এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,০২ ডিসেম্বর : আজ মালদার ইংরেজবাজারের রঘুনাথ জিউ তাঁরামাতা ঠাকুরবাড়ীতে ৩৫ ফুট উচ্চ হনুমান মূর্তি উদ্বোধনে গিয়ে রাজ্যে জনবিন্যাসের বামন পরিবর্তন নিয়ে হিন্দুদের সতর্ক করে দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । মন্দিরের সামনে আয়োজিত একটি বিশাল জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এরা(মুসলিমরা) হিন্দুদের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে । কিন্তু জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পর আর ধর্মনিরপেক্ষতা চলেনা। তিনি রাজ্যের হিন্দুর জনসংখ্যার ক্রম অবলুপ্তি পরিসংখ্যান তুলে ধরে হিন্দুদের এক জোট হওয়ার আহ্বান জানান।
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’অন্য ধর্মের অনেক দেশ রয়েছে৷ ইসলাম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধদের জন্য অনেক দেশ আছে । কিন্তু হিন্দুদের একমাত্র আশ্রয়স্থল ভারতবর্ষ । তাই ভারতবর্ষে হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার রয়েছে । এটা শুধু আমার কথা নয় আমাদের ধর্মগ্রন্থ গীতাতেও লেখা আছে “ধর্ম রক্ষতি রক্ষিত” । ধর্ম রক্ষার কাজটা আমাদের সকলকে করতে হবে ।’
তিনি বলেন,’ধর্ম রক্ষার কাজ কেন প্রয়োজন ? বিভীষিকাময় দেশভাগ হল ১৯৪৭ সালে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত যদি কেউ হয়ে থাকে তাহলে সেই হিন্দুরা হয়েছে । যে আফগানিস্তানে একটা সময় শিখ, জৈন, হিন্দু,পারসীদের ছিল, আজ কার্যত সেখানে আমরা শূন্য। পাকিস্তানের সমস্ত বড় বড় নগর লাহোর,করাচি, ইসলামাবাদ প্রভৃতি সব জায়গায় বানিজ্য এবং অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হিন্দু, শিখ, জৈনরা। সেখানে আজ আমরা শূন্য । সমগ্র পাকিস্তানে এক শতাংশ হিন্দু আছে কিনা সন্দেহ । যেখানে দেশ ভাগের সময় আমরা অনেক সংখ্যায় ছিলাম ।
তিনি বলেন,’পরবর্তী সময়ে পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ তৈরি হলো । একটু কাছেই বাংলাদেশের বর্ডার । একেবারে কাছেই চাপাই নবাবগঞ্জ। আমরা সীমান্ত থেকে প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে আছি। ১৯৪৭ সালের এখানে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ৩৩ শতাংশ । ১৯৭১ সালের নেমে হল ২২ শতাংশ৷ আজ সেখানে হিন্দু জনসংখ্যার মাত্র সাত শতাংশ হয়ে গেছে। সেখানে ধুতি পরা মানা, মাথায় শিখা রাখা যাবে না,কপালে চন্দন পরা যাবে না, গলায় তুলসির মালা রাখা যাবে না, মহিলাদের শাখা- পলা সিঁদূর পরা যাবে না । হিন্দু মঠ, মন্দির তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে হিন্দুদেরকে বিভাজিত করা হয়েছিল বলে । দেশভাগের সময় যোগেন মন্ডল বলে একজন লোক হিন্দুদের ভাগ করে দিয়েছিল । এই যোগেন মন্ডল মৃত্যুর আগে কি চিঠি লিখে গেছে সেটাও আমরা পড়েছি । তার পরিনতি কি হয়েছিল ?’
এরপর বিরোধী দলনেতা বলেন,’এরা সব সময় হিন্দুদের সিড়ি হিসাবে ব্যবহার করে এবং জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পরে ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধান, সেকুলারিজম, ধর্ম যার যার উৎসব সবার, তখন এসব চলে না । তখন আমাদের মঠ,মন্দির,কাঁসর, ঘন্টা সব বন্ধ করে দেওয়া হয় । মালদাতেও এমন উদাহরণ রয়েছে । তাই হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ।’
তিনি মুর্শিদাবাদ, কোচবিহারসহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় জনবিন্যাসের আমূল পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার দৃষ্ঠান্ত তুলে ধরে বলেন,’ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ সহ বিভিন্ন জেলা হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। ২০২৭ সালে ভারতবর্ষে জনগণনা হবে, তখন দেখতে পাবেন যে পশ্চিমবঙ্গে আমরা ৬৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছি । যে কারণে ভরতপুরের তৃণমূলের বিধায়ক হুমায়ুন কবির বলতে সাহস পায় যে আমরা ৭০ শতাংশ আর ওরা ৩০ শতাংশ। ইচ্ছা করলে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেবো ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’কেউ বলে ধর্ম যার যার উৎসব সবার । কিন্তু বিরোধী দলনেতা, যিনি হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী, তিনি বলেন ধর্ম যার যার রক্ষা করার দায়িত্বও তার তার ।’ তিনি অভিযোগ করেছেন যে হিন্দুদের ভাষার ভিত্তিতে, জাতপাতের ভিত্তিতে বিভাজন করা হয় । যার সুযোগ অন্যরা পেয়ে যায় । হিন্দুদের দুর্বল করার উদ্দেশ্যেই ভাষা এবং জাতপাতের কথা বলা হয়। তিনি বলেন,’তাই আপনাদেরকে ভাষার নামে জাতের নামে বিভক্ত হওয়া যাবেনা ।’ তিনি হিন্দু ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে ধর্মীয় রীতিনীতি ও পূজা পার্বণ নিয়মিত অনুসরণ করার পরামর্শ দেন ।।

