি কাণ্ডে চারজনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে রবিবার পূর্ব বর্ধমানের রায়নার জনসভা থেকে এই ভাবেই নাম না করে তৃণমূলকে বিঁধলেন মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তী । ঘটনার জন্য অনুতাপ প্রকাশ করে মিঠুন চক্রবর্তী উস্কানির ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য জনসভায় উপস্থিত সবাইকে আহ্বান জানান।একই সঙ্গে মহাগুরু তৃণমূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন,’ওরা পলিটিক্স করতে আসেনি – বিজনেস করতে এসেছে’। পাশাপাশি তিনি এও বলেন , বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় এলে কোনও দাঙ্গা হবে না ,সন্ত্রাস হবে না , হিংসা হবে না । এটা গ্যারাণ্টি ।
রায়না বিধানসভার বিজেপি প্রার্থী মানিক রায়ের সমর্থনে এদিন রায়না হাই স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচনী জনসভা ।সেই সভার প্রধান বক্তা ছিলেন সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া বলিউড অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী । ভিড়ে ঠাসা জনসভায় প্রার্থীকে পাশে নিয়ে মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তী এদিন আগাগোড়াই নাম না করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে শুর চড়ান । তিনি বলেন ,“শনিবার শীতলকুচিতে যে ঘটনা ঘটেছে তার জন্য আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে রয়েছ। উস্কানি দিয়ে চারটে মায়ের কোল খালি করা হল । কেন, এইসব করার কারণ কি । শুধু সিংহাসনটা আগলে রাখার জন্য এইসব করতে হবে।জনসভায় উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে মহাগুরু আহ্বান জানিয়ে বলেন ,’আমি হাতজোড় করে অনুরোধ করছি ওদের উস্কানির ফাঁদে পা দেবেন না ।ওরা উস্কানি দিয়ে নিজেদের বাড়ি চলে যাবে । আর কোনও না কোন ময়ের কোল খালি হবে । কেউ থাকবেনা আপনাদের সঙ্গে ।মহাগুরু আফসোসের শুরে বলেন , এই ভাবে যদি কেউ রাজনীতি করে তাহলে আমরা কি করতে পারি ! আমাদের বিজেপির কেউ উস্কানি দেওয়া কথা বলছেন না । আমরা বলছি আমরা নীতির লড়াই করবো । যার নীতি ভালো লাগবে তাকে মানুষ ভোট দিয়ে জিতিয়ে আনবে“।
বাংলায় বিজেপি ক্ষমাতায় আসলে কি কি উন্নয়ন কাজ করবে তার ফিরিস্তি এদিন জনসভা থেকে তুলে ধরেন মিঠুন চক্রবর্তী । তিনি বলেন,আমরা যাযা করতে পারবো ঠিক ততটুকুই বলবো । “বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে প্রথম আমাদের জেলা গুলিতে যত জেনারেল হাসপাতাল আছে তার জেনারেল ওয়ার্ড শীততাপ-নিয়ন্ত্রিত করা হবে । কারণ আমার কোনও বোন যখন সন্তানের জন্ম দেবে সেই সময়ে যেন সে একটু আরাম পায় । তার জন্য । দ্বিতীয়ত বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে আমরা বিদ্যুৎতের দাম কমাবোই । তৃতীয়ত মা , বোন ও মহিলারা রাজ্যের যে কোন গণপরিবহনে চড়বেন , এক পয়সা ভাড়া দিতে হবে না । সব ফ্রি । মেয়েদের কেজি থেকে শুরু করে স্কুল ও কলেজের পড়াশুনা সব ফ্রিতে হবে । চতুর্থত -যতজন বিধবা মা বোন আছেন তাঁদের অ্যাকাউন্টে প্রত্যেক মাসে ৩ হাজার টাকা পেনশন ঢুকে যাবে । এছাড়াও বাড়ির কোন মেয়ের বয়স যখন ১৮ বছর হয়েযাবে , সে হিন্দু, মুসলিম , খ্রীষ্টান, শিখ যেই হোক তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২ লক্ষ টাকা ঢুকে যাবে । এরজন্য কোন এজেন্ট বাবুকে এক পয়সা দিতে হবে না” ।
‘আয়ুস্মান ভারত’ এই রাজ্যে কার্যকর না হওয়া নিয়েও মহাগুরু ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মহাগুরু বলেন ,‘ স্বাস্থ্যসাথী’ হয়েছে তা খুব ভালো ।কিন্তু আড়াই বছর ধরে ‘আয়ুস্মান ভারত’ নিলেন না কেন ?‘ আয়ুস্মান ভারতের’ ফায়দা জানেন ?এই কার্ডটা থাকলে রাজ্যের বাইরে যে কোন ভিন রাজ্যেও চিকিৎসা মিলবে। মিঠুন চক্রবর্তী জানিয়েদেন, যেদিন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসবে ৫ লক্ষ টাকা বীমা আপনাদের জন্য ‘আয়ুস্মান ভারতে’ ধার্য্য হবে । মিঠুন চক্রবর্তী এদিন জনসভায় উপস্থিত মানুষজনকে আও জানিয়েদেন , “আমি যা বলি তা করে দেখাই । আমি সেই বার্তা গুলি আপনাদের কাছে পৌছাচ্ছি যেগুলি আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে করতে চাই। কারণ আমার পিছনে অনেক অনেক বড় হাত রয়েছে“।এরপরেই রেশন দুর্নীতি প্রসঙ্গ সামনে এনে মহাগুরু তৃণমূলের উদ্দেশ্যে বলেন,’ওরা পলিটিক্স করতে আসেনি , বিজনেস করতে এসেছে“ । রাজনীতি বিজনেস নয় । রাজনীতি হল জনগনের সেবা করা । হুংকার ছেড়ে মহাগুরু এরপর ঘোষনা করেন ,এই সরকারকে ( তৃণমূল সরকার) আমরা তুলেই ছাড়বো । আর প্রমাণ করে দেখাবো ’সোনার বাংলা’ কিভাবে গড়তে হয়“ । মহাগুরুর মুখ থেকে এমন বক্তব্য শুনে জনসভায় উপস্থিত মানুষজনের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায় তাহলে কি বিজেপি বাংলায় ক্ষতায় এলে মহুাগুরই মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন !