সঞ্জয় মণ্ডল,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৩ জুন : পূর্ব বর্ধমান-কাটোয়া ব্রড গেজ লাইন থেকে প্রায় ২০ ফুট দূরে রয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারের সাব রেজিস্টার অফিস । অফিসের উলটো দিকে বসেন দলিল লেখকরা । রেলের আন্ডারপাস থাকলেও অধিকাংশ মানুষ সাধারণত শর্টকাটে রেললাইন অতিক্রম করেই অফিসে যাতায়ত করে । অবশ্য বৃষ্টি হলে রেলের আন্ডারপাস জলে ডুবে যাওয়ায় রেললাইন অতিক্রম করেই অফিসে যাতায়াত করতে বাধ্য হন উপভোক্তারা । ফলে সর্বদা বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায় । সেই কারনে ভাতারের সাব রেজিস্টার অফিস স্থানান্তরের দাবি উঠছে বহু দিন থেকে ।
জানা গেছে,ভাতারের বর্তমান সাব রেজিস্টার অফিসটি ২০০৬ সালে ভাতার বাজারের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে উঠে যায় । তার আগে রেললাইনের পশ্চিমদিকে সন্তোষসায়ের পুকুর পাড়ের একটি পুরনো ভবনে অফিসের কাজকর্ম চলত । ২০০৭ সালে ন্যারো গেজ বন্ধ হয়ে ব্রডগেজের কাজ শুরু হয় । ব্রডগেজে ট্রেন চালু হয় ২০১২ সালে । ব্রডগেজ হওয়ায় রেল লাইনের উচ্চতাও অনেক বেড়ে যায় । এদিকে পুরনো অফিসের সামনে আন্ডারপাস করে দেওয়া হলেও বৃষ্টির সময় জলে ডুবে থাকায় তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে ওঠে । যেকারণে রেললাইন টপকেই যাতায়াত করতে বাধ্য হন উপভোক্তারা । প্রতিদিন গড়ে শতাধিক উপভোক্তা বিভিন্ন কাজে আসেন অফিসে । ফলে ভিড় লেগেই থাকে ।
রাধানগরের বাসিন্দা রতন শেখ বলেন,’যখন কোনো অসুস্থ বা বৃদ্ধবৃদ্ধাকে রেজিস্ট্রি অফিসে আনতে হয় তখন খুব বিপাকে পড়তে হয় আমাদের । অফিস অব্দি গাড়ি তো দূর, টোটো পর্যন্ত ঢোকে না । যেকারণে অসুস্থ বা বৃদ্ধবৃদ্ধাকে কোলে করে রেললাইন টপকে অফিস নিয়ে যেতে হয় । ভাতারের রেজিস্ট্রি অফিসটি খুবই বাজে জায়গায় রয়েছে । আমাদের দাবি অবিলম্বে অফিসটা সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হোক ।’ একই কথা বলেছেন ভাতার থানার বালসিডাঙ্গা গ্রামের সুফলচন্দ্র শিট নামে এক প্রৌঢ় । তিনি বলেন, ‘যাত্রীবাহী ট্রেন ছাড়াও মাঝে মধ্যেই মালগাড়ি বা ট্রেনের ইঞ্জিন যাতায়াত করে । যেকোনো সময়ে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে ।’ তিনিও অফিস স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছেন । যদিও এই বিষয়ে ভাতারের সাব রেজিস্টার অফিস কর্তৃপক্ষের তরফে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ।
সূত্রের খবর,ভাতার সাব রেজিস্ট্রার অফিসে বিদ্যুৎ লাইনের শর্ট সার্কিট থেকে দু’বার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে । সেই সময় দমকলের ইঞ্জিন কোনো কারনে অফিস পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি । বিষয়টি নিয়ে ডিস্ট্রিক্ট রেজিস্ট্রার (ডি আর) সৌরভ রায়চৌধুরীর কানে ওঠে । তিনি ভাতার সাব রেজিস্ট্রার অফিস পরিদর্শনও করেন । কিন্তু অফিসে ঢোকার উপযুক্ত রাস্তা দেখতে না পেয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন । এরপর ভাতার সাব রেজিস্ট্রার অফিসের জন্য বিকল্প ভবনের সন্ধান শুরু হয় এবং বর্তমান অফিসের অদূরে ভাতার-নাসিগ্রাম সড়ক পথের ধারে একটি ভবন ঠিক করা হয় । কিন্তু দলিল লেখকরা অফিস স্থানান্তরের তীব্র প্রতিবাদ জানান । যেকারণে অফিস স্থানান্তরের বিষয়টি এখন ঝুলে আছে ।
দলিল লেখক নিমাই পাঁজা বলেন,’সন্তোষ সায়ের পুকুর পাড়ে আমাদের ঘর এবং বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া আছে । এই পরিস্থিতিতে যদি অফিস স্থানান্তর করা হয় তাহলে নতুন জায়গায় আমরা ঘর কোথায় পাবো ? আর স্মার্টপয়েন্ট মার্কেটে যেখানে ঘর ঠিক করা হয়েছে সেখানে আমাদের খরিদ্দারদের গাড়ি রাখার অসুবিধা হবে । পানীয় জলের কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই । শৌচাগার নেই । আশেপাশে খাবারের দোকান পর্যন্ত নেই । বর্তমান জায়গায় এই সমস্ত সুবিধাগুলো আছে। ‘ তিনি আরও বলেন,’অফিসে অগ্নিকান্ডের সময় দমকলের ইঞ্জিন ঢুকতে না পারার কথা যেটা বলা হচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ সত্যি নয় । দমকলের ইঞ্জিন ঢোকার বিকল্প রাস্তা আছে৷ কিন্তু ঘটনার সময় রাস্তার উপর বিয়ে বাড়ির গেট করায় তখন ইঞ্জিন ঢুকতে পারেনি ।’ তিনি অফিস স্থানান্তরের প্রচেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ জানান ।।