এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,০৭ জুলাই : বাংলা ও বিহারসহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে মহরমের তাজিয়ার মিছিল থেকে হামলার অভিযোগ । সবচেয়ে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে বিহারে । মোতিহারিতে নাম ২২ বছর বয়সী অজয় যাদব নামে নামে এক হিন্দু যুবককে মাথায় তরবারি দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয়েছে ৷ উত্তজেনার খবর পাওয়া গেছে উত্তরপ্রদেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় । মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় মহরমের তাজিয়ার মিছিলে অংশগ্রহণকারী লোকজন ।
পশ্চিমবঙ্গ :
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এক্স-এ একটা ভিডিও পোস্ট করে মালদা বিধানসভার ই়লিশবাজার থানার নরহাট্টা জিপির লক্ষ্মীকান্তপুর গ্রামে মহরমের তাজিয়া মিছিলের সময় হিন্দুদের উপর হামলার অভিযোগ তুলেছেন । তিনি ওই পোস্টে লিখেছেন,”মহরমের তাজিয়ার মিছিলের নামে হিন্দুদের উপর জেহাদিদের অত্যাচার । মালদা বিধানসভার ইলিশবাজার থানার নরহাট্টা জিপির লক্ষ্মীকান্তপুর গ্রামে মহরমের তাজিয়া নিয়ে হিন্দু এলাকায় বিপুল সংখ্যক জেহাদির দল ঘর, বাড়ি, দোকান ভাংচুর করেছে। সেখানে পুলিশ কর্মীরা থাকলেও তারা নিরব দর্শকের ভুমিকায় ছিল। লক্ষ্মীপুর গ্রামের শান্তিপ্রিয় হিন্দুরা ঘটনার পর থেকে আতঙ্কিত।” তিনি আরও লিখেছেন,”পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা তাদের ধর্মীয় উৎসব পালনের সময় এমন একটাও উৎসব নেই যে তাদের রক্ত ঝরে নি, সে দুর্গাপুজোই হোক আর সরস্বতী পুজো বা রথযাত্রা। ভিন্ন ধর্মের একদল জেহাদি বর্তমানে রাজ্যটাকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি ভেবে নিয়ে হিন্দুদের উপর বিনা প্ররোচনায় যখন তখন আক্রমণ চালাচ্ছে, তাদের ধর্মাচরণে বাধা দান করছে। আর এসব কিছুই হচ্ছে মমতা ব্যানার্জীর নির্লজ্জ তোষন নীতির ফলে। কারণ মমতা ব্যানার্জী নিজের ৩০ শতাংশ ভোট ব্যাঙ্ক অক্ষুন্ন রাখতে চান। যথারীতি প্রশাসনেরও হাত বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই অরাজকতার থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় গণতান্ত্রিক উপায়ে এই সরকারের বিসর্জন। মালদার এই ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনোও রকম পদক্ষেপ নেওয়া হয় নি। আমি হিন্দুদের বলব আপনারা জোট বাঁধুন, একত্রিত হোন, নচেৎ বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে আসতে হয়েছে, আগামীদিনে পশ্চিমবঙ্গেও থাকা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।” সব শেষে শুভেন্দু অধিকারী “হিন্দু যদি বাঁচতে চাও বিভেদ ভুলে এক হও” হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেছেন ।
বিহার :
বিহারের মোতিহারিতে মহরমের মিছিলে বিবাদের পর এক হিন্দু যুবক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হিন্দু নিউজ পোর্টাল ওপি ইন্ডিয়া । প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত যুবকের নাম ২২ বছর বয়সী অজয় যাদব। ইসলামিক মৌলবাদীরা অজয় যাদবের মাথায় তরবারি দিয়ে আঘাত করে। এই ঘটনায় আরও দুই হিন্দু যুবক আহত হয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অজয় মারা গেছেন।
মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, ঘটনাটি ঘটেছে মোতিহারী জেলার মেহসি থানা এলাকার কানকাট্টি বাজারে। পুরনো শত্রুতার কারণে মহরমের মিছিলের আড়ালে অজয় যাদবকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে ইসলামিক মৌলবাদীরা। রবিবার (০৬ জুলাই ২০২৫) সন্ধ্যা ৭টায় ওই এলাকায় মহরমের তাজিয়া মিছিল বের করা হচ্ছিল। মিছিলে শিয়া মুসলিমদের একটি ভিড় লাঠি, তরবারি এবং বর্শা নিয়ে স্টান্ট করছিল। আমওয়ার বাসিন্দা অজয় যাদব, ভাই ধনঞ্জয় যাদব এবং খুড়তুতো ভাই নবল কিশোর যাদব তা দেখতে পৌঁছেছিলেন। অজয় যাদবের সঙ্গে মিছিলে স্টান্ট করা লোকদের তর্কাতর্কি শুরু হয় । এরপর এক মুসলিম তরবারি হাতে অজয়ের ঘাড়ে আঘাত করেন। অজয়ের সঙ্গীদেরও মারধর করা হয়।
বলা হয়েছে,এই ঘটনায় অজয় যাদব গুরুতর আহত হন, তাকে এবং অন্য দুই আহতকে মেহসি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অজয় যাদবকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক হরেন্দ্র কুমার রবি। একই সাথে, অজয়ের খুড়তুতো ভাই নবল কিশোরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুজাফফরপুর এসকেএমসিএইচে রেফার করা হয়েছে। গ্রামে ইতিমধ্যেই উত্তেজনা ছিল, যা মহরমের মিছিলের সময় আরও বেড়ে যায়। পুলিশ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রামে আরও পুলিশ বাহিনী পাঠানো হয়েছে। গুজব রোধে ইন্টারনেট পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
মহরমের শোভাযাত্রার নামে, কাটিহারে মুসলমানরা সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে । ৬ জুলাই, বিহারের কাটিহারে, একটি মহরম মিছিল চলাকালীন, উগ্রপন্থীরা নয়া টোলার মহাবীর মন্দিরে পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন যে তাজিয়া মিছিলটি ৩৪ এবং ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ, উগ্রপন্থীরা মন্দির এবং সেখানে বসবাসকারী লোকদের উপর আক্রমণ করে। ওপিনইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্থানীয়রা জানিয়েছেন যে মহরম মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে বের করা হচ্ছিল, কিন্তু নয়া টোলায় পৌঁছানোর সাথে সাথে এটি হিংসাত্মক হয়ে ওঠে।হনুমান মন্দিরে পাথর ছোঁড়া হয়েছে, মহিলাদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে, রাস্তার ধারে পার্ক করা যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে।
বিহারের দারভাঙ্গায় মহরম মিছিল চলাকালীন মোহাম্মদ রব্বানী পরিদর্শকের উপর ছুরি দিয়ে আক্রমণ করেন। দ্রুত ইন্সপেক্টরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। এর প্রতিবাদে অভিযুক্তের পরিবার রাস্তা অবরোধ করে এবং টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে।
মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, শনিবার (০৫ জুলাই ২০২৫) গভীর রাতে মহরম মিছিলে দুর্বৃত্তরা হট্টগোল সৃষ্টি করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য। এই সময় ইন্সপেক্টর অমিত কুমার রাস্তায় পড়ে যান। এরপর অভিযুক্ত মোহাম্মদ রব্বানী ছুরি দিয়ে ইন্সপেক্টরের বাম উরুতে আঘাত করেন। আহত হওয়া সত্ত্বেও, ইন্সপেক্টর নিজেই অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়ে থানায় নিয়ে আসেন। এরপর আহত ইন্সপেক্টরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। একই সময়ে, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে, তার পরিবার এক ঘন্টা ধরে রাস্তা অবরোধ করে। এই সময় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।
সোমবার (৭ জুলাই ২০২৫) সকালে বিহারের হাজিপুরে তাজিয়া মিছিল চলাকালীন দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে। ধারালো অস্ত্র দেখানোকে কেন্দ্র করে এই বিরোধ শুরু হয়। এতে অনেকেই আহত হন। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, দুর্বৃত্তরা সমস্তিপুর থেকে আসা বাসে হট্টগোল সৃষ্টি করে এবং পাথর ছুঁড়ে ভাঙচুর করে। আসলে, বাস চালক ভিড়কে পথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ক্রমাগত হর্ন বাজাচ্ছিলেন, কিন্তু ভিড় নড়েনি। এই কারণে, মিছিলে জড়িত ২ জনের সাথে বাসটি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যার পরে মিছিলে জড়িত লোকেরা বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।
উত্তরপ্রদেশ :
উত্তর প্রদেশের সীতাপুরের সাহাদতনগর গ্রামে মহরমের তাজিয়া মিছিলে বিরোধ দেখা দেয়। মুসলিম জনতা একটি হিন্দু দোকানের মালিককে মারধর করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিষয়টি শান্ত করে। ঘটনায় আহত অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।আসলে, ঘটনাটি রবিবারের (০৫ জুলাই ২০২৫)। যখন সাহাদতনগর থেকে তাজিয়া মিছিল বের হচ্ছিল। তখন নওয়া আম্বারপুরের তাজিয়াও কারবালায় পৌঁছে। এখানে বেচলালের দোকানের বাইরে ইট রাখা হয়েছিল। তাজিয়াদাররা তা সরাতে শুরু করে। বেচলাল প্রতিবাদ করলে তাকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয় । খবর পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কিন্তু যারা তাজিয়াদারদের মারধর করেছিল তারা পালিয়ে যায়। সিও মাহোলি দীপক সিং বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। গ্রামে শান্তি বজায় রাখতে প্রচুর পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
রবিবার (৬ জুলাই ২০২৫) ইউপির বেরিলির ফরিদপুরে তাজিয়া রাখার সময় মুসলিমরা হট্টগোল করে। জনতা পাকিস্তানের সমর্থনে স্লোগান দেয়। ইসলামিক মৌলবাদীরা এলাকার দোকানপাট ভেঙে ফেলে এবং ব্যবসায়ীদের হত্যা এবং দোকান লুট করার হুমকি দেয় । এই ঘটনায় পুলিশ মোবিনা, আনাস এবং নাজিমকে গ্রেপ্তার করেছে। ফরিদপুরের সাহুকারা বাজারে তাজিয়া রাখার সময় মুসলিমরা একটি কাপড়ের দোকানের স্ল্যাব ভেঙে ফেলে। খবর পেয়ে ক্ষুব্ধ দোকানদাররা তাজিয়া তোলা বন্ধ করে দেয় এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে বাজার বন্ধ করে দেয়। তিনি জানান, সেখানে পাকিস্তানের সমর্থনে স্লোগানও দেয় মুসলিমরা। খবর পাওয়া মাত্রই হিন্দু সংগঠনের কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এরপর সংগঠনের কর্মীদের সাথে ব্যবসায়ীরাও বিক্ষোভ শুরু করেন। ফরিদপুরের এসডিএম মল্লিকা জৈন এবং সিও সন্দীপ কুমার সিং কোনওভাবে ব্যবসায়ীদের বুঝিয়ে বিক্ষোভ থামিয়ে দেন।অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার এবং অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর, ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ শেষ করেন, এরপর মুসলিমরা তাজিয়া মিছিল বের করে ।
উত্তর প্রদেশের লক্ষ্মীপুর খেরিতে মহরমের তাজিয়া মিছিলে বিরোধ দেখা দেয়। মিছিলে জড়িত মুসলিম জনতা একটি হিন্দু পরিবারের বাড়িতে সাদা পাউডার ছুঁড়ে মারে। পরিবারের সদস্যরা এর প্রতিবাদ করলে, বাকি হিন্দু পরিবারের বাড়িতে পাথর ছুঁড়ে মারে জনতা। মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, রবিবার (০৬ জুলাই ২০২৫) বিকেলে তাজিয়া মিছিলটি বড়া গ্রামে পৌঁছায়। মিছিলে জড়িত লোকেরা একই গ্রামের বাসিন্দা সিয়ারাম এবং যমুনাদীর বাড়িতে সাদা পাউডার ছুঁড়ে মারে। যমুনাদীর নাতি পঙ্কজ এর প্রতিবাদ করলে, মুসলিম জনতা তাকে মারধর করে। শুধু তাই নয়, মুসলিম জনতা হিন্দু বাড়িতেও পাথর ছুঁড়ে মারে।পাথর ছোঁড়ার ফলে গ্রামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। অনেক বাড়ির টিনশেড, সোলার প্যানেল এবং চুলা ভেঙে ফেলা হয়। এর পাশাপাশি, মিছিলে জড়িত কিছু লোক হিন্দু বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাদের হুমকি দেয়। বিরোধের খবর পাওয়ার সাথে সাথেই প্রচুর পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।ভুক্তভোগী পঙ্কজের অভিযোগের ভিত্তিতে, পুলিশ তালিব, জাহিদ, সুলেমান এবং নূরী নামে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। সিও সিটি রমেশ তিওয়ারি বলেছেন যে পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মধ্যপ্রদেশ :
৬ জুলাই , শনিবার উজ্জয়িনীতে মহরমের মিছিল বের করা হয়েছিল। এই সময় পুলিশের সাথে মুসলিম জনতার সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন।
পুলিশ এই ঘটনায় মিছিলের আয়োজক ইরফান ওরফে লালা সহ আরও ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। মিছিলের জন্য ইতিমধ্যেই একটি রুট নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু জনতা নির্ধারিত রুট অনুসরণ করেনি। তারা নিষিদ্ধ রুট দিয়ে যেতে শুরু করে। একটি প্রতীকী ঘোড়া ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যারিকেডের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এতে পুলিশ সদস্যরা হতবাক হয়ে যান। পুলিশ জনতাকে সতর্কও করে। কিন্তু জনতা শোনেনি এবং জড়ো হতে থাকে।এরপর পুলিশ ও জনতার মধ্যে সংঘর্ষ হয়। অবশেষে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয় ।।

