এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,৩০ মার্চ : মালদার মোথাবাড়িতে বেছে বেছে হিন্দুদের দোকান ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ । ওই হিংসার ঘটনায় পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে । সেই তালিকা ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । মালদা সিজেএম আদালতে পেশ করা মোথাবাড়ি থানার পক্ষ থেকে ২৯ মার্চ (কেস নম্বর : ২৫৯/২০২৫) পেশ করা সেই অভিযুক্তদের চালানে মোট ২১ জনের নাম রয়েছে । ধৃতদের কারোর পদবি মণ্ডল,কারোর ঘোষ,কারোর সাহা প্রভৃতি । বিষয়টি নিয়ে রাজ্য বিজেপির যুবনেতা ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারি প্রশ্ন তুলেছেন,’মোথাবাড়িতে গ্রেপ্তারের তালিকায় দুধ দেওয়া গরু নেই, সাধারন হিন্দুরা গুতো কেন খাবে ?’
তরুনজ্যোতি পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে লিখেছেন,’মালদা মোথাবাড়ির সাম্প্রতিক ঘটনা : পুলিশের নিরপেক্ষতা কোথায় ?’ তিনি লিখেছেন,
‘মালদার মোথাবাড়ির সাম্প্রতিক ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা আরও একবার প্রমাণ করল যে পশ্চিমবঙ্গে বিচারব্যবস্থা একপেশে হয়ে পড়েছে। ঘটনার পর পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে বলে দাবি করা হলেও এই তালিকাটায় কোন দুধ দেওয়া গরুকে দেখলাম না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই বিশেষ প্রজাতির গরুর দুধ খেতে ভালোবাসেন বুঝলাম কিন্তু তার গুতো সাধারন হিন্দুরা কেন খাবে?‘
তিনি লিখেছেন,’আইনজীবি রিঙ্কি চ্যাটার্জির প্রোফাইল থেকে পাওয়া একটি অভিযুক্তদের তালিকা দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে একপেশে নীতির শিকার হয়েছে হিন্দু সমাজ। প্রকাশ্যে FB Live করে যারা দোকানপাট ভাঙচুর করল, যারা তাণ্ডব চালালো, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হল না—কারণ তারা শাসক দলের বিশেষ ভোটব্যাংকের অংশ। এই ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করল যে পশ্চিমবঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষতার বদলে এক বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতি সুবিধাবাদী মনোভাব নিয়ে চলছে। হিন্দুরা আক্রান্ত হলেও, দোষীদের পরিবর্তে ভুক্তভোগীদেরই গ্রেফতার করা হচ্ছে। প্রশাসন কি তাহলে হিন্দুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবেই দেখতে চায়?’
সবশেষে তিনি লিখেছেন,’আরো যদি অন্য কোন মামলা হয়ে থাকে যেখানে বিশেষ শ্রেণীর লোকজন অ্যারেস্ট হয়েছে এরকম খবর থাকে তাহলে পুলিশকে অনুরোধ করব সেগুলো যেন জানানো হয়।। না হলে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে।। এই বৈষম্যমূলক অবস্থান কি গণতান্ত্রিক ও ন্যায়সঙ্গত? নাকি এটাই পশ্চিমবঙ্গের নতুন বাস্তবতা?’
অন্য একটা পোস্টে তিনি বলেছেন,’মালদা মোথাবাড়ির ঘটনা: বিকৃত ন্যারেটিভে হিন্দুদের দোষারোপের চক্রান্ত । মালদার মোথাবাড়ির ঘটনায় রাম নবমীর অনুমোদিত শোভাযাত্রাকে অজুহাত বানিয়ে হিন্দুদের উপর পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে। শান্তিপূর্ণ র্যালিটি পূজার সামগ্রী বিসর্জনের জন্য বের হয়েছিল এবং প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই পুলিশি নিরাপত্তায় চলছিল। মসজিদের সামনে যাওয়ার একমাত্র কারণ সেটি রাস্তার মাঝখানে অবস্থিত, এবং নামাজের সময় অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবে মিথ্যে প্রচার চালিয়ে দাবি করা হচ্ছে যে শোভাযাত্রাটি ইচ্ছাকৃতভাবে উস্কানি দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাস্তবে, কোনো সহিংসতা ঘটেনি, বরং ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে পুলিশ র্যালির অংশগ্রহণকারীদের সরিয়ে নিচ্ছে, যা প্রমাণ করে যে কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেনি। ভারত মায়ের জয় হোক, জয় শ্রী রাম, হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই ইত্যাদি স্লোগান উঠেছিল সেই র্যালি যাওয়ার সময়। এগুলোর মধ্যে কোনটা সম্প্রদায়িক? প্রত্যেকদিন হিন্দু এলাকায় মাইকে “সে” ছাড়া অন্য কোন ঈশ্বর নেই বলাটা মনে হয় এর থেকে বেশি সাম্প্রদায়িক। হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিকে সরাসরি আঘাত করে এই কথাটা।’
তিনি লিখেছেন,’কিন্তু পরদিন পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের দোকানপাট ও বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়, যা ফেসবুক লাইভেও দেখা গেছে। হামলাকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই অল্পবয়সী কিশোর-তরুণ। কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা সায়েম চৌধুরী নিজেই স্বীকার করেছেন যে বিসর্জনের র্যালি নিয়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধে যা রটানো হচ্ছে, তা মিথ্যা। অদ্ভুতভাবে, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে পুলিশ উল্টে হিন্দুদেরই গ্রেপ্তার করেছে। স্পষ্টতই, প্রশাসন নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাত দেখাচ্ছে এবং সত্য লুকাতে বিকৃত ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে। এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারের বিরুদ্ধে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরাই এখন জরুরি।’।