এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),৩১ মে : ঘড়িতে তখন বিকেল পৌনে পাঁচটার আশপাশ হবে । আকাশে কালো করে মেঘ জমেছে । ঝড় বা বৃষ্টি শুরু হয়নি তখনো । কিন্তু কয়েক সেকেন্ড অন্তর মুহুর্মুহু বজ্রপাত শুরু হয় । বুধবার বিকেলে দীর্ঘ ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে ইন্দ্রাস্তের তুমুল গর্জন শুনলো পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারের বাসিন্দারা । এমন নজিরবিহীন ঘটনায় ব্যপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় । পরে অল্প অল্প বৃষ্টিপাত শুরু হতেই বজ্রপাতের দাপট কিছুটা কমে । তবে এখনো পর্যন্ত কোনো অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি ।
প্রসঙ্গত,সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বজ্রপাতের পরিমান ব্যপক হারে বেড়ে গেছে । বজ্রপাতের ক্রমবৃদ্ধির কারনে ২০১৯ সাল থেকে দেশে প্রথম বজ্রপাতের সংখ্যা গোনার কাজ শুরু হয় । মৌসম ভবনের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ শুরু করে ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট অবজার্ভিং সিস্টেমস প্রোমোশন কাউন্সিল । পর্যবেক্ষণে দেখা যায় ওই বছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৬ লক্ষ ৭৩ হাজার বজ্রপাত হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে । তার মধ্যে ৩ লক্ষ ৪ হাজার বজ্রপাত হয় মাটিতে । যার জেরে মৃত্যু হয় ৭১ জনের । ওই বছরের ৬ মাসে দেশের ৬ টি রাজ্যে মোট ১,৭৭১ জনের মৃত্যু হয় । ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে মোট ৭ লক্ষ ৬১ হাজার ৭২৮ টি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছিল । । ২০২০ সালে ৯৯.৭৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায় বজ্রপাতের ঘটনা । সেই বছরে ১৫ লক্ষ ২১ হাজার ৭৮৬ টি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে । এর মধ্যে রয়েছে মেঘ থেকে সরাসরি মাটিতে পড়া বাজ পড়ার ঘটনা এবং রয়েছে মেঘের অন্দরে বজ্রপাতও । ২০২১ সালের জুলাই মাসে ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট অবজার্ভিং সিস্টেমস প্রোমোশন কাউন্সিলের পর্যবেক্ষণে এক চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট সামনে আসে । রিপোর্ট অনুযায়ী ওই বছর শুধুমাত্র ১২ জুলাই গোটা রাজ্য জুড়ে ৩৮ হাজার ৫৬৮ টি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছিল । তাতে ২৭ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল ।
কেন হয় বজ্রপাত ?
বায়ুমণ্ডলে বাতাসের তাপমাত্রা ভূ-ভাগের উপরিভাগের তুলনায় কম থাকে। এই অবস্থায় বেশি গরম বাতাস দ্রুত উপরে উঠে গেলে আর্দ্র বায়ুর সংস্পর্শ পায়। তখন গরম বাতাস দ্রুত ঠাণ্ডা হওয়ায় প্রক্রিয়ার মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে বজ্রমেঘের সৃষ্টি হয় । তখনই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে ।
বজ্রপাতের সময় সতর্কতা :-
★ বজ্রপাতের সময় উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বিদ্যুৎস্পর্শের আশঙ্কা বেশি থাকে। বজ্রপাতের সময় গাছ বা খুঁটির কাছাকাছি থাকা নিরাপদ নয়। ফাঁকা জায়গায় কোনো ছাউনি বা বড় গাছে বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে। তাই এসব স্থান এড়িয়ে চলাই উচিত ।
★ ঘন ঘন বজ্রপাতের সময় খোলা বা উঁচু জায়গায় না থেকে দালানের নিচে আশ্রয় নেওয়া উচিত । বজ্রপাতের সময় ঘরের জানালার কাছে উঁকিঝুঁকি দেওয়াও বিপজ্জনক হতে পারে ।
★ বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকাই উচিত । বজ্রপাতের সময় মোবাইল বা ল্যান্ডফোন ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে ।
★ বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব ধরনের যন্ত্রপাতি এড়িয়ে চলুন । বজ্রপাতের আভাস পেলে যন্ত্রপাতির প্লাগ খুলে রাখুন। টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও স্পর্শ করা ঠিক হবে না।
★ বজ্রপাতের সময় গাড়িতে থাকলে দ্রুত বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করুন। যদি প্রচণ্ড বজ্রপাত ও বৃষ্টি হয়, তাহলে গাড়ি বারান্দা বা পাকা ছাউনির নিচে রেখে অপেক্ষা করুন ।।

