প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৯ মার্চ : পাঁচ শতাধীক বছরের প্রাচীন দোল উৎসবের মেলায় বিক্রীর জন্য তৈরি হল হাজার টাকা পিসের পেল্লাই সাইজের রসগোল্লা। এটা কোন আজগুবি গল্পকথা নয়।বাস্তবেই পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী ১ ব্লকের দোগাছিয়ার দোল উৎসবের এমনই মস্ত সাইজের মিষ্টি তৈরি হয়।দোল উৎসব উপলক্ষে আগত অতিথিদের এমন বিশালাকার মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করাটাই দোগাছিয়া গ্রামের রেওয়াজ।তাই দোল উৎসব উপলক্ষে দোগাছিয়া গ্রামের মেলায় যাঁরা মিষ্টির দোকান খুলে বসেন তাঁরা সবাই তৈরি করেন পেল্লাই সাইজের হরেক রকমের মিষ্টি । নজর কাড়া এমন মিষ্টি স্বচক্ষে একবার দেখার জন্যেও অনেকে মেলায় ভিড় জমান ।
দোগাছিয়া গ্রামের দোল উৎসবের মাহাত্ম্য নিয়ে এলাকায় নানা লোককথা প্রচলিত রয়েছে।গ্রামের বাসিন্দা নিখিলেশ রায়চৌধুরি ও দেবপ্রসাদ রায়চৌধুরি জানান ,প্রায় সাড়ে পাচশো বছর আগের ঘটনা ।বাংলায় তখন রাজত্ত্ব চালাতেন জমিদাররা।সেই সময় কালে দোগাছিয়া গ্রামে চারদিনের দোল উৎসবের সূচনা হয় ।দোলে গ্রামের চৌধুরিপাড়ার মূল মন্দিরে হয় কৃষ্ণচন্দ্র,গুপীনাথ ও মদনমোহ মূর্তির পুজোপাঠ ।মূল মন্দির থেকে কিছুটা দূরে থাকা দোলমন্দিরে চতুর্দোলা করে তিন দেবতার মূর্তি নিয়ে গিয়ে পুজো করা হয়।
নিখিলেশ রায়চৌধুরি জানান,তাঁদেরই বংশের পূর্ব পুরুষ শ্রীধর কর জমিদারী আমলে মন্দিরগুলি তৈরি করেন।পরবর্তীকালে নবাব আমলে তাঁদের পরিবার রায়চৌধুরি উপাধি লাভ করে ।চৌধুরী পরিবারের সদস্যদের কথায় জানা গিয়েছে,দোল উৎসব উপলক্ষে গ্রামে হরিনাম সংকীর্তন সহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান হয় । মেলাও বসে ।
দোগাছিয়া গ্রামে দোল উৎসবের মেলায় এদিন
গিয়ে দেখা যায় মেলার মূল আকর্ষন মিষ্টি । দু-এক কেজি ওজনের মিষ্টি নয় ।১০০০ টাকা পিস দরের ৮ কেজি ওজনের রসগোল্লা মেলায় বিক্রীর জন্য তৈরি করেছেন বিক্রেতারা । বড় বড় গামলায় সেইসব বিশালাকার মিষ্টি সাজিয়ে রাখেন বিক্রেতারা। এত বড় বড় মিষ্টি মেলায় আগত মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা তৈরি করেন মূলত এলাকার রীতি রেওয়াজকে মান্যতা দিয়েই । স্থানীয় বাসিন্দা সুধাকর ঘোষ ও কৃপেশ বিশ্বাস বলেন ,জমিদারি আমল থেকেই দোল উৎসবে আমাদের গ্রামে আগত অতিথীদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হত । সেই রেওয়াজ এখন চালু রয়েছে । আর তার কারণেই দোল উৎসব উপলক্ষে গ্রামে বসা মেলার সবথেকে বেশী প্রাধান্য পায় মিষ্টি।
মেলায় মিষ্টির দোকান খুলে বসা ব্যবসায়ী তপন বিদ,প্রভাত ঘোষরা বলেন, ‘দোগাছিয়া গ্রামের দোল উৎসবের মেলায় মিষ্টিই মূল আকর্ষন । তাই তাঁরা নজর কাড়া নানা মিষ্টি তৈরি করেন ।এই বছর করেছেন ১০০০ টাকা পিস দরের ৮ কেজি ওজনের রসগোল্লা । এছাড়াও ৫০০,৪০০,২০০ টাকা পিস দামের মিষ্টিও মেলায় বিক্রীর জন্য তৈরি করেছেন ।
মিষ্টি কিনতে জেলা ছাড়িয়ে ভিন জেলার ক্রেতারাও মেলায় আসছেন । প্রবাত ঘোষ বলেন, ‘মেলায় বিক্রী বাটাও খারাপ হচ্ছে না । দাম যাই হোক ,খরিদ্দাররা সব ধরণের মিষ্টি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন । মেলার স্টলে বসেও দল বেঁধে হাজার টাকা দামের রসগোল্লা খাচ্ছেন ।’।