প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৭ মার্চ : ভোট আসলেই ‘খেলা হবে’ শ্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলা । তা বলে ’জুয়া খেলায়’ অংশগ্রহন করার জন্যে কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মারফত সকলকে আহ্বান জানাবে,সেটা সত্যি নজিরবিহীন । আর এমনই নজিরবিহীন কাণ্ড ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে। যা জানার পর পুলিশ প্রশাসনও নড়ে চড়ে বসে । অভিযুক্ত যুবক সুরজিৎদাসকে পুলিশ বৃহস্পতিবার বিকালে পাকড়াও করে। তাঁকে জেরা করে পুলিশ আসল জুয়াড়িদের নাগাল পেতে চাইছে । ঘটনার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি ঘটনায় জড়িত যুবকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন শাসকদলের নেতৃত্ব।
জামালপুর থানার বেত্রাগড় গ্রামের অধীষ্ঠাত্রী দেবী হলেন শীতলা । বুধবার থেকে গ্রামের মন্দিরে শুরু হয়েছে শীতলা দেবীর পুজো। এই পুজো উপলক্ষে আগামী চারদিন মাতোয়ারা থাকবে বেত্রাগড় গ্রাম । পুজো উপলক্ষে ভক্তদের ঢল নামে গ্রামে । বসে মেলাও। এমন এক ঐতিহ্যশালী পুজো প্রাঙ্গনে ‘জুয়ার আসর’ বসবে বলে সামাজিক মাধ্যম মারফৎ সাধারণ মানুষকে জানিয়েছে সুরজিত দাস নামে এক যুবক।জামালপুর থানার শুড়েকালনা গ্রাম নিবাসী এই যুবক পেশায় লটারি টিকিট বিক্রেতা । এদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শীতলা দেবীর ছবি দিয়ে তিনি লিখেছেন,’আজ থেকে চার দিন বেত্রাগড়ে মায়ের তলায় জুয়া চলবে। সকল জুয়া খিলাড়িকে আসার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে ।’ ’জুয়া খেলায়’ সকলকে অংশগ্রহন করার বার্তা দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একজন লটারি টিকিট বিক্রেতার এমন ‘পোস্ট’ দেখে জামালপুলের বহু বাসিন্দা স্তম্ভিত হয়ে যান । ‘জুয়া খেলায়’ সকলকে
অংশগ্রহন করার আহ্বান জানো সংক্রান্ত বার্তার
বিষয়টি নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়ে যায় জামালপুরে । বহু মানুষ তাদের মুঠো ফোনে এই বার্তার বিষয়টি বন্দি করে রাখেন। আর এই পুজো যাঁরা বংশ পরম্পরার করে আসছেন সেই বংশের সন্তান পার্থ রায় এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘শীতলা মায়ের পুজোয় জুয়ার আসর বসানোর স্পর্ধা দেখানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। কেউ আসে পাশে লুকিয়ে কি করছে জানি না। তবে শীতলা মায়ের তলায় চারদিন জুয়ার আসর বসবে বলে যিনি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করেছেন তার কঠিন শাস্তি হোক,এটাই আমি চাই।’
’জুয়া খেলায়’ অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বার্তা ছড়ানোর উদ্দেশ্য কি তা এদিন বিকালে সুরজিতের কাছে কে জানতে চাওয়া হলে সে প্রথকে হকচকিয়ে যায়। পরে তিনি বলেন,’আমি জুয়া খেলি না । জুয়া খেলাও চালাই না । তবে যাঁরা জুয়া খেলা চালায় তাঁরা আমায় বললো আজ (বুধবার) থেকে শুরু করে চারদিন বেত্রাগড় শিতলা তলায় জুয়া খেলা চলবে। যারা জুয়া খেলা চালাবে তাদের অনুরোধেই আমি আমার ফেসবুক স্ট্যাটাসে জুয়া খেলার আসর বসার বিষয়টি সন্মন্ধে লিখে পোস্ট করেছি। এখন বুঝতে পারছি এটা করে আমি বড় অপরাধ করে ফেলেছি ।’
এদিকে এমন ফেসবুক পোস্টের কথা জেনে
স্তম্ভিত বর্ধমান সদর দক্ষিন মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অভিষেক মণ্ডল। তিনি বলেন,’আমি খোঁজ নিচ্ছি । তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।’
অন্যদিকে বর্ধমান আদালতের সিনিয়র আইনজীবী কমল দত্তও স্তম্ভিত হয়ে যান। তিনি বলেন,’বিনা সরকারী অনুমতিতে কেউ কোন প্রকার জুয়া খেলা চালাতে পারে না । যদি চালায় তবে সেটা আইনত অপরাধ বলেই বিবেচিত হবে । সমাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দায়ে জুয়া খেলায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো আরো বড় অপরাধ। ’আই টি’ অ্যাক্ট অনুযায়ীও এটা অপরাধ ।’ পুলিশ নিশ্চয়ই এবিষয়ে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে কমলবাবু মন্তব্য করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জুয়া খেলায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনের বিষয়ে জেনে তীর্যক কটাক্ষ করেছেন জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র। তিনি বলেন,’ভালো করে একটু খোঁজ নিলেই পরিস্কার হয়ে যাবে এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচারের পিছনে ’খেলা হবে’ শ্লোগানের অনুপ্রেরণাই কাজ করেছে ।’ যদিও বিজেপি নেতার এইসব বক্তব্যকে কোন পাত্তা না নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন,’সামাজিক মাধ্যমে জুয়া খেলায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওই ব্যক্তি চরম অন্যায় কাজ করেছে। আমি চাই পুলিশ ওই ব্যক্তির বিরূদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিক।’।