শ্যামসুন্দর ঘোষ,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),২৬ সেপ্টেম্বর : পরিবারে নিদারুন অভাব । তাই সংসারের সাশ্রয়ের জন্য জনমজুরির কাজের পাশাপাশি হাতে তুলে নিয়েছিলেন ঢাকের কাঠি । আশা করেছিলেন অল্প বিস্তর সরকারী সহায়তা পাবেন,কিন্তু এযাবৎ বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি । তাই মূলত বিভিন্ন উৎসবের দিকে তাদের তাকিয়ে থাকতে হয় । এদিকে হাতে গোনা কয়েকটা দিন বাকি রয়েছে শারদোৎসবের । কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো দুর্গাপূজা কমিটি বায়না করতে আসেনি । ফলে পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বরের ১০ মহিলা ঢাকির কপালে চিন্তার ভাঁজ।
জানা গেছে,মন্তেশ্বর ব্লকের মামুদপুরের দাসপাড়ার বাসিন্দাদের মূল পেশা খেতমজুরি । হতদরিদ্র পরিবারগুলির মহিলারা পর্যন্ত মাঠে ঘাটে জনমজুরের কাজ করতে ছোটেন । কিন্তু তাতেও অভাব নিত্যসঙ্গী ওই পরিবারগুলির । সেই কারনে অতিরিক্ত কিছু উপার্জনের আশায় বিগত লকডাউনের সময় স্থানীয় ঢাকি নিমাই দাসের কাছে ঢাক বাজানোর প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন দাসপাড়ার ১০ জন মহিলা । তাঁদের কারোর বয়স বছর কুড়ি,কেউ পঞ্চাশ বছরের প্রৌঢ়া । ওই দলে মহিলারা ছাড়াও ২ জন পুরুষ ঢাকি রয়েছেন । বাইরে কোথাও গেলে ঢাক বাজানো,হিসাব রাখা এবং মহিলাদের নিরপত্তার উপর নজর রাখেন ওই দুই পুরুষ ঢাকি ।
এদিকে ঢাক বাজানো কিছুটা রপ্ত করে বছর দুয়েক আগে মহিলারা “নিউ শ্রী শ্রী সরস্বতী মহিলা ঢাক” নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন । প্রথম দিকে টুকটাক বায়না আসছিল, কিন্তু তেমন ভাবে মানুষের সাড়া পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন মহিলা ঢাকিরা ।
এদিকে চলতি বছরের দূর্গাপূজো আর হাতে গোনা কয়েকটি দিন বাকি । কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেভাবে কোনো বায়না হয়নি বলে জানিয়েছেন সংস্থার মহিলা ঢাকি চাঁপা দাস,ধানি দাস,অনিমা দাস,রিঙ্কু দাসরা । তাঁরা বলেন,’পরিবারের সাশ্রয়ের আশায় ঢাক বাজানো শুরু করেছিলাম । কিন্তু তেমন সাড়া পাচ্ছি না । দূর্গাপূজোর আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি,কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো পূজো কমিটি বায়না করতে আসেনি । তাই আমরা চিন্তার মধ্যে আছি ।’
দলের অন্যতম ঢাকি উৎপল দাস,দিলীপ দাস বলেন,’আমি খুব ছোটো থেকে ঢাক বাজাচ্ছি । কিন্তু তেমনভাবে রোজকার হয়না । কোনো রকমে হাত খরচাটা হয় । সরকার থেকে ঢাকিদের কার্ড করে দেবে বলেছিল । ফলে কিছুটা আশায় ছিলাম । কিন্তু এখনো পর্যন্ত কার্ড না হওয়ায় সরকারি অনুদানও পাচ্ছি না ।’ মামুদপুরের ওই সংস্থার ঢাকিরা সরকারি সহায়তা ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য দাবি তুলেছেন ।।