এইদিন ওয়েবডেস্ক,লন্ডন,০৬ সেপ্টেম্বর : ব্রিটেনের লেস্টারের দীপাবলি উদযাপন – যা ভারতের বাইরে সবচেয়ে বড় আকারে এতদিন ধরে পালন করা হয়ে আসছিল – এই বছর সেই উদযাপনের উপর লাগাম টেনে ধরা হয়েছে । ইসলামী মৌলবাদীদের শক্ত ঘাঁটি লেস্টারের এবারে হিন্দুরা দীপাবলি উৎসব জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করতে পারবেন না। লেস্টার সিটি কাউন্সিল জানিয়েছে আগামী ২০ অক্টোবর বেলগ্রেভ রোড উদযাপনের সময় কোনও আতশবাজি এবং ঐতিহ্যবাহী মঞ্চ প্রদর্শনী থাকবে না । এর পেছনে জননিরাপত্তার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে । লেস্টার সিটি কাউন্সিলের নির্দেশ অনুযায়ী, প্রতি বছরের মতো এ বছরও বেলগ্রেভ রোডের বিখ্যাত ‘গোল্ডেন মাইল’ আলোকসজ্জায় আলোকিত করা হবে এবং ২০২৫ সালের ২০ অক্টোবর রাস্তাঘাটেও যান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে এবার কোনও আতশবাজি হবে না, মঞ্চে কোনও অনুষ্ঠানও হবে না। বিগত বছরের মতো দীপাবলি মেলাও অনুষ্ঠিত হবে না ।
নগরীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা গোষ্ঠীর (এসএজি) নির্দেশের পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে কাউন্সিল, পুলিশ এবং জরুরি পরিষেবার প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসএজি জানিয়েছে যে গত বছর দীপাবলিতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল, যা নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয়।২০ অক্টোবর বেলগ্রেভ রোড উদযাপনের সময় কোনও আতশবাজি এবং ঐতিহ্যবাহী মঞ্চ প্রদর্শনী থাকবে না, সিটি কাউন্সিল জানিয়েছে,খাবারের স্টল এবং মজার মেলার রাইড সহ দিওয়ালি ভিলেজও চলবে না । গত বছর এই ইভেন্টে প্রায় ৫০,০০০ লোকের সমাগম হওয়ার পর, শহরের নিরাপত্তা উপদেষ্টা গোষ্ঠী উদ্বেগ প্রকাশ করার পর এটি করা হয়েছে। এই দলটির মধ্যে সিটি কাউন্সিল, পুলিশ এবং অন্যান্য জরুরি পরিষেবার প্রতিনিধিরা রয়েছেন, এনিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হিন্দুরা । হিন্দুরা দাবি করেছে,দিওয়ালিতে আতসবাজি হল মূল আকর্ষণ । সেটাই বন্ধ করে দেওয়া হলে উৎসব গুরুত্ব হারাবে । যদিও “অতিরিক্ত কার্যক্রমের” পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে লেস্টার কর্তৃপক্ষ ।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেস্টারের সাংসদ শিবানী রাজা এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে দীপাবলি উদযাপন হুমকির মুখে। শিবানী রাজা ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টে লিখেছেন,’আমাদের দীপাবলি উদযাপন এখনও বিপদের মধ্যে, আমাদের উদযাপন বিপদের মধ্যে।’ সাংসদ আরও লিখেছেন, ‘ভারতের বাইরে, লেস্টারে দীপাবলি সবচেয়ে বড় উৎসব এবং এটি আমাদের শহরের প্রধান আকর্ষণও। তা সত্ত্বেও, লেস্টার সিটি কাউন্সিল এখন জননিরাপত্তার নামে এই উৎসব সীমিত করতে চায়।’
লেস্টার সিটির মেয়র স্যার পিটার সোলসবি বলেছেন,’লেস্টারের দীপাবলি উদযাপন যতটা সম্ভব সুন্দর করে তোলার মহান আকাঙ্ক্ষা ভাগ করে নিই আমরা । আমি ভেবেছিলাম স্থানীয় সম্প্রদায়ের দ্বারা উত্থাপিত কিছু পরামর্শ অর্জনযোগ্য ছিল, কিন্তু নিরাপত্তা উপদেষ্টা গোষ্ঠী সেগুলি সব প্রত্যাখ্যান করেছে । আমি হতাশ যে এর ফলে কোনও অতিরিক্ত কার্যক্রম থাকবে না, এবং আমি আশা করি এটি এমন কিছু যা এসএজি আগামী বছর পর্যালোচনা করবে।’
ব্রিটেনে দীপাবলি উদযাপন নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। গত বছর ২০২৪ সালে, প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সরকারের সময়, ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে দীপাবলি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাংস এবং মদ পরিবেশিত হয়েছিল। তখনও হিন্দু, শিখ এবং জৈন সম্প্রদায়ের লোকেরা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এটিকে ধর্মীয় অনুভূতির বিরুদ্ধে বলে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। লেস্টারের সাংসদ শিবানী রাজা তখনও স্টারমারকে একটি চিঠি লিখেছিলেন যে খাবারের মেনু ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসারে নয়। তিনি ভবিষ্যতে নির্দেশনা দেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
লেস্টারে হিন্দু বিরোধী পরিবেশ তৈরির চেষ্টা
যুক্তরাজ্যের লেস্টারে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৮ শতাংশ মানুষ বাস করে। এই কারণেই লেস্টারের দীপাবলি সারা বিশ্বে বিখ্যাত। এর বাইরেও অন্যান্য হিন্দু উৎসবও মহা জাঁকজমকের সাথে পালিত হয়। তবে, অনেকবার শহরে হিন্দু-বিরোধী পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। সম্প্রতি গণেশ চতুর্থীর শোভাযাত্রায় গেরুয়া পতাকা উত্তোলন নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। মুসলিম কাউন্সিল অফ ব্রিটেন (এমসিবি) যখন এটিকে ‘হিন্দু মৌলবাদ’ বলে অভিহিত করেছে এবং ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
একই সাথে, ২০২২ সালে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের পর সহিংসতার ক্ষত এখনও সেরে ওঠেনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় হিন্দুদের বিরুদ্ধে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এই গুজবের পরে, হিন্দু বাড়ি এবং মন্দিরে আক্রমণ করা হয়েছিল, গেরুয়া পতাকা অপমান করা হয়েছিল এবং জনসমক্ষে মানুষদের ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল । কিছু সময় পরে, ২০২২ সালের নভেম্বরে ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে সহিংসতা ‘হিন্দুত্ব মৌলবাদ’ দ্বারা নয়, বরং ইসলামিক প্রচারণা দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল।।