এইদিন স্পোর্টস নিউজ,১৩ ডিসেম্বর : আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকা লিওনেল মেসিকে (Lionel Messi) এক ঝলক দেখার আশায় বিপুল টাকা দিয়ে টিকিট কেটে হাজার হাজার ক্রীড়াপ্রেমী আজ শনিবার যুবভারতী স্টেডিয়ামে (Yuba Bharati Stadium) জড়ো হয়েছিলেন । সকাল ঠিক ১১টা ৩০ মিনিট নাগাদ যুবভারতীতে ঢোকে মেসির গাড়ি। মেসির সঙ্গে ছিলেন লুইস সুয়ারেজ (Luis Surez) ও রদ্রিগো ডি পল (De Paul)। কিন্তু মেসি গাড়ি থেকে নামার পর মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, কর্তা সুজিত বসু,অভিনেতা শাহরুখ খান ও আরও আমন্ত্রিতদের পাশাপাশি নিরাপত্তা রক্ষীরা এমনভাবে ঘিরে থাকে যে মেসির টিকি পর্যন্ত দেখতে পায়নি দর্শকরা । তাদের ছবি তোলার হুড়োহুড়িতে মেসির হাঁটার জায়গাটুকুও প্রায় ছিল না। নিরাপত্তারক্ষীরা চারদিক থেকে ঘিরে রাখলেও গ্যালারি থেকে প্রায় ২০ মিনিট ধরে মেসিকে দেখাই গেল না। এরপর ক্ষিপ্ত দর্শকরা গ্যালারির চেয়ায় ব্যাপক ভাঙচুর শুরু করে দেয় । উপরে ফেলা হয় তাঁবু । শেষে ব্যাপক লাঠিচার্জ শুরু করে দেয় পুলিশ । ফলে আজ মেসিকে ঘিরে চুড়ান্ত অব্যবস্থা দেখা যায় সল্টলেকের যুবভারতী স্টেডিয়ামে ।
গ্যালারিতে ভাঙচুরের ভিডিও এক্স-এ শেয়ার করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন, ‘ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও সুজিত বসুর ব্যবসা, দর্শকদের দুরবস্থা !!! যুবভারতীতে লিওনেল মেসির অনুষ্ঠানে চরম বিশৃঙ্খলা, মেসির গায়ে জোঁকের মতো চিটে রইলেন নেতা-মন্ত্রী-তারকারা, আর যাদের পিঠে কাঁঠাল ভেঙে মেসিকে দেখতে পাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে হাজার হাজার টাকার টিকিট কাটানো হলো, সেই ফুটবলপ্রেমীদের ভাগ্যে জুটলো ৫-৭ মিনিটের জায়ান্ট স্ক্রিনের দর্শন !!!
ফুটবলের রাজপুত্র লিয়োনেল মেসি যুবভারতীতে ঢোকা মাত্র অন্তত ১০০ জন নেতা মন্ত্রী ও তাদের আত্মীয় পরিজন সাগরেদদের ভিড় ঘিরে ধরে তাঁকে। ফলে গ্যালারি থেকে তাঁকে দেখার কোনো উপায় ছিল না।মোটা টাকায় টিকিট কেটে গিয়েও প্রিয় তারকাকে দেখতে পেলেন না দর্শকরা যাদের জলের বোতল পর্যন্ত নিয়ে যেতে দেওয়া হয় নি, আর বাধ্য করা হয় ২০ টাকার জল ২০০ টাকায় কিনতে। অথচ তৃণমূল নেতা মন্ত্রীরা ব্যবসা করে নিলেন এই সুযোগে। এদের থেকে শকুনও ভালো !
পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু দাবিও জানান । শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,দর্শকবন্ধু ফুটবলপ্রেমীদের সাথে এই বিশ্বাসঘাতকতার প্রেক্ষাপটে আমার দাবী হলো:-
১) গ্যালারির সমস্ত দর্শকদের ১০০% টিকিটের দাম ফেরত দিতে হবে। ২) ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মন্ত্রী সুজিত বসু এবং প্রধান আয়োজক শতদ্রু দত্তকে এই বিশৃঙ্খলা, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির দায়ে গ্রেফতার করতে হবে।৩) গোটা বিশ্বের সামনে পশ্চিমবঙ্গের সম্মানহানির জন্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।ভোটের আগে লিওনেল মেসির সাথে ছবি তুলে ‘খেলা হবে’ করতে গেছিলেন ! উল্টে প্রতারিত দর্শক খেলা দেখিয়ে দিয়েছে…।’
এদিকে ১১টা ৫২ মিনিট নাগাদ মেসিকে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। মেসি বেরিয়ে যেতেই দর্শকদের ক্ষোভ চরমে পৌঁছয়। মোটা অঙ্কের টিকিট কেটে এসেও প্রিয় ফুটবলারকে দেখতে না পাওয়ায় শুরু হয় ভাঙচুর। গ্যালারির হোর্ডিং ভাঙা হয়, চেয়ার ছুড়ে মারা হয় মাঠে। সেই সময় গ্যালারিতে পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও প্রধান আয়োজক শতদ্রু দত্তকে মাইক্রোফোনে বারবার অনুরোধ জানাতে হয়। তাতেও কাজ হয়নি। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। এদিকে রাস্তা থেকেই ফিরে যেতে হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে ।মেসিকে দেখতে না পেয়ে হতাশ দর্শকরা জানান,হাজার হাজার টাকা দিয়ে তারা টিকিট কেটেছিলেন । কিন্তু মেসিকে এক চুলও দেখা যায়নি । আমরা কি নেতা-মন্ত্রীদের দেখতে এসেছিলাম নাকি? পাই পয়সা ফেরত দিতে হবে।
এদিকে এই ঘটনার জন্য মমতা ব্যানার্জি এক্স হ্যান্ডেলে ক্ষমা চেয়ে লিখেছেন,’সল্টলেক স্টেডিয়ামে চূড়ান্ত অব্যবস্থা দেখা গিয়েছে। আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও বিস্মিত।প্রিয় ফুটবলার লিওনেল মেসির এক ঝলক দেখার আশায় হাজার হাজার ক্রীড়াপ্রেমী ও সমর্থকের সঙ্গে আমিও স্টেডিয়ামের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম। এই অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য লিওনেল মেসি-সহ সকল ক্রীড়াপ্রেমী ও তাঁর অনুরাগীদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’ পাশাপাশি ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রী একটি তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা করেছেন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার রায়ের নেতৃত্বে ওই কমিটিতে থাকবেন রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্য বিষয়ক দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব। এই কমিটি গোটা ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করবে, দায়িত্ব নির্ধারণ করবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, তার জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে।।

