প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৬ ডিসেম্বর : এক আধ টাকার চুক্তি নয় । গ্রাম পঞ্চায়েতকে বৎসরিক প্রায় ২ কোটি টাকা দেবার শর্তে বালির গাড়ি থেকে টোল আদায়ের বরাত পেল একটি সংস্থা । অবিশ্বাস্য মনে হলেও বাস্তবেই এমন নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ ব্লকের শশঙ্গা পঞ্চায়েত । আবার এর ঠিক উল্টোটাই ঘটেছে একই ব্লকের লোদনা গ্রাম পঞ্চায়েতে । তাঁরা অনেক কম টাকার চুক্তিতে নির্বাচিত করেছে বালির গাড়ি থেকে টোল আদায়কারী । কেন লোদনা পঞ্চায়েত এত কম টাকার চুক্তিতে বালির গাড়ির টোল আদায়কারী নির্বাচন করলো তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন ।
প্রতিদিন শয়ে শয়ে বালি বোঝাই ট্রাক ও লরি যাতাযাত করে খণ্ডঘোষের লোদনা ও শশঙ্গা পঞ্চায়েত এলাকার রাস্তা দিয়ে । ভারি লরি যাতায়তের জন্য রাস্তার ক্ষতি হলে তা মেরামত করার জন্য পঞ্চায়েতকেই অর্থ ব্যয় করতে হয় । তাই এই দুই পঞ্চায়েত তাঁদের এলাকার রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী বালি বোঝাই ট্রাক ও লরি থেকে টোল আদায়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় । সেই মত খণ্ডঘোষের লোদনা ও শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ পঞ্চায়েত আইনের ১৩২ (ঘ) ধারা মতে টোল দায়কারী নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয় । পঞ্চায়েতগুলি দরপত্র জমা দেবার আহ্বান জানায় । কয়েকমাস আগে স্ট্যাম্প পেপারে লিখিত চুক্তি করে লোদনা গ্রাম পঞ্চায়েত একটি সংস্থাকে তাঁদের এলাকার বালির গাড়ি থেকে টোল আদায়ের অনুমতি দেয় । চুক্তি অনুযায়ী ঠিক হয় ওই সংস্থা ৩ বছরের জন্য লোদনা গ্রাম পঞ্চায়েতকে ১৫ লক্ষ ৫ হাজার টাকা দেবে । এর ঠিক পাঁচ মাস বাদ শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েত তাঁদের এলাকার রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী বালির লরি থেকে টোল আদায়কারী নির্বাচনের জন্য ই- টেন্ডার করে । এক বছরর জন্য ১ কোটি ৯৯ লক্ষ৫০ হাছার টাকা দেবার শর্তে শশঙ্গা পঞ্চায়েত গত ১৪ ডিসেম্বর টোল আদায়কারী সংস্থাকে নির্বাচিত করেছে । টোল আদায়কারী নির্বাচনের দরে দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে এত বিপুল অর্থের ফারাক কি কারণে হল তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন খণ্ডঘোষের বাসিন্দারা ।
খণ্ডঘোষ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সদস্য অপার্থিব ইসলাম এবিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চান নি । তিনি বলেন, ’ওটা গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্যাপার । পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ এর উত্তর দিতে পারবে ।’
প্রকৃত কত টাকার বিনিময়ে ও কি শর্তে লোদনা গ্রাম পঞ্চায়েত বালির গাড়ি থেকে টোল আদারকারী নির্বাচন করেছে তা জানার জন্য প্রধান অঞ্জু সাঁতরা কে ফোন করা হয় । উত্তরে তিনি বলেন,’মনে নেই । চুক্তিপত্র না দেখে বলতে পারবো না ।’ তিন বছরের জন্য ১৫ লক্ষ ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে লোদনা পঞ্চায়েত টোল আদায়কারী নির্বাচন করেছে তা প্রধানকে বলা হলে তিনি বলেন, “হ্যাঁ” । এরপর প্রধান অঞ্জু সাঁতরার কাছে জানতে চাওয়া হয় একই ব্লকের শশঙ্গা পঞ্চায়েত এক বছরের প্রায় ২ কোটি টাকার চুক্তিতে টোল আদায়কারী নির্বাচন করছে । তাহলে আপনাদের পঞ্চায়েত কেন এত কম টাকায় টোল আদায়কারীর সঙ্গে চুক্তি করলো ?এর উত্তরে প্রধান বলেন,’এত কথার উত্তর দিতে পারবেন না । উত্তর পাবার জন্য তিনি তাঁর পঞ্চায়েত অফিসে যাবার কথা বলে পাশ কাটান ।’
অপর দিকে শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রকাশ ঘোষ বলেন,’পঞ্চায়েত অফিসে বসে স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি করে তাঁরা টোল আদায়কারী নির্বাচন করার পথে যান নি । ই- টেন্ডার করে টোল আদায়কারী নির্বাচন করেছেন । তাতেই বিশেষ সফলতা পেয়েছেন। ১ বছরের জন্য প্রায় ২ কোটি টাকা দেবার শর্তে মনোনিত হয়েছেন তাঁদের পঞ্চায়েত এলাকার টোল আদায়কারী ।’ প্রকাশবাবু এও বলেন, ‘এই অর্থে তাঁদের পঞ্চায়েত এলাকার প্রভূত উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে ।’।